যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে এইচআইভিসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যবহুল ওয়েব পেজগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। লিঙ্গপরিচয় ও বৈচিত্র্য সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এক আদেশের সঙ্গে সংগতি রেখে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মীরা উদ্বেগ জানিয়েছেন।
সিডিসির যেসব ওয়েব পেজ সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, তার মধ্যে আছে এইচআইভিতে আক্রান্ত ট্রান্সজেন্ডারদের পরিসংখ্যান এবং সমকামী, উভকামী ও ট্রান্সজেন্ডার তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ভিন্নতা সম্পর্কিত তথ্য। তরুণদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে, এমন আচরণ শনাক্তকারী একটি ডেটাবেজ অফলাইন হয়ে গেছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গকে স্বীকৃতি দিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেন। বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচিগুলো বাতিল করারও আদেশ দেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোকে গত ২৯ জানুয়ারি একটি চিঠি পাঠানো হয়। ট্রাম্পের আদেশগুলো কীভাবে মেনে চলতে হবে, সে সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয় চিঠিতে। সেখানে বলা হয়, ৩১ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটার আগেই এসব আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
জন্মগতভাবে পাওয়া লৈঙ্গিক পরিচয় বদলে নিজে নিজে লৈঙ্গিক পরিচয় নির্ধারণ করার প্রবণতাকে স্বীকৃতিদানকারী কর্মসূচিগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে। অনলাইনে লৈঙ্গিক পরিচয়বিষয়ক তথ্যগুলো অপসারণেও পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
সিডিসির কাজগুলো তত্ত্বাবধান করে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ। এর মুখপাত্র বলেন, ওয়েবসাইটে যেকোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে এসব নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
ইন্টারনেট আর্কাইভের তথ্য বলছে, মানুষ কীভাবে এইচআইভি পরীক্ষা করাতে পারবে, সে–সংক্রান্ত তথ্যসমৃদ্ধ একটি পেজ হাওয়া হয়ে গেছে। এইচআইভি পরীক্ষা ও রোগীদের চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য দিয়ে চিকিৎসকদের জন্য পেজটি তৈরি করা হয়েছিল।
এইডস ফাউন্ডেশন অব শিকাগোর নীতিমালা ও প্রচারবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক টিমোথি জ্যাকসন বলেছেন, তাঁরা শুক্রবার সিডিসির ওয়েবসাইট এইচআইভি–বিষয়ক তথ্যগুলো খুঁজে পাননি। মানুষকে এইচআইভি বিষয়ে সচেতন করতে আগে ওই তথ্যগুলো ছিল।
সিডিসির ওয়েবসাইট থেকে ইয়ুথ রিস্ক বিহেভিয়র সার্ভেল্যান্স সিস্টেমও উধাও হয়ে গেছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার, কিশোর বয়সে গর্ভাবস্থা, অনিরাপদ যৌনাচার এবং কিশোর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রবণতা শনাক্ত করা হয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) ক্ষেত্রে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মী বিভিন্ন সংস্থার নেতাদের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনা না মানার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এনআইএইচের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ম্যাথিউ মেমোলি এবং অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো ই–মেইলে এ আহ্বান জানানো হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স কর্তৃপক্ষ ই–মেইলটি দেখেছে।
এনআইএইচের নির্বাহী কার্যালয়ের পরিচালক নেইট ব্রট বলেছেন, বছরের পর বছর ধরে যৌনতা ও লৈঙ্গিক পরিচয় সম্পর্কে এনআইএইচ পরিচালিত গবেষণা ও ফলাফলের সঙ্গে ট্রাম্পের আদেশগুলো সাংঘর্ষিক।
এলএবাংলাটাইমস/এজেড