যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে সরকারি তহবিল বন্ধ নিয়ে তীব্র আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। সোমবার বোস্টনের এক আদালতে এই মামলার শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা মুখোমুখি হন।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হার্ভার্ডের শিক্ষা কার্যক্রমে বরাদ্দকৃত ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সরকারি অনুদান বন্ধ করার সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সরকার বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি বিরোধী মনোভাব বা অ্যান্টিসেমিটিজম মোকাবিলায় এটি জরুরি পদক্ষেপ।
তবে বিচারপতি অ্যালিসন বোরোউস, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা দ্বারা নিয়োজিত, সরকারের এই যুক্তির প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “চিকিৎসা গবেষণার জন্য বরাদ্দ অর্থ বন্ধ করে কীভাবে অ্যান্টিসেমিটিজম রোধ করা সম্ভব? এই দাবি এক কথায় বিস্ময়কর।”
হার্ভার্ডের আইনজীবী স্টিভেন লেহটস্কি বলেন, “প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “এই গবেষণার কাটা পড়ায় রোগী, সাধারণ জনগণ এবং চিকিৎসা ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে মারাত্মক ক্ষতি হবে।”
তবে সরকারের আইনজীবী মাইকেল ভেলচিক বলেন, হার্ভার্ড ট্রাম্পের সই করা একটি নির্বাহী আদেশ লঙ্ঘন করেছে, যা অ্যান্টিসেমিটিজম প্রতিরোধে জারি হয়েছিল। তিনি বলেন, “হার্ভার্ড কেবল বিলিয়ন ডলার চায়, এই কারণেই তারা আদালতে এসেছে।”
ভেলচিক বলেন, “হার্ভার্ড ক্যান্সার গবেষণার চেয়ে ক্যাম্পাসের প্রতিবাদকারীদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।”
বিচারপতি বোরোউস জিজ্ঞেস করেন, প্রশাসন কীভাবে নিশ্চিত হয়েছে যে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি? তিনি বলেন, “সরকার কোনো নথি, প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি দেখাতে পারেনি যা তাদের দাবি প্রমাণ করে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি গবেষক অ্যান্টিসেমিটিক কি না তা প্রমাণ না করে পুরো হার্ভার্ডকে দোষী বলা সাংবিধানিকভাবে বিপজ্জনক উদাহরণ তৈরি করবে।”
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে বিচারপতি এখনো কোনো রায় দেননি, তবে শিগগির সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান।
হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রায় চাওয়া হয়েছে, কারণ এ সময়ের মধ্যেই প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী তহবিলের আর্থিক দায় সেরে ফেলতে হবে।
এ মামলার রায় উচ্চ আদালতে আপিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছাতে পারে।
শুনানির সময় আদালতের বাইরে বেশ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী “অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষা করো” এবং “হার্ভার্ডকে ছাড়ো” লেখা পোস্টার নিয়ে জড়ো হন।
এদিকে ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ বিচারপতিকে “সম্পূর্ণ ব্যর্থ” আখ্যা দিয়ে বলেন, “তিনি সরকারের বিপক্ষে রায় দেবেন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে আপিল করব এবং জিতব।”
ট্রাম্প অতীতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, হার্ভার্ডের সঙ্গে এই বিরোধ আসলে একটি ‘দামাদামি কৌশল’ হতে পারে। তিনি বলেন, “আমার ধারণা, আমরা শেষ পর্যন্ত হার্ভার্ডের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাবো।”
হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী যে হার্ভার্ড এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্টের ভিশন সমর্থন করবে এবং পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি ভালো সমঝোতা সম্ভব।”
এর আগে, মার্কিন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তথ্য জানতে সাবপোনা পাঠায় এবং ট্রাম্প হার্ভার্ডের করমুক্ত মর্যাদা বাতিলের হুমকিও দেন।
অন্যদিকে, মার্চ মাসে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে কিছু শর্ত মেনে নেয়—যেমন বিক্ষোভে মুখ ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ এবং ভর্তি নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা। তবে এরপরেও শিক্ষা দপ্তর কলম্বিয়াকে তহবিল এবং স্বীকৃতি হারানোর হুমকি দেয়।
এই চলমান সংঘাত এখন মার্কিন উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার স্বাধিকার, সরকারের হস্তক্ষেপ এবং মুক্তচিন্তার পরিসরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম