নিউইয়র্ক

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৯ সালে নিখোঁজ হওয়া এতান প্যাটজ হত্যা মামলায় নতুন বিচার নির্দেশ

নিউইয়র্ক সিটির ছয় বছর বয়সী শিশু এতান প্যাটজের ১৯৭৯ সালের হত্যা ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দণ্ডিত এক ব্যক্তিকে পুনরায় বিচার করার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত। আদালতের এই আদেশ অনুযায়ী, অভিযুক্ত পেদ্রো হার্নান্দেজ নতুন বিচার পাবেন অথবা তাকে মুক্তি দিতে হবে। এতান প্যাটজের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি গোটা যুক্তরাষ্ট্রকে নাড়া দিয়েছিল। ম্যানহাটনের সোহো এলাকার স্কুল বাস স্টপে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এই শিশুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে নিখোঁজ শিশুদের নিয়ে সবচেয়ে বহুল আলোচিত মামলাগুলোর একটি হয়ে ওঠে। পেদ্রো হার্নান্দেজ, যিনি এক সময় একটি কনভিনিয়েন্স স্টোরে কাজ করতেন, ২০১৭ সালে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। তবে তার বিরুদ্ধে প্রথম বিচার ২০১৫ সালে ‘হাং জুরি’ বা অসম্পূর্ণ রায়ে শেষ হয়েছিল। তিনি পুলিশকে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন যে তিনি শিশুটিকে একটি বেসমেন্টে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন। হার্নান্দেজ তার আপিলে বলেন, বিচারক জুরিদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের পূর্বনির্ধারিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এর মাধ্যমে তার রায়ের ওপর প্রভাব পড়েছে। দ্বিতীয় সার্কিট কোর্ট অফ আপিল তাদের রায়ে বলেছে, “আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি যে, বিচারিক আদালত স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এই ভুলটি তুচ্ছ নয়।” ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই রায় পর্যালোচনা করছে। ছেলেটির খোঁজে পুলিশ ও এফবিআই দীর্ঘ সময় তদন্ত চালিয়েছিল, কিন্তু এতান প্যাটজকে আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার ছবি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মিল্ক কার্টন ও পোস্টারে ছাপা হতো, যা নিখোঁজ শিশুদের নিয়ে জাতীয় সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ২০১২ সালে, পুলিশ হার্নান্দেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি জানান, তিনি শিশুটিকে একটি পানীয় বা সোডার প্রলোভন দেখিয়ে বেসমেন্টে নামিয়ে গিয়ে গলাটিপে হত্যা করেন। তবে আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, হার্নান্দেজের মানসিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে এবং তার বুদ্ধিমত্তা (IQ) মাত্রা অনেক কম। তার কাছ থেকে প্রথম স্বীকারোক্তি নেওয়া হয় প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে পুলিশের কোনো সতর্কতা ছাড়াই জিজ্ঞাসাবাদের পর। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে ‘মিরান্ডা রাইটস’ বা স্ব-অভিযোগ থেকে নিজেকে রক্ষার সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে অবহিত করে এবং তখন তার ভিডিও স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়। পরে তিনি একজন ফেডারেল প্রসিকিউটরের সামনেও একই কথা বলেন। ২০১৭ সালের বিচারে জুরি ভিডিও স্বীকারোক্তির ওপর অনেকটাই নির্ভর করেছিল। তবে আপিল আদালত জানায়, সেই সময় বিচারক জুরিদের স্বীকারোক্তি মূল্যায়নের বিষয়ে ভুল নির্দেশনা দেন। জুরিরা বিচারকের কাছে জানতে চায়—যদি প্রথম স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় না হয়ে থাকে, তবে পরবর্তী স্বীকারোক্তিগুলো উপেক্ষা করতে হবে কিনা। এর উত্তরে বিচারক বলেন: “না।” এই ভুল নির্দেশনার কারণেই আদালত মনে করে, রায়টি অন্যায্য হয়েছে এবং নতুন করে বিচার হওয়া উচিত। হার্নান্দেজের আইনজীবী হার্ভি ফিশবেইন বলেন, “আমরা কৃতজ্ঞ যে আদালত পেদ্রোকে এখন তার জীবন ফিরে পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। আমি আহ্বান জানাই ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নির দপ্তর যেন এই ভুল মামলাটি প্রত্যাহার করে এবং প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করার দিকে মনোযোগ দেয়।”   এলএবাংলাটাইমস/ওএম