আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ অপরাধীকে এসওয়াতিনিতে বহিষ্কার, দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্র পাঁচজন ‘অপরাধী অবৈধ অভিবাসী’কে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজতান্ত্রিক দেশ এসওয়াতিনিতে বহিষ্কার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সহকারী সচিব ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন জানান, বহিষ্কৃতরা ভিয়েতনাম, জ্যামাইকা, লাওস, কিউবা এবং ইয়েমেনের নাগরিক এবং এদের বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণ থেকে শুরু করে হত্যার মতো ভয়ংকর অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)–এ পোস্টে লিখেন, “এই ফ্লাইটে এমন কিছু অপরাধী ছিল, যাদের অপরাধ এতটাই নৃশংস যে, নিজ নিজ দেশ তাদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।” এসওয়াতিনির সরকার জানিয়েছে, জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দেওয়ায় পাঁচজন বন্দিকে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় কারাগারে রাখা হয়েছে। দেশটির সরকারি মুখপাত্র থাবিলে মাদলুলি বলেন, “এই বন্দিরা আমাদের কারা ব্যবস্থায় নির্জন ইউনিটে রাখা হয়েছে, যেখানে একই ধরনের অপরাধীদের রাখা হয়। আমরা জাতিকে আশ্বস্ত করছি, তারা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়।” তিনি আরও জানান, এসওয়াতিনি ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (IOM) সহায়তায় এই অপরাধীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে। উল্লেখ্য, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের তৃতীয় কোনো দেশে অভিবাসী পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে এই ধরণের বহিষ্কারের পথ খুলে যায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে দক্ষিণ সুদান, এল সালভাদর এবং কোস্টারিকায় বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের পাঠিয়েছে। এদিকে, এসওয়াতিনির মধ্যে এই পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির প্রভাবশালী গণতান্ত্রিক সংগঠন Swazi Solidarity Network একে “নিন্দনীয় চুক্তি” বলে অভিহিত করেছে। সংগঠনের মুখপাত্র লাকি লুখেলে বলেন, “এসওয়াতিনিকে অপরাধীদের আবর্জনার ভাগাড় বানানো চলবে না। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দরকার।” এসওয়াতিনির কারাগারগুলোর সক্ষমতা নিয়েও জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জনসাধারণ জানতে চাইছে, দেশটির কারা ব্যবস্থায় কি এই ধরনের বিপজ্জনক অপরাধীদের নিরাপদে আটকে রাখার সামর্থ্য রয়েছে? বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র এসওয়াতিনিকে চাপ প্রয়োগ করেছে দেশের প্রধান রপ্তানি চিনি বাজারের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে। যুক্তরাষ্ট্র এসওয়াতিনির চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। একই সময়ে, নাইজেরিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলান বা অন্য দেশের অপরাধীদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তার প্রশাসন ছাত্র ভিসা, আশ্রয়প্রার্থী ও অস্থায়ী কর্মসংস্থান ভিসাধারীদের লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান ছাড়া বাকি সব শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ইস্যু এখন কেবল অবৈধ অভিবাসীদের নয়, বৈধ ভিসাধারীদের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। এ ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন তুলেছে—তৃতীয় কোনো দেশ কি কেবল রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য অপরাধীদের ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হতে পারে? এলএবাংলাটাইমস/ওএম