যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ী সুরক্ষা সুবিধা (Temporary Protected Status - TPS) পাওয়া হাজার হাজার আফগান ও ক্যামেরুনীয় নাগরিক তাদের এই সুবিধা হারাতে যাচ্ছেন। সম্প্রতি দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, আফগানিস্তান ও ক্যামেরুনের পরিস্থিতি আর যুক্তরাষ্ট্রের TPS দেওয়ার মতো নয় বলে বিবেচনা করা হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সহকারী সচিব ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন এক বিবৃতিতে জানান, বর্তমান সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এই সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে মে মাসে আনুমানিক ১৪,৬০০ আফগান এবং জুন মাসে ৭,৯০০ ক্যামেরুনীয় নাগরিক এই সুবিধা হারাবেন।
একইদিন, যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত ট্রাম্প প্রশাসনকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতককে বিতাড়নের অনুমতি দেয়, যিনি গত মাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে আটক হয়েছিলেন।
TPS মূলত এমন দেশগুলোর নাগরিকদের দেওয়া হয়, যেখানে সশস্ত্র সংঘাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফিরে যাওয়া নিরাপদ নয়। এই স্ট্যাটাস ১৮ মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং নবায়নযোগ্য। এটি কাজের অনুমতি ও নির্বাসন থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, তৎকালীন সেক্রেটারি আলেহান্দ্রো মায়োরকাস TPS মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ২০ মে পর্যন্ত করেছিলেন। তবে চলতি বছরের ২১ মার্চ, অন্যান্য মার্কিন সরকারি সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে নোয়েম সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে আফগানিস্তান আর TPS প্রাপ্তির যোগ্য নয়।
একইভাবে, ৭ এপ্রিল ক্যামেরুনের জন্যও TPS বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলার অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি অভিবাসীর TPS বাতিলের ঘোষণা দেয়। এদেরকে বাইডেন সরকারের সময়ে চালু হওয়া CHNV নামক স্পনসরশিপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়েছিল। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেন।
এখন যারা TPS হারাচ্ছেন, তাদের আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে দেশ ছাড়ার জন্য সরকার থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু TPS পাওয়া অভিবাসীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এই পরিবর্তন।
শুকরিয়া (ছদ্মনাম), একজন আফগান নাগরিক, যিনি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, এখন ভয়াবহ উদ্বেগের মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, “ভয়ের কারণে ঘুমাতে পারি না, পা ব্যথা করে, সারাক্ষণ কাঁদি। আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।”
তিনি বর্তমানে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ১০ এপ্রিল হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ থেকে পাওয়া এক ইমেইলে তাকে জানানো হয়, “আপনার যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময়সীমা শেষ হতে চলেছে। সাত দিনের মধ্যে দেশত্যাগ না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তার ছোট সন্তানরা বয়সের কারণে সুবিধার আওতায় থাকলেও, শুকরিয়া এবং তার স্বামীর জন্য ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তিনি বলেন, “আমার প্যারোল ছিল মানবিক কর্মসূচির অধীনে। এখনো আমার অ্যাসাইলাম কেস বিচারাধীন। আমি জানি না কী করবো।”
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল অভিবাসন এবং ব্যাপক নির্বাসন নীতি।
এ বছরের শুরুতে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মাসে ৩৭,৬৬০ জন অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা বাইডেন প্রশাসনের শেষ বছরে গড় মাসিক ৫৭,০০০ নির্বাসনের তুলনায় কিছুটা কম।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ বন্ধ করতে শত শত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসাও বাতিল করা হয়েছে।
এর মধ্যে একজন স্থায়ী বাসিন্দা মাহমুদ খলিল, যিনি ৮ মার্চ থেকে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক আছেন, তাকেও ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। খলিল জানান, ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নোয়েম সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ একটি বিশেষাধিকার। যারা সহিংসতাকে উৎসাহ দেয়, সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে এবং ইহুদিদের হয়রানি করে, তাদের জন্য এই সুযোগ থাকা উচিত নয়। ভালোই হয়েছে, বিদায়।”
তবে খলিলের আইনজীবী বলেন, “আমরা আমাদের ক্লায়েন্টের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়াই করব।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম