সিলেট

সিলেটে পাথরের সঙ্গে শাহ আরেফিন টিলাও লুট হয়ে গেল

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ঐতিহাসিক শাহ আরেফিন টিলা এক বছরের অব্যাহত পাথর উত্তোলনের ফলে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীদের নিয়ে গঠিত ২৬ সদস্যের সংঘবদ্ধ চক্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় কোটি কোটি টাকার পাথর উত্তোলনের কারণে ১৩৬ একর এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে।   ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের এ স্থানে আগে হজরত শাহ আরেফিন (রহ.)-এর আস্তানা, মসজিদ ও কবরস্থান ছিল। তবে গত এক বছরে পাথরখেকোরা আস্তানাসহ পুরো টিলাকে ধ্বংস করেছে। স্থানীয়রা জানান, টিলার ভেতরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পুকুরসম গর্ত, কেটে ফেলা হয়েছে পাহাড়ি রাস্তা—এখন পুরো এলাকা এমন দেখাচ্ছে যেন বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে।   টিলার কিছু অংশ ধ্বংস করে পাথর উত্তোলনের পর কেবল হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানাসহ একাংশ অক্ষত ছিল। স্থানটিকে কেন্দ্র করে অবশিষ্ট ছিল কিছু গাছ ও বড় আকারের কয়েক হাজার সংরক্ষিত পাথর। এক বছরে শুধু শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানাই নয়, পুরো টিলা ও পাশের মসজিদ-কবরস্থানের জায়গাও ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন করেছে পাথরখেকোরা। সম্প্রতি পাথর নিয়ে হইচই শুরু হলে অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী। সে সুযোগে তিন দিন ধরে টিলা ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন থেকে সরে দাঁড়ায় পাথরখেকোরা। তাদের লক্ষ্য ছিল টিলা এলাকার অবশিষ্ট মসজিদ ও কবরস্থানে জায়গা ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন করা। কিন্তু প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে তারা সরে দাঁড়ায়– এমন তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা।  স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, পাথর উত্তোলনে জড়িতরা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও যুবদলের নেতাকর্মীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তি। প্রতিদিন ২০–৪০টি ট্রাক পাথর টিলা থেকে বিক্রি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন মনির মিয়া, ফয়জুর রহমান, সেবুল আহমেদ, আজির উদ্দিন, ইসমাইল আলী, ইব্রাহিম মিয়া, ইয়াকুব আলী, বাবুল আহমদ প্রমুখ।   কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, পাথর উত্তোলন রোধে পুলিশ চারবার হামলার শিকার হয়েছে। বর্তমানে উত্তোলন স্থগিত আছে। তবে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবারও পাথর উত্তোলন শুরু হতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, এক বছরে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু টিলাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ২০০৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে ১৩৭ দশমিক ৫০ একরের টিলাকে ‘মরা কঙ্কাল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এখন মসজিদ ও কবরস্থানের সামান্য অংশ ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। শাহ আরেফিন টিলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। কয়েকশ বছর আগে দরবেশ হজরত শাহ আরেফিন (রহ.) এখানে আস্তানা গড়ে তোলেন। এরপর থেকে এখানকার স্থাপনা ও ওরস আয়োজন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তদের আকর্ষণ করত। তবে অব্যাহত পাথর উত্তোলনের কারণে তা এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস