প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন শিক্ষা বিভাগকে সংকুচিত করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করতে চলেছেন। হোয়াইট হাউসের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এবিসি নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, এই আদেশের মাধ্যমে শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমোহনকে আইনানুগ সকল পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে, যা শিক্ষা বিভাগ ভেঙে দেওয়ার পথ সুগম করবে।
বিভাগটি বন্ধের পরিকল্পনা বেশ কয়েক মাস ধরে চলছিল এবং এটি ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি—রাজ্য সরকারগুলোর হাতে শিক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া—বাস্তবায়নের অংশ। গত সপ্তাহেই শিক্ষা বিভাগ প্রায় অর্ধেক কর্মী ছাঁটাই করেছে এবং সংস্থা ছোট করে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কর্মীসংখ্যা কমাতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, ইচ্ছাকৃত পদত্যাগ এবং অবসর কেনার সুযোগ। ট্রাম্প এই পরিবর্তন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আরও কর্মী ছাঁটাই করে বিভাগটিকে একেবারে ‘নিঃশেষ’ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, "আমি মনে করি, পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। কয়েকজন মাত্র থাকবে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে রাজ্যগুলো ইংরেজি, পড়াশোনা, লেখা এবং অঙ্ক শেখাচ্ছে।"
তবে মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কোনও সরকারি সংস্থা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। ম্যাকমোহন স্বীকার করেছেন যে শিক্ষা বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে কংগ্রেসের সমর্থন লাগবে। সিনেটে ৬০টি "হ্যাঁ" ভোট পেলে ফিলিবাস্টার পার হয়ে সংস্থাটি বিলুপ্ত করা সম্ভব হবে।
অনেক সমালোচক মনে করেন, শিক্ষা বিভাগ বন্ধ হলে দরিদ্র ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অনুদান ও সহায়তা প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, Individuals with Disabilities Education Act (IDEA) এবং Title 1-এর মতো প্রোগ্রাম বন্ধ হলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হবে। তবে ম্যাকমোহন আশ্বস্ত করেছেন যে সংস্থাটি এসব আইনি প্রোগ্রাম চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, "ভালো কর্মীরা, যারা আইনি বাধ্যবাধকতাগুলো বাস্তবায়ন করেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।"
শিক্ষা বিভাগের সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন যে, সংস্থাটি ব্যাপক ব্যয় করলেও কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাগত উন্নয়ন আনতে ব্যর্থ হয়েছে। ম্যাকমোহন শপথ নেওয়ার পর বলেছেন, শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্ত করার মূল উদ্দেশ্য হলো অভিভাবকদের হাতে শিক্ষার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে আমেরিকার শিক্ষার্থীরা ব্যর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আটকে না থাকে।
নতুন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শিক্ষা বিভাগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হবে কি না, তা নির্ভর করছে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে ট্রাম্পের পদক্ষেপে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলেছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম