আমেরিকা

টুইটারের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিন্ডা ইয়াকারিনো

টুইটারের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে এনবিসি ইউনিভার্সালের বিজ্ঞাপন বিভাগের সাবেক প্রধান লিন্ডা ইয়াকারিনোর নাম ঘোষণা করেছেন ইলন মাস্ক। গত শুক্রবার তিনি টুইটারের শীর্ষ পদে এই নারীর নাম ঘোষণা করেন। এমন এক সময় সিইও হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হলো, যখন বিজ্ঞাপনী আয়ে ধস ঠেকাতে বেগ পেতে হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। কমকাস্ট করপোরেশনের মালিকানাধীন এনবিসি ইউনিভার্সালের (এনবিসিইউ) বিজ্ঞাপন ব্যবসা আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন ইয়াকারিনো। টুইটারের নতুন এই সিইওর বিষয়ে পাওয়া কিছু তথ্য— এনবিসিইউর বিজ্ঞাপনপ্রধান ইয়াকারিনো এনবিসিইউয়ে প্রায় এক যুগের মতো যুক্ত ছিলেন। সেখানে সম্প্রতি তিনি গ্লোবাল অ্যাডভারটাইজিং অ্যান্ড পার্টনারশিপ বিভাগের চেয়ারপারসন হয়েছিলেন। কোম্পানিটিতে দায়িত্ব পালনকালে ইয়াকারিনো টেলিভিশন ও ডিজিটাল বিভাগে মিডিয়া নেটওয়ার্কটির বিজ্ঞাপনী কৌশল প্রণয়নে নেতৃত্ব দেন। পাশাপাশি ২০২০ সালে বিজ্ঞাপননির্ভর স্ট্রিমিং পরিষেবা ‘পিকক’ চালুর ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। টার্নার এন্টারটেইনমেন্টে ২০ বছর এনবিসিইউতে যোগ দেওয়ার আগে মার্কিন মিডিয়া জায়ান্ট টার্নার এন্টারটেইনমেন্টে প্রায় ২০ বছর ছিলেন ইয়াকারিনো। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপন, বিপণন ও অধিগ্রহণ বিভাগে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। টার্নার এন্টারটেইনমেন্ট পরিচালনা করে থাকে সিএনএন। এটি ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারির মালিকানাধীন। মাস্কের সাক্ষাৎকার গত এপ্রিল মাসে মায়ামিতে একটি বিজ্ঞাপন সম্মেলনে মাস্কের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ইয়াকারিনো। এ সময় মাস্কের কর্মনীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। ইয়াকারিনো বলেছিলেন, ‘এই কক্ষে উপস্থিত অনেকেই আমাকে চেনেন। আপনারা জানেন, আমি আমার কর্মনীতির জন্য গর্ব বোধ করি।’এরপর তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা, আমি আমার মতো তেমন এক ব্যক্তিত্বের (ইলন মাস্ক) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।’ ইয়াকারিনো টুইটারে নেতিবাচক আধেয় (কনটেন্ট) ঘিরে বিজ্ঞাপনদাতাদের উদ্বেগের বিষয়েও মাস্ককে চাপ দেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম

ইয়াকারিনো ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) টাস্কফোর্স অন ফিউচার অব ওয়ার্কের চেয়ারপারসন। তিনি ডব্লিউইএফের মিডিয়া, এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচার ইন্ডাস্ট্রি গভর্নরস স্টিয়ারিং কমিটিরও সদস্য। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পর্ষদে

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে স্পোর্টস ফিটনেস অ্যান্ড নিউট্রিশন-বিষয়ক প্রেসিডেন্ট পর্ষদে ইয়াকারিনোর নাম ঘোষণা করেছিলেন। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ সালে একটি প্রকাশনায় পরিচয় দিতে গিয়ে ইয়াকারিনো নিজেকে একজন ব্যস্ত, দুই সন্তানের মা হিসেবে উল্লেখ করেন। তখন তাঁর সন্তানদের বয়স ছিল যথাক্রমে ১৩ ও ৯ বছর। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমার শখ বলতে কিছু নেই।’ কেন ইয়াকারিনো গত শুক্রবার এক টুইটে মাস্ক বলেন, ‘লিন্ডা ইয়াকারিনোকে টুইটারের নতুন সিইও হিসেবে স্বাগত জানাতে পেরে আমি উচ্ছ্বসিত! লিন্ডা প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দেবেন, আমি পণ্যের নকশা ও নতুন প্রযুক্তির ওপর জোর দেব। প্ল্যাটফর্মটিকে সম্ভাব্য সবকিছুর অ্যাপে (এক্স) রূপান্তর করতে লিন্ডার সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি।’ আগের দিন নতুন সিইও নিয়োগের কথা জানালেও নাম ঘোষণা না করে কিছুটা রহস্য রেখে দেন মাস্ক। তিনি আরও বলেন, নতুন সিইও ছয় মাসের মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তখনই ইয়াকারিনোর টুইটারের নতুন সিইও হওয়া নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজনেস ইনসাইডারের চিফ মিডিয়া করেসপনডেন্ট ক্লেয়ার অ্যাটকিনসন দুই দশক ধরে ইয়াকারিনোর পেশাগত জীবনের ওপর নজর রেখেছেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞাপনে তাঁর অভিজ্ঞতা টুইটারকে সাহায্য করতে পারে। মাস্ক মালিকানা নেওয়ার পর থেকে টুইটারের বিজ্ঞাপন বিপণন ব্যাপকভাবে কমেছে। অ্যাটকিনসন বলেন, ‘টুইটার যদি আগের চেয়েও বেশি আয়ের ব্যবস্থা করতে চায়, তাহলে সেটা শুরু করার ভালো জায়গা হবে এটি। আর সেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার আদর্শ ব্যক্তিটি হতে পারেন লিন্ডা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কল্পনা করতে পারি, তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যাঁকে ইলন মাস্কের প্রয়োজন। তিনি চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না।’ ‘ভেলভেট হ্যামার’ এ ছাড়া বিজ্ঞাপন শিল্পে দর-কষাকষির ধরনে দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন ইয়াকারিনো। ২০১২ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, এ জন্য তিনি ‘ভেলভেট হ্যামার’ হিসেবেও অভিহিত পান। ‘ভেলভেট হ্যামার’ এমন এক নারী, যিনি সংগঠনের যেকোনো পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকালে বাচনভঙ্গি ও বাগ্মিতা দিয়ে সঠিকভাবে কাজটি করিয়ে নিতে পারেন এবং ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারেন। তিনি লক্ষ্য অর্জনে কঠোর হলেও কৌশলে সেটা আদায় করে নেন।

  এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস