আমেরিকা

চাকরির তথ্য প্রকাশের পর অর্থনৈতিক প্রধানকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প, বাজারে ধস

চাকরির দুর্বল পরিসংখ্যান প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করে বহুল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্থা ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকস (BLS)-এর কমিশনার এরিকা ম্যাকএনটারফার-কে বরখাস্ত করেছেন। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেন, "রিপাবলিকান পার্টি ও আমাকে খারাপ দেখানোর জন্য চাকরির পরিসংখ্যান সাজানো হয়েছে"—যদিও তিনি তার এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যানকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করলে জনগণের আস্থা ভেঙে পড়বে এবং গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার বলেন, “তিনি একজন খারাপ নেতা, যিনি দুর্বল তথ্য এলেই বার্তাবাহককে গুলি করেন।” শুক্রবার মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটে, কারণ একই দিনে BLS জানায়—জুলাই মাসে মাত্র ৭৩,০০০ নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে পূর্বাভাস ছিল ১,০৯,০০০। মে ও জুন মাসের হিসেবেও সামগ্রিকভাবে ২,৫০,০০০ চাকরি কমে গেছে বলে সংশোধিত পরিসংখ্যানে জানা গেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন: “আমার শাসনামলে অর্থনীতি চাঙ্গা!” তবে নেভি ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিদার লং বলেন, “এই তথ্যগুলো পুরো গেম চেঞ্জার। ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতির অনিশ্চয়তায় শ্রমবাজার দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।” ট্রাম্পের দাবি—এই ট্যারিফ পলিসি যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন খাতকে পুনর্জীবিত করবে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ও ব্যবসায়িক ব্যয়ের প্রতিবেদনগুলো সেই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামারস বলেছেন, “যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন চলে, কেবল সেখানেই সরকার খারাপ তথ্যের জন্য পরিসংখ্যানপ্রধানকে বরখাস্ত করে।” Friends of BLS নামের একটি সংগঠন (যার সদস্যদের মধ্যে দুইজন সাবেক কমিশনারও আছেন) জানায়, “যেসব দেশে সরকার পরিসংখ্যানকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করেছে, সেখানে জনগণ সরকারি তথ্য ও বিজ্ঞানকে আর বিশ্বাস করে না।” বরখাস্ত হওয়া এরিকা ম্যাকএনটারফার বলেন, “এই দায়িত্ব পালন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান। BLS-এর কাজ জাতীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” ডানপন্থী গবেষণা প্রতিষ্ঠান American Enterprise Institute-এর পরিচালক মাইকেল স্ট্রেইন ম্যাকএনটারফারকে “অসাধারণ সততার” অধিকারী বলেও মন্তব্য করেন। Peterson Institute-এর সিনিয়র ফেলো জেড কোলকো বলেন, “এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়—এটি মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যবস্থার প্রতি ইচ্ছাকৃত আঘাত।” শ্রম মন্ত্রণালয়, যা BLS-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে, জানিয়েছে যে আপাতত উপকমিশনার উইলিয়াম উইয়াট্রোস্কি কমিশনার হিসেবে কাজ করবেন। এদিকে ফেডারেল রিজার্ভের হারে কোনো পরিবর্তন না আনার জন্যও ট্রাম্প এর আগে চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল-কে আক্রমণ করেছিলেন। এবার বললেন, "পাওয়েলকেও অবসরে পাঠানো উচিত।" ফেড-এর নীতিনির্ধারণী বোর্ডের সদস্য আড্রিয়ানা কুগলার সময়ের আগেই পদত্যাগ করছেন, ফলে ট্রাম্পের সামনে নতুন নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের নতুন আমদানি ট্যারিফের হার এখন ১৭% ছুঁয়েছে, যেখানে বছরের শুরুতে এটি ছিল ২.৫%। পোর্টফোলিও ম্যানেজার মাইকেল গায়েড বলছেন, “এপ্রিলের পর বাজার দ্রুত ফিরে এসেছিল দেখে ট্রাম্প আরও সাহস পেয়ে গেছেন। এবার তিনি আবার ঝুঁকি নিচ্ছেন।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি পরিসংখ্যান ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগ নিয়ে গভীর প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি শুধু অর্থনীতিকেই নয়, গণতন্ত্রকেও ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম