মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের লিবিয়ায় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনাকে সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন বস্টনের একটি আদালতের বিচারক। তিনি বলেছেন, এই পদক্ষেপ তার আগের এক আদেশকে “স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন” করবে, যা অভিবাসীদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।
এই আদেশটি আসে এমন এক সময়ে যখন দুইজন মার্কিন কর্মকর্তা বিবিসির অংশীদার সিবিএস নিউজকে জানান, অভিবাসীদের লিবিয়ায় পাঠানোর কার্যক্রম খুব শিগগিরই শুরু হতে পারে।
লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ দবেইবা এক বিবৃতিতে বলেন, “কোনো অজুহাতেই লিবিয়া অভিবাসীদের বহিষ্কারের গন্তব্য হতে পারে না।”
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এখনও এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
গোপনীয়তা চেয়ে কথা বলা দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, সামরিক বিমানের মাধ্যমে উত্তর আফ্রিকার এই দেশে অভিবাসীদের পাঠানো হতে পারে।
এই পদক্ষেপ ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে, কারণ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধে জর্জরিত। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর লিবিয়ায় ভ্রমণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বুধবার, অভিবাসন আইনজীবীরা ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা ঠেকাতে ম্যাসাচুসেটসের এক বিচারকের কাছে জরুরি আদেশ চেয়ে আবেদন করেন।
তাঁরা বলেন, “বহিষ্কারের জন্য প্রস্তুত অভিবাসীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্লাইট ছাড়ার প্রস্তুতি চলছে – এমন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র পাওয়া গেছে।”
জবাবে মার্কিন জেলা বিচারক ব্রায়ান মারফি দ্রুত একটি আদেশ জারি করেন, যা প্রশাসনকে অবিলম্বে অভিবাসীদের লিবিয়ায় পাঠানো থেকে বিরত রাখে।
বিচারক মারফি তার আদেশে বলেন, এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত তার পূর্বের আদেশকে “স্পষ্টভাবে অমান্য” করে, যা অভিবাসীদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া এবং তাদের ভাষায় লিখিত নোটিশ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে।
এই প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি জানি না। আপনাকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কাছে জানতে হবে।”
জানা গেছে, লিবিয়া ছাড়াও রুয়ান্ডা, বেনিন, অ্যাঙ্গোলা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইসওয়াতিনি এবং মলডোভার মতো দেশগুলোকেও অভিবাসী গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রুয়ান্ডা সরকার স্বীকার করেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
২০১১ সালে মোয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে লিবিয়া দুটি অংশে বিভক্ত—পশ্চিম অংশটি জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং পূর্ব অংশটি জেনারেল খালিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রণে।
গত সোমবার হাফতারের ছেলে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তবে উভয় পক্ষই জানিয়েছে যে, এই বৈঠক বহিষ্কারের বিষয়ে ছিল না।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প ব্যাপক অভিবাসী বহিষ্কারের অভিযান শুরু করেন এবং এতে মাঝে মাঝে শতাব্দী পুরোনো যুদ্ধকালীন আইন ব্যবহার করার মতো বিতর্কিত কৌশলও গ্রহণ করেন।
এছাড়াও, চলতি সপ্তাহে মার্কিন সরকার দেশটিতে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার বিনিময়ে ১,০০০ ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম