মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার অংশ হিসেবে রেডিয়েশন থেরাপি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মুখপাত্র। ৮২ বছর বয়সী বাইডেন বর্তমানে হরমোন থেরাপিও নিচ্ছেন, যদিও চিকিৎসার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এনবিসি নিউজের এক সূত্র জানায়, বাইডেনের রেডিয়েশন থেরাপি প্রায় পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলবে এবং এটি তাঁর চিকিৎসার নতুন একটি ধাপ। গত মে মাসে বাইডেনের দপ্তর জানিয়েছিল, তাঁর ক্যান্সার শরীরের হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে—যা রোগটির আরও আক্রমণাত্মক পর্যায় নির্দেশ করে। মূত্রজনিত সমস্যার পর চিকিৎসকেরা তাঁর প্রস্টেটে একটি ছোট গাঁট (নডিউল) শনাক্ত করেন এবং পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি ক্যান্সারজনিত।
বিবৃতিতে বাইডেনের অফিস জানিয়েছিল, “তাঁর প্রস্টেট ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে, যার গ্লিসন স্কোর ৯ (গ্রেড গ্রুপ ৫), এবং এটি হাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে।”
তবে তারা আরও জানায়, এই ক্যান্সার ‘হরমোন-সেন্সিটিভ’ হওয়ায় চিকিৎসা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের তথ্য অনুযায়ী, গ্লিসন স্কোর ৯ মানে হলো ‘উচ্চমাত্রার’ ক্যান্সার, যা দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিবিসির অংশীদার সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, বাইডেন চিকিৎসায় ভালো সাড়া দিচ্ছেন। ফিলাডেলফিয়ায় কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর রেডিয়েশন থেরাপি শুরু হয় বলে জানা গেছে।
জো বাইডেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বয়সী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব শেষ করেন। স্বাস্থ্যের অবনতি ও বয়সজনিত নানা প্রশ্ন তাঁর প্রথম মেয়াদজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয়, যা শেষ পর্যন্ত তাঁকে ২০২৪ সালের নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস, যিনি পরবর্তীতে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নির্বাচনে পরাজিত হন।
বাইডেন দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সার গবেষণা ও সচেতনতায় সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন। ২০২২ সালে তিনি ও তাঁর স্ত্রী জিল বাইডেন ‘ক্যান্সার মুনশট’ উদ্যোগটি পুনরায় চালু করেন, যার লক্ষ্য ২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৪০ লাখ ক্যান্সারজনিত মৃত্যু প্রতিরোধ করা।
বাইডেন তাঁর বড় ছেলে বো বাইডেনকে ২০১৫ সালে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে হারান। এছাড়া ২০২৩ ও ২০২৫ সালে তিনি দুইবার ত্বকের ক্যান্সারের চিকিৎসা নেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাইডেন গণমাধ্যম থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছেন। গত মে মাসে তিনি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর জন্য “অত্যন্ত কঠিন” ছিল।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্যানুসারে, প্রস্টেট ক্যান্সার হলো যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সারের পরই এর অবস্থান। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (CDC) জানায়, প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে গড়ে ১৩ জন জীবনের কোনো এক পর্যায়ে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, এবং বয়সই এর সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম