আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা

মাসের পর মাস কাটছাঁটের পর, অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর (State Department) আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যা বহুল সমালোচিত এই বিদেশি সহায়তা সংস্থার জন্য চূড়ান্ত আঘাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপিল আদালত একটি নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে দেয়, যেখানে ইলন মাস্ক এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারী দক্ষতা দপ্তর (Department of Government Efficiency - DOGE) কর্তৃক USAID বিলুপ্তির প্রচেষ্টাকে অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। শুক্রবার USAID কর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো এক স্মারকে সংস্থার নতুন উপপরিচালক জেরেমি লেউইন জানান, পররাষ্ট্র দপ্তর USAID-এর অনেক কার্যক্রম ও চলমান প্রকল্পের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে। স্মারকে বলা হয়, সংস্থাটির স্বতন্ত্র কার্যক্রম অবসান ঘটানো হবে এবং কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে, যেন জীবন রক্ষাকারী ও কৌশলগত সহায়তা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। পররাষ্ট্র দপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পরিবর্তনের ফলে বিদেশি সহায়তা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দক্ষতা, জবাবদিহিতা, সমন্বয় ও কৌশলগত প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বৈদেশিক নীতিতে একটি অভিন্ন কণ্ঠে কথা বলবে, যা USAID-এর স্বতন্ত্র পরিচালনার প্রয়োজনীয়তাকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে। এছাড়া, স্মারকে বলা হয়, USAID-এর সমস্ত অস্থায়ী পদ বাতিল করা হবে। দুই সপ্তাহ আগে একটি আদালত রায় দিয়েছিল যে USAID বিলুপ্তির একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ সাংবিধানিকভাবে অবৈধ হতে পারে। তবে শুক্রবার চতুর্থ সার্কিটের যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালতের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ সেই রায় স্থগিত করে এবং জানায়, DOGE-এর এই প্রচেষ্টা সাংবিধানিক লঙ্ঘন নয়। “USAID বিলুপ্তির প্রচেষ্টা প্রচলিত নিয়মের বাইরে হলেও, অপ্রচলিত হলেই তা অবৈধ হয়ে যায় না,” লিখেছেন আপিল আদালতের বিচারক এ. মারভিন কোয়াটেলবাউম জুনিয়র। ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে USAID বিলুপ্তির প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল, যার অংশ হিসেবে হাজার হাজার কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে, ৮০%-এর বেশি প্রকল্পের তহবিল বাতিল করা হয়েছে এবং সংস্থাটির ওয়াশিংটন ডিসি সদর দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ফেডারেল সংস্থা বন্ধ করার জন্য সাধারণত কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তাই এই সিদ্ধান্ত আইনি জটিলতার মুখে পড়তে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন যে প্রশাসন USAID-এর কার্যক্রম বন্ধ করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এখন থেকে পররাষ্ট্র দপ্তরই বিদেশি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে এই ভুল এবং আর্থিকভাবে অযৌক্তিক যুগের সমাপ্তি ঘটছে,” রুবিও তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেন। “আমরা আমাদের বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রমকে যুক্তরাষ্ট্রের এবং আমাদের নাগরিকদের সর্বোত্তম স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে পুনর্গঠিত করছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি এবং কৌশলগত বিনিয়োগ করছি, যা আমাদের মিত্রদের পাশাপাশি আমাদের দেশকেও শক্তিশালী করবে।” তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকদের মতে, USAID বিলুপ্তির এই প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ক্ষুণ্ন করবে এবং বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদার ওপর নির্ভরশীল ছিল। পররাষ্ট্র দপ্তর আরও জানিয়েছে, USAID-এর কিছু কার্যক্রম পুনর্গঠন করে তা পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে আনার পরিকল্পনা কংগ্রেসকে জানানো হয়েছে এবং এটি আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। তবে USAID বিলুপ্তির এই সিদ্ধান্ত একাধিক আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।  এলএবাংলাটাইমস/ওএম