আমেরিকা

ট্রাম্প "চমৎকার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে" আছেন: হোয়াইট হাউস চিকিৎসক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প “চমৎকার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে” রয়েছেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক। দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ট্রাম্পের শরীরে “ডান কানে গুলির চিহ্ন” পাওয়া গেছে, যা গত জুলাইয়ে তার ওপর হওয়া এক হত্যাচেষ্টার পর দেখা যায়। তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন, এটি গুরুতর কিছু নয়। হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের চিকিৎসক ক্যাপ্টেন শন বারবাবেলা বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, স্নায়ু এবং সাধারণ শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত ভাল এবং তিনি সম্পূর্ণরূপে তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম।” ৭৮ বছর বয়সে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে তার পূর্বসূরি জো বাইডেন দায়িত্ব ছাড়ার সময় ৮২ বছর বয়সী ছিলেন। মেরিল্যান্ডের ওয়াল্টার রিড হাসপাতালে শুক্রবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চালানো স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ট্রাম্পের রক্ত পরীক্ষা, হার্টের অবস্থা বিশ্লেষণ, আল্ট্রাসাউন্ডসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। বারবাবেলা জানান, ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্য, স্নায়ু, মোটর ও সেন্সরি ফাংশন এবং রিফ্লেক্স পরীক্ষা করা হয় এবং কোনো ধরনের উদ্বেগ বা হতাশার লক্ষণ পাওয়া যায়নি। প্রেসিডেন্টকে মন্ট্রিয়াল কগনিটিভ অ্যাসেসমেন্ট (MoCA) টেস্ট দেওয়া হয়, যেখানে তিনি পূর্ণ ৩০-এ ৩০ স্কোর করেন। এই টেস্ট সাধারণত স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। শনিবার ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ বিমানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আমি সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছি। আমার মনে হয়, আমি খুব ভাল আছি—একটা ভাল হৃদয়, ভাল আত্মা, খুব ভাল আত্মা।” তিনি জানান, চিকিৎসকেরা তাকে “স্বাস্থ্যোন্নয়ন সংক্রান্ত কিছু ছোট পরামর্শ” দিয়েছেন, তবে বিস্তারিত বলেননি। চিকিৎসক বারবাবেলা আরও জানান, ট্রাম্পের শরীরে সূর্যের হালকা ক্ষতি ও কিছু নিরীহ ত্বকের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বর্তমানে রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য Rosuvastatin ও Ezetimibe সেবন করেন এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে অ্যাসপিরিন ও ত্বকের চিকিৎসায় Mometasone ব্যবহার করেন। হৃদযন্ত্রের পরীক্ষায় কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি। তবে তার আগে থেকেই থাকা হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া (উচ্চ কোলেস্টেরল) “ভালভাবে নিয়ন্ত্রিত” রয়েছে বলে জানা গেছে। আগের স্বাস্থ্য ইতিহাসে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ, রোসেসিয়া (মুখে লালচে দাগ) ও নিরীহ কোলন পলিপের কথাও উল্লেখ করা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের ওজন ২২৪ পাউন্ড (প্রায় ১০১ কেজি) এবং উচ্চতা ৬ ফুট ২.৫ ইঞ্চি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার ওজন ছিল ২৪৩ পাউন্ড, অর্থাৎ কিছুটা ওজন কমেছে। বর্তমান ওজন অনুযায়ী, তিনি ‘ওভারওয়েট’ ক্যাটাগরিতে পড়েন, তবে ‘অবিস’ নন। চিকিৎসক জানান, ট্রাম্পের “গাঁট ও পেশির চলন স্বাভাবিক” এবং তার সক্রিয় জীবনযাপন ও “গলফ খেলায় নিয়মিত জয়ের” কারণে তার এই সুস্থতা ধরে রেখেছেন। এটি ট্রাম্পের প্রথম স্বাস্থ্য প্রতিবেদন যা গত বছরের জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়ার বাটলারে নির্বাচনী সমাবেশে হত্যাচেষ্টার পর প্রকাশিত হলো। সে সময় তার ডান কান গুলিতে ছোঁয়া লাগে। তখন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিকিৎসক রনি জ্যাকসন বলেছিলেন, ট্রাম্পের আঘাত ছিল “তুচ্ছ”। প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক বলেছিলেন, প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্যে কোনো গুরুতর সমস্যা নেই, তবে ওজন কমানো ও ব্যায়াম প্রয়োজন। প্রচারণার সময় ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছিলেন। গত বছরের একটি বিতর্কে বাজে পারফরম্যান্সের পর বাইডেন তার কগনিটিভ টেস্ট নেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেননি এবং বলেন, তিনি অফিসে থাকা অবস্থায় এমন কোনো পরীক্ষা করেননি।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম