যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যে একটি সামরিক বিস্ফোরক তৈরির কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হাম্পফ্রিজ কাউন্টির শেরিফ ক্রিস ডেভিস জানান, চার থেকে পাঁচজনকে আশপাশের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, তবে আরও কয়েকজনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। “বর্ণনা করার মতো কিছুই নেই—সব ধ্বংস হয়ে গেছে,” তিনি বলেন।
বাকসনোর্ট এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানাটি (ন্যাশভিল থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে) বিস্ফোরক উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য পরিচিত Accurate Energetic Systems-এর মালিকানাধীন। বিস্ফোরণের কারণ এখনও পরিষ্কার নয়।
ঘটনাস্থলের আকাশচিত্রে দেখা গেছে—পুরো এলাকা ছাইচাপা, ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবন ও জ্বলে যাওয়া যানবাহন। শেরিফ ডেভিস বলেন, বিস্ফোরণের সময় কারখানাটি পুরোপুরি সচল ছিল এবং পরপর আরও ছোট বিস্ফোরণ হওয়ায় উদ্ধারকর্মীদের কিছুটা দূর থেকে কাজ করতে হয়েছে।
“এই মুহূর্তে আমরা ১৯ জন মানুষ নয়, ১৯টি প্রাণ খুঁজছি,” শেরিফ ডেভিস আবেগঘন কণ্ঠে বলেন। পরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, ওই বিস্ফোরণে প্রায় অর্ধ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ২৫ কিলোমিটার দূরের ওয়েভারলি শহরেও মানুষ বিস্ফোরণের শব্দ ও কম্পন অনুভব করেছেন।
বিস্ফোরণটি দুর্ঘটনাজনিত না ইচ্ছাকৃত, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ডেভিস বলেন, “আমরা সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনাই ধরে তদন্ত শুরু করব, যাতে সত্যটা বের হয়।”
টেনেসির গভর্নর বিল লি এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে ঘটনাটিকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে উল্লেখ করেন এবং জানান, স্থানীয় ও ফেডারেল কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে।
নিকটবর্তী ডিকসনের ট্রাইস্টার হেলথের মুখপাত্র কেসি স্ট্যাপ জানিয়েছেন, তিনজন রোগী স্বেচ্ছায় হাসপাতালে আসেন; তাদের মধ্যে দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, একজন এখনও চিকিৎসাধীন আছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, আশপাশের আরও কয়েকটি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং ৩০ কিলোমিটার দূরের এলাকাতেও বিস্ফোরণের অভিঘাত টের পাওয়া গেছে।
১৩০০ একর জায়গা জুড়ে থাকা এই কারখানায় সামরিক মানের বিস্ফোরক—সি-৪, টিএনটি এবং অন্যান্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পদার্থ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হতো। কারখানাটির প্রায় ৭৫ জন কর্মী ছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
এই বিস্ফোরণের তদন্তে এফবিআই ও মার্কিন অ্যালকোহল, টোব্যাকো, ফায়ারআর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস ব্যুরো (ATF) কাজ করছে। তারা ঘটনাস্থলকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করলেও তদন্তকারীরা পরবর্তী কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করবেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, একই স্থানে ২০১৪ সালেও একবার বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তখন ‘রিও অ্যামুনিশন’ নামে আরেক কোম্পানি ওই ইউনিট পরিচালনা করত। সে ঘটনায় একজন নিহত ও তিনজন আহত হন।
বিস্ফোরক উৎপাদন শিল্পকে “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিরাপদ” বলে বর্ণনা করেছেন Institute of Explosives Engineers-এর সাবেক সভাপতি কেন ক্রস। তিনি বলেন, “দক্ষ কর্মী ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। নিয়মিত তদারকি না থাকা দেশগুলোতে প্রায়ই এমন বিস্ফোরণ ঘটে থাকে।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম