মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যে একটি বিস্ফোরক তৈরির কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর নিখোঁজ ১৬ জনের কেউই জীবিত নেই বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ। হামফ্রিজ কাউন্টির শেরিফ ক্রিস ডেভিস জানিয়েছেন, উদ্ধারকর্মীরা শুরুতে নিখোঁজদের জীবিত পাওয়ার আশা করলেও শনিবার সন্ধ্যায় তারা নিশ্চিত হয়েছেন—সবাই নিহত হয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল ১৮ জন নিহত হয়েছেন, তবে তদন্তে জানা গেছে দুইজন ওই সময় কারখানায় ছিলেন না এবং পরে তাদের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার সকালে টেনেসির বাকসনর্ট এলাকায়, যা রাজ্যের রাজধানী ন্যাশভিল থেকে প্রায় ৫৬ মাইল (৯০ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ স্পষ্ট নয়।
বিস্ফোরণের পর প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কারখানার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, আগুন এখনও জ্বলছে, চারপাশে ধোঁয়া আর ভস্মীভূত গাড়ির স্তূপ পড়ে আছে। ভবনের চারদিকে প্রায় অর্ধ মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। বিস্ফোরক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান Accurate Energetic Systems (AES) ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
শেরিফ ডেভিস জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল থেকে রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ের ৩০০-র বেশি উদ্ধারকর্মী ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছেন।
“ভবনের ভেতরে যারা ছিলেন, আমরা এখন ধরে নিতে পারি—তারা আর বেঁচে নেই,” সংবাদ সম্মেলনে এক আবেগঘন কণ্ঠে বলেন তিনি।
“ঘটনাটি যত গভীরে যাচ্ছি, ততই এটি আরও ভয়াবহ মনে হচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।
শনিবার সকালে উদ্ধার অভিযানকে উদ্ধার থেকে মরদেহ উদ্ধারের অভিযানে রূপ দেওয়া হয়। এফবিআই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহতদের শনাক্তের কাজ শুরু করেছে, যাতে পরিবারগুলোকে দ্রুত খবর দেওয়া যায়।
প্রতিবেশী হিকম্যান কাউন্টির শেরিফ জেসন ক্রাফট বিবিসিকে বলেন,
“আমরা এখন নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তারা আমাদের সহানুভূতি ও সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য।”
ঘটনাস্থলে যুক্তরাষ্ট্রের Bureau of Alcohol, Tobacco, and Firearms (ATF)-এর কর্মকর্তারাও তদন্তে অংশ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, একই স্থানে ২০১৪ সালেও একটি প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ ঘটেছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা অ্যান মায়ার্স বলেন, “শুক্রবার সকালে হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। আমি ভাবছিলাম হয়তো টর্নেডো হয়েছে বা বড় কোনো সড়ক দুর্ঘটনা। আমাদের বাড়ি কেঁপে ওঠে, বিদ্যুৎ চলে যায়—এটা ছিল ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।”
অন্য এক বাসিন্দা জাস্টিন স্টোভার, যার বাড়ি AES কারখানার পাশেই, জানান,
“বিস্ফোরণে পুরো ঘর কেঁপে ওঠে, দেয়ালের জিনিসপত্র পড়ে যায়। শব্দটা ছিল জীবনে শোনা সবচেয়ে ভয়ংকর বজ্রধ্বনির মতো।”
তিনি বলেন, “কারখানাটি এ এলাকার অন্যতম বড় কর্মসংস্থানের জায়গা। এখানে প্রায় ৮০ জন কাজ করতেন, আর তাদের অনেকেই হয়তো প্রাণ হারিয়েছেন।”
স্টোভার আরও জানান, এই দুর্ঘটনা পুরো সম্প্রদায়ের জন্য এক ভয়াবহ ধাক্কা হয়ে এসেছে।
শেরিফ ডেভিস বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ প্রায় ১৫ মাইল (২৫ কিলোমিটার) দূরের শহরগুলো থেকেও শোনা গেছে।
অন্য এক স্থানীয় নারী বলেন, “আমি মেয়ের ডাইনিং টেবিলে বসে ছিলাম, হঠাৎ এক প্রচণ্ড শব্দ শুনে মনে হলো বন্দুক বা কোনো বোমা ফেটেছে।”
আরেকজন বাসিন্দা লুসি গারটন জানান, তাঁর স্বামী ওই কারখানায় কাজ করা কিছু মানুষকে চিনতেন।
তিনি বলেন, “এই দুর্ঘটনা পুরো এলাকা জুড়ে প্রভাব ফেলবে। এখানে সবাই একে অপরকে চেনে, পরিবারভিত্তিক, পরিশ্রমী মানুষ। তাদের এই ক্ষতি আমাদের সবার ক্ষতি।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম