আমেরিকা

বাল্টিমোর ক্যাথলিক চার্চে ৬ শতাধিক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বাল্টিমোর ক্যাথলিক চার্চে কয়েক দশক ধরে যৌন নিপীড়ন চলে আসছে। বাল্টিমোরের আর্চডায়োসিসের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই যৌন নিপীড়ন চালান বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মেরিল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান্থনি ব্রাউনের কার্যালয় গতকাল বুধবার ৪৫০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১৯৪০–এর দশক থেকে ছয় শতাধিক নারী ও শিশুকে নিপীড়নের জন্য ১৫৮ জন যাজককে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৯ সালে মেরিল্যান্ডের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান ফ্রশ এ বিষয়ে প্রথম তদন্ত শুরু করেন। প্রায় ৮০ বছরের পুরোনো এক লাখের বেশি পৃষ্ঠার নথি পর্যালোচনার পর গত নভেম্বর এই তদন্তকাজ শেষ হয়। গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান্থনি ব্রাউন স্থানীয় ক্যাথলিক আর্চডায়োসিসের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘তদন্তে অনেক না–জানা ইতিহাস উন্মোচিত হয়েছে। যাজক ও অন্য আর্চডায়োসিসকর্মীরা ক্রমাগত নিপীড়ন চালিয়ে চার্চে ব্যাপক ক্ষতি করেছেন। ক্যাথলিক চার্চে এসব ঘটনায় কর্মীকে বরখাস্ত করা বা সেই নিপীড়নকে ঢেকে রাখার একটি কৌশল। গির্জার একজন মিনিস্টারের কাছে অনেকেই নিপীড়নে শিকার হয়েছিলেন। রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত বছর তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার পর বাল্টিমোরের আর্চবিশপ উইলিয়াম লরি তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে একজন বিচারক তদন্ত প্রতিবেদনটির একটি সংশোধিত সংস্করণ সর্বজনীন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই প্রতিবেদনে দেশের প্রাচীনতম রোমান ক্যাথলিক ডায়োসিস বাল্টিমোর আর্চডায়োসিসের বিষয়ে ব্যাপক বিবরণ রয়েছে। এটি রাজ্যের বেশির ভাগ যাজকপল্লি, স্কুল ও ধর্মসভার তত্ত্বাবধান করত। অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু গির্জা প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে একাধিক নিপীড়নকারী ছিলেন। ১৯৬৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ক্যাটনসভিলের সেন্ট মার্ক পারিশে ১১ জন নিপীড়নকারী কাজ করতেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নিপীড়নকারীদের আচরণ ও ভুক্তভোগীদের সংখ্যা এবং শিশুদের ওপর নিপীড়ন চালানোর সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর।’ প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের ক্রমবর্ধমান তালিকাও যুক্ত করেছে। ২০০২ সালে বোস্টন গ্লোব সংবাদপত্রে প্রথম এ বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্থানীয় আর্চডায়োসিস কয়েক দশক ধরে যৌন নিপীড়ন করে বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিশপঅ্যাকাউন্টেবিলিট ডট অর্গের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছর মার্কিন ক্যাথলিক চার্চের যাজকদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের মামলা নিষ্পত্তি করতে প্রায় ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বোস্টন গ্লোবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়ে চার্চের অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপের উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি হয়েছে। তবে বাল্টিমোর আর্চডায়োসিসের নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই চেষ্টার মধ্যে অসংখ্য ফাঁক রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আর্চডায়োসিস নিপীড়নকারীদের একটি সর্বজনীন তালিকা তৈরি করেছে। অবশ্য ওই তালিকায় সব অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কিছু অভিযুক্ত নিপীড়নকারীদের দায়িত্ব থেকে অপসারণের পরিবর্তে আর্থিক সহায়তা দিয়ে অবসর নেওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তদন্তে আরও জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের কাছে যৌন নিপীড়নের অনেক অভিযোগ জানাতে আর্চডায়োসিস ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া তদন্ত পরিচালনা করা, মিনিস্ট্রি থেকে নিপীড়নকারীদের সরিয়ে দেওয়া বা শিশুদের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের সীমাবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস