আমেরিকা

তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা: দরিদ্র মার্কিনীদের অর্থনীতির উন্নতি হবে ২০%

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষিত ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজে উন্নতি হতে যাচ্ছে আমেরিকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনীতি। অপরদিকে ধনীদের অর্থনীতিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের নতুন এক অ্যানালাইসিসে দেখা গেছে, সিনেটে পাশ হওয়া নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে আমেরিকার ২০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনীতি ট্যাক্স দিয়েও ২০ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত উন্নতি করবে। অপরদিকে ধনীদের অর্থনীতির উন্নতি হবে দশমিক ৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘দ্য আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান এক্ট অব ২০২১’ শীর্ষক তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজটিই সবচেয়ে বড় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজ। এই প্যাকেজের আওতায় ১৪০০ ডলার ডিরেক্ট স্টিমুলাস পেমেন্ট ও মাসিক চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট এর অর্থ পাবেন বাসিন্দারা। এসবের পাশাপাশি ইনকাম ট্যাক্স ক্রেডিট ও চাইল্ড এন্ড ডিপেন্ডেন্ট কেয়ার ট্যাক্সও অর্থনীতি বেগবান করতে ভূমিকা রাখবে।    ওয়াশিংটনের ডেমোক্রেটিক রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রামিলা জয়পাল বলেন, ‘তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজ একটি প্রগতিশীল ও সাহসী প্রণোদনা প্যাকেজ। এটি সরাসরি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকানদের পকেটে অর্থ সঞ্চালন করছে’। তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজের ৭০ শতাংশ অর্থ যাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের বাসিন্দাদের পকেটে, যাদের বাৎসরিক আয় ৯১ হাজার ডলার কিংবা তার কম। এই প্যাকেজের আওতায় ৩ হাজার ডলার ফেডারেল ট্যাক্স কমানো হয়েছে এবং আফটার ট্যাক্স ইনকাম ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।   এছাড়া যেসব পরিবারে শিশু রয়েছে তারা গড়ে ৬ হাজার ডলার ‘ট্যাক্স কাট’ পাবে। ট্যাক্স পলিসি সেন্টার সূত্র মতে, এর ৭৫ শনাংশ অর্থ যাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের বাসিন্দাদের পকেটে। যেসব বাসিন্দার একক বাৎসরিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের কম ও দ্বৈত ফাইলের ক্ষেত্রে যাদের আয় ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের কম, তারা ১৪০০ ডলার স্টিমুলাস চেক পাবেন। কী থাকছে তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজে? ১৪০০ ডলার স্টিমুলাস চেক: তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনার আওতায় বেশিরভাগ মার্কিনী অন্তত ১৪০০ ডলার করে ভাতা পাবেন। এর মধ্যে যেসব বাসিন্দা একক করদাতা, তাদের প্রত্যেকে পাবেন ১৪০০ ডলার। বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী যারা স্টিমুলাস চেকের জন্য দ্বৈত ফাইল করেছেন, তারা পাবেন ২৮০০ ডলার। এর সাথে যদি তাদের পরিবারে সন্তান বা পোষ্য থাকে, তবে সেসব পরিবার আরো ১৪০০ ডলার করে পাবেন। তবে স্টিমুলাস চেকের অর্থ বাৎসরিক আয়ের উপর নির্ভর করে দেওয়া হবে। একক করদাতাদের ক্ষেত্রে বাৎসরিক আয় ৭৫ হাজার ডলার ও বিবাহিতদের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যাদের একক আয় ১ লাখ ডলারের উপর ও দ্বৈত আয় ২ লাখ ডলারের উপর, তাদের ভাতার অর্থ প্রাপ্তির পরিমাণ কিছু কম হতে পারে। সন্তানসহ পরিবারের জন্য ট্যাক্স ব্রেক: যেসব পরিবারে ১৮ বছরের কম বয়েসী সন্তান রয়েছে, তাদের ট্যাক্স রিটার্নের সময় চাইল্ড ক্রেডিট ৩ হাজার ডলার করে দেওয়া হবে। তবে ৬ বছরের কম বয়েসী সন্তানদের জন্য তা ৩ হাজার ৬০০ ডলার হবে। একই সাথে চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিটকে সম্পূর্ণ ফেরতযোগ্য করার পাশাপাশি অর্ধেক চাইল্ড ক্রেডিট অগ্রীম পেয়ে যাবে শিশুদের পরিবার। আইআরএসের মাধ্যমে জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই ভাতা দেওয়া হবে৷ স্থানীয় ও অঙ্গরাজ্য সরকারের জন্য অনুদান: তৃতীয় প্রণোদনা প্যাকজের আওতায় স্থানীয় ও অঙ্গরাজ্য সরকারের জন্য ৩৫০ বিলিয়ন ডলার অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে শুরু থেকেই এই অনুদানের বিষয়ে দ্বিমত করে আসছিলো রিপাবলিকানরা। স্থানীয় সরকার ও মেয়রের সমর্থনে অবশেষে বিলটি পাশ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুদান: করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করার সক্ষমতা অর্জনে ও শিক্ষার্থীদের দ্রুত ক্লাসরুমে ফিরিয়ে নিতে ১৩০ বিলিয়ন ডলারের অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে কলেজ ও ইউনিভার্সিটির জন্য ৪০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব অর্থ মহামারি থেকে সুরক্ষা উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে ও শিক্ষার্থীদের খাদ্য এবং বাসস্থান সংকট নিরসনে খরচ করা হবে।   ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনুদান: করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বৃহৎ খাতের কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এয়ারলাইন্স ও কন্ট্রাক্টরদের জন্য ১৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একই সাথে রেস্টুরেন্ট ও বার ব্যবসায়ীদের জন্য ২৫ বিলিয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া পে চেক প্রোটেকশনের জন্য সাত বিলিয়ন ডলারের উপর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কর্মহীনতার মেয়াদবৃদ্ধি: করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও চাকরি হারানো বাসিন্দাদের জন্য কর্মহীনতার মেয়াদ আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বেকার ভাতা হিসেবে বাসিন্দাদের সপ্তাহে ৩০০ ডলার করে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যখাতে অনুদান: তৃতীয় নাগরিক প্রণোদনা প্যাকেজে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বড় অনুদান রাখা হয়েছে। এই অনুদানের অর্থ করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে ও ওবামা প্রশাসনের এফোর্ডেবল কেয়ার এক্ট এর জন্য খরচ করা হবে। এই বিলের আওতায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল, স্টেট এবং লোকাল করোনা টেস্টিং সাইটের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী করোনার টিকা বিতরণের জন্য আরো ১৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এলএবাংলাটাইমস/ওএম