আমেরিকা

তৃতীয় স্টিমুলাস চ্যাক কবে পাচ্ছেন বাসিন্দারা!

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগেই করোনা বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের জন্য তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন জো বাইডেন। ঘোষিত ১ কোটি ৯০ হাজার কোটি ডলারের এই প্যাকেজে বেকারভাতা, গৃহহীন হওয়া মানুষদের জন্য সহায়তা ও খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকেই ভাবতে পারেন, ক্ষমতায় বসেই স্টিমুলাস চ্যাকের অর্থ নাগরিকদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন জো বাইডেন। তবে বাস্তবতা হলো, সোমবার (২৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত খুব অগ্রগতি হয়নি বিষয়টির। স্টিমুলাস চ্যাকের ১৪০০ ডলার পেতে বাসিন্দাদের আরো বেশ কিছু সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। প্রথমত, স্টিমুলাস চ্যাকের সাথে বেশ কিছু জটিল শর্ত জড়িয়ে আছে। কিছুদিন আগেই জো বাইডেন এক নির্বাহী আদেশে সই করে ফেডারেল কর্মীদের মজুরি ঘণ্টায় ন্যুনতম ১৫ ডলারে উন্নীত করেছেন। পাশাপাশি রয়েছে 'ফ্যামিলি লিভ' ও ট্যাক্স ক্রেডিট বর্ধিতকরণ। এই বিষয়গুলোর সমন্বয় করে চ্যাকের অর্থ পাঠাতে লেগে যাবে অনেক সময়। দ্বিতীয়ত, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের আপত্তি স্টিমুলাস চ্যাকের অর্থ পাশের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তবে দ্রুত এই অর্থ পাশ করতে দর কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। ১৬ সদস্যদের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত এক দলের সাথে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছেন বাইডেনের প্রতিনিধি দল। তবে দর কষাকষিতে ছাড় দিতে হবে বাইডেন প্রশাসনকেও। পরবর্তীতে বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে  বাঁধা পেতে পারেন বাইডেন। কবে দর কষাকষি শেষ হবে, সেটির উপর নির্ভর করবে স্টিমুলাস বিল পাশ। ফলে ধারণা করা যাচ্ছে, আগামী মাস ফেব্রুয়ারির আগে স্টিমুলাস চ্যাকের অর্থ ঢুকছে না বাসিন্দাদের পকেটে। তবে দেরি হতে পারে আরো, সেটির জোর সম্ভাবনাও রয়েছে৷ কী থাকছে বাইডেনের ঘোষিত প্যাকেজে? এই প্যাকেজে বেকারভাতা, করোনায় গৃহহীন হওয়া মানুষদের জন্য সহায়তা ও খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব রাখার পাশাপাশি অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আরো বেশি সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ‘আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান’ শীর্ষক এই তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজে অভিবাসীরাও এই আর্থিক সহায়তা পাবে। এর আগে শুধু প্রথম প্রণোদনাতে অভিবাসীদের সহায়তা দিয়েছিল মার্কিন ফেডারেল সরকার। বর্তমানে বেকারভাতা হিসেবে সপ্তাহে ৩০০ ডলার করে দেওয়া হয়। জো বাইডেনের প্রস্তাবে এর পরিমাণ বাড়িয়ে ৪০০ ডলার করার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের মাত্র ১১ সপ্তাহের সহায়তা দেওয়ার মতো তহবিল পাস করা হয়, যা আগামী মার্চেই শেষ হয়ে যাবে। ফলে একটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছিল কাজ হারানো মানুষদের। বাইডেনের প্রস্তাব নিঃসন্দেহে তাদের আশ্বস্ত করবে। এ ছাড়া ঘণ্টাপ্রতি মজুরি হার ১৫ ডলারে উন্নীত করতে কংগ্রেসকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। এছাড়া মহামারির সময়ে কাজ হারানো নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোকে বাড়িভাড়ায় সহায়তা দিতে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের তহবিল রাখার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় প্রণোদনায় ঘোষিত আড়াই হাজার কোটি ডলারের তহবিলের সঙ্গে এটি যোগ হবে। এর বাইরে বাড়ির বিপদগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ বাবদ ৫০০ কোটি ডলারের একটি তহবিল রাখা হয়েছে। এছাড়া গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য উদ্যোগ নিতে অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিতে আরো ৫০০ কোটি ডলার রাখার কথাও বলেছেন বাইডেন। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় উচ্ছেদের আশঙ্কায় থাকা পরিবারগুলোকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উচ্ছেদ না হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে এই নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সাথে টিকাদান কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। আট বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে কংগ্রেসে পাশ হয়েছে। জো বাইডেন যে প্যাকেজটি ঘোষণা করলেন, তাতে আগের দুই প্যাকেজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেওয়া সরকারি সহায়তার পরিসর ও পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আগের দুইবার ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষ থেকে সরকারি সহায়তা বাড়ানোর কথা বলা হলেও সে প্রস্তাব রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে আটকে যায়। কিন্তু এবার প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তৃতীয় প্যাকেজ সহজেই পাশ হতে পারে। এলএবাংলাটাইমস/ওএম