আমেরিকা

ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থায়ন চুক্তি প্রত্যাখ্যান করল এমআইটি

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত এক অর্থায়ন চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দিষ্ট নীতি অনুসরণের বিনিময়ে ফেডারেল তহবিলে অগ্রাধিকার পাওয়ার সুযোগ দিচ্ছিল। শুক্রবার প্রকাশিত এক চিঠিতে এমআইটির প্রেসিডেন্ট স্যালি কর্নব্লুথ যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমোহনকে জানান, প্রস্তাবটি বিশ্ববিদ্যালয়ের “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করবে” এবং এমআইটির মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমআইটির পাশাপাশি ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসকেও একই ধরনের চুক্তি সই করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। চুক্তির শর্ত: বিদেশি ছাত্রভর্তি সীমিতকরণ ও রাজনৈতিক নীরবতা “Compact for Academic Excellence in Higher Education” নামে প্রস্তাবিত এই চুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেশ কিছু বিতর্কিত শর্ত মানতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে—
বিদেশি ছাত্রভর্তি সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশে সীমিত রাখা, এবং কোনো একটি দেশ থেকে ৫ শতাংশের বেশি না নেওয়া। রাজনৈতিক ইভেন্টে বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের মন্তব্য সীমিত করা। কেবলমাত্র “দ্বৈত লিঙ্গ সংজ্ঞা” (পুরুষ–নারী) গ্রহণ করা। ভর্তি প্রক্রিয়ায় মানসম্মত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ দমন করতে “আইনসিদ্ধ প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের অঙ্গীকার” করা। বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব আছে কি না তা যাচাই করা এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের তথ্য ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে জানানো। এছাড়া, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে তাদের প্রাপ্ত ফেডারেল অর্থ ও বেসরকারি অনুদান ফেরত দিতে হবে। এমআইটির অবস্থান কর্নব্লুথ তার চিঠিতে জানান, এমআইটি ইতিমধ্যেই ভর্তি পরীক্ষায় মানসম্মত পরীক্ষা ব্যবহার করে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় নিজস্ব উদ্যোগে নীতিমালা অনুসরণ করছে। বর্তমানে এমআইটির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর হার প্রায় ১০ শতাংশ। তিনি বলেন, “আমরা এই মূল্যবোধগুলোকে বেছে নিয়েছি কারণ এগুলো সঠিক, এবং আমরা এগুলো অনুসরণ করি কারণ এগুলোই আমাদের মিশনকে শক্তিশালী করে।” কর্নব্লুথ আরও বলেন, “এই প্রস্তাবে এমন কিছু নীতি রয়েছে যা আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতাকে সীমিত করবে। মূলত, বৈজ্ঞানিক অর্থায়ন শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত—এই বিশ্বাসের সঙ্গে প্রস্তাবটির মূল ধারণা সাংঘর্ষিক।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের দৃষ্টিতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব নির্ভর করে স্বাধীন চিন্তা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ওপর। তাই আমরা এই প্রস্তাবকে সমর্থন করতে পারি না।” ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চলমান বিরোধ এর আগেও এমআইটি ফেডারেল অর্থায়ন কমানোর সিদ্ধান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তারা স্বাস্থ্য গবেষণার তহবিল কমানোর প্রতিবাদে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথভাবে আদালতে যায়। এমআইটি তার প্রতিবেশী হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির পক্ষেও আদালতে সমর্থন জানিয়েছে, যারা একই কারণে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া সরকার যেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে এই চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা, ডার্টমাউথ কলেজ, ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ও ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “যদি কোনো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এই চরমপন্থী চুক্তিতে সই করে, তবে তারা রাজ্যের তহবিলসহ কোটি কোটি ডলারের Cal Grants হারাবে।” তিনি আরও বলেন, “ক্যালিফোর্নিয়া এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থায়ন করবে না যারা নিজেদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের স্বাধীনতা বিক্রি করে দেয় এবং একাডেমিক স্বাধীনতাকে ত্যাগ করে।”   এলএবাংলাটাইমস/ওএম