মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সঙ্গে একটি “বিশাল” বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। জাপান যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।
এই চুক্তি অনুযায়ী, জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার (৪০৭ বিলিয়ন পাউন্ড) বিনিয়োগ করবে এবং তাদের পণ্য আমদানির ওপর কর হবে ১৫ শতাংশ— যা ট্রাম্প আগে হুমকি দেওয়া ২৫ শতাংশের চেয়ে অনেক কম।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেন, জাপান তাদের বাজার খুলে দেবে মার্কিন পণ্যের জন্য, যার মধ্যে রয়েছে গাড়ি, ট্রাক, চাল ও কিছু কৃষিপণ্য।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব দেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, তাদের মধ্যে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম হারে শুল্কযুক্ত চুক্তি।”
হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার রাতে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, “আমি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি, সম্ভবত এটি জাপানের সঙ্গে সবচেয়ে বড় চুক্তি।” তিনি আরও বলেন, “ওদের শীর্ষ কর্মকর্তারা এখানে ছিলেন, আমরা দীর্ঘ সময় ধরে এটি নিয়ে কাজ করেছি। এটা সবার জন্যই ভালো একটা চুক্তি।”
জাপানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি ও যন্ত্রাংশ রপ্তানিতে শুল্ক কমে ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হবে। তবে এটি এখনো সেই ১০ শতাংশের চেয়ে বেশি, যা ট্রাম্প এপ্রিলে ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ স্থগিত করার সময় ধার্য করেছিলেন।
জাপানের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির এক চতুর্থাংশই আসে গাড়ি খাত থেকে, যা দেশটির অর্থনীতির প্রায় ৩% জুড়ে। ২০১৯ সালে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় ছিল ৪১০ বিলিয়ন ডলার।
ইশিবা বলেন, “বিশ্বে আমরাই প্রথম যারা পরিমাণগত কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই গাড়ি ও অটো পার্টসে শুল্ক কমালাম।”
তবে জাপান নিজ দেশের পণ্যে কোনো শুল্ক ছাড় দিচ্ছে না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
এদিকে, মার্কিন গাড়ি নির্মাতারা এই চুক্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। কারণ, এই চুক্তি জাপান থেকে আমদানি হওয়া গাড়িতে শুল্ক কমালেও কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানিতে ২৫% শুল্ক বহাল থাকছে।
আমেরিকান অটোমোটিভ পলিসি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ম্যাট ব্লান্ট— যা ফোর্ড, জেনারেল মোটরস এবং স্টেলান্টিসের প্রতিনিধিত্ব করে— এই চুক্তিকে “একটি খারাপ চুক্তি” বলে আখ্যা দেন।
হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের দূতাবাসকে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসি যোগাযোগ করেছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের সঙ্গেও বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিপাইন থেকে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে ১৯%।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকস-এর শিগেতো নাগাই বলেন, “১৫% শুল্ক হারের মধ্যে নামিয়ে আনা জাপানের জন্য এ মুহূর্তে সর্বোত্তম সমঝোতা।” তিনি বলেন, জাপানের পরিকল্পিত বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে এবং এটি ট্রাম্পের ‘মেড ইন আমেরিকা’ উদ্যোগকে শক্তিশালী করবে।
চলতি মাসে জাপানকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প হুমকি দেন যে, যদি ১ আগস্টের আগে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে তিনি ২৫% শুল্ক আরোপ করবেন। পরে ২ এপ্রিল তার “লিবারেশন ডে” ঘোষণার সময় তিনি সেই শুল্ক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যা বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত রাখা হয়। এই সময়ের মধ্যেই টোকিও-ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনার পথ খুলে যায়।
বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্থনৈতিক আকারে জাপান বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জার্মানির পরই এর অবস্থান।
জাপানের প্রধান শেয়ারবাজার নিক্কেই ২২৫ সূচক চুক্তির ঘোষণার পর বুধবার ৩.৫% বেড়ে যায়। বিশেষ করে টয়োটা, নিসান ও হোন্ডার শেয়ার মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে।
এই চুক্তি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা নিজ দেশে রাজনৈতিক চাপের মুখে আছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উচ্চকক্ষ নির্বাচনে তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এর আগেই তারা নিম্নকক্ষেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিল।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম