ইরান থেকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের কাছে ব্যালিস্টিক মিসাইলের যন্ত্রাংশ পাচারের দায়ে পাকিস্তানি নাগরিক মুহাম্মদ পাহলাওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আরব সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর অভিযানে তাকে আটক করা হয়। অভিযানের সময় দুই মার্কিন নেভি সিল সদস্য ডুবে মারা যান।
মুহাম্মদ পাহলাওয়ান একটি মাছ ধরার নৌকা ব্যবহার করে অস্ত্রের যন্ত্রাংশ পরিবহন করছিলেন। পরে জানা যায়, তিনি হুতি বিদ্রোহীদের কাছে ব্যালিস্টিক মিসাইলের অংশ পাঠাচ্ছিলেন। তার নৌকাটির নাম ছিল “ইউনুস”।
পাহলাওয়ানের নৌকায় থাকা আটজন ক্রু আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে জানান, তারা জানতেন না নৌকার ভেতরে কী আছে। তারা ভেবেছিলেন তারা মাছ ধরার কাজে যুক্ত হয়েছেন। এক ক্রু পাহলাওয়ানকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “নিজের কাজে মন দাও।”
আদালতের রায় ও প্রমাণ
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আদালত পাহলাওয়ানকে সন্ত্রাসবাদ এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্র পরিবহনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে।
মোট পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে ২০ বছর করে সাজা একসঙ্গে চলবে (মোট ২০ বছর), আর বাকি তিনটি অভিযোগে আরও ২০ বছর করে সাজা ধারাবাহিকভাবে চলবে। সব মিলিয়ে মোট ৪০ বছর কারাদণ্ড।
আদালতের নথিতে উল্লেখ করা হয়, নৌকায় পাওয়া যন্ত্রাংশগুলো ছিল “ইরানের তৈরি সবচেয়ে উন্নতমানের অস্ত্র উপাদান”, যা তেহরান অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছেও সরবরাহ করে থাকে।
বিপজ্জনক যাত্রা ও গোপন বার্তা
গ্রেপ্তারের আগে স্ত্রীকে পাঠানো এক বার্তায় পাহলাওয়ান নিজেকে বলেন, “আমি এক জীবিত মৃত মানুষ।”
স্ত্রী জিজ্ঞেস করলে কেন এমন বলছেন, তিনি জবাব দেন: “এই কাজের প্রকৃতি এমনই, প্রিয়তমা।”
তিনি আরও লেখেন, “আমার জন্য দোয়া করো, যেন নিরাপদে যাই ও ফিরে আসি।”
এই যাত্রার জন্য পাহলাওয়ানকে দেওয়া হয়েছিল ১,৪০০ মিলিয়ন রিয়াল (প্রায় ২৫,২০০ পাউন্ড বা ৩৩,২৭৪ ডলার)—যা প্রসিকিউটররা “বিপদের মূল্য” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইরানি জড়িতদের ভূমিকা
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ জানায়, এই অভিযানের পেছনে ছিল ইরানের দুই ভাই—ইউনুস ও শাহাব মির’কাজাই। তারা ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর সঙ্গে যুক্ত, যেটিকে যুক্তরাষ্ট্র “বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা হলেও তারা বর্তমানে পলাতক এবং ইরানে অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পূর্বের সফল পাচার অভিযান
পাহলাওয়ান ২০২৩ সালের অক্টোবরে ও ডিসেম্বর মাসে দুইবার সফলভাবে একই রুটে অস্ত্র পাচার করেন। তার ১২ সদস্যের ক্রু দল পাকিস্তান থেকে ইরানে কাজের খোঁজে গিয়েছিল।
তারা ইরানের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর চাবাহারে বড় বড় বাক্স বোঝাই করেছিল এবং পরে সোমালিয়ার উপকূলে আরেকটি নৌকায় সেগুলো হস্তান্তর করেছিল।
পরবর্তীতে মার্কিন নৌবাহিনী আবিষ্কার করে, সেই বাক্সগুলোতে ছিল ইরানের তৈরি ব্যালিস্টিক মিসাইলের অংশ, অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল কম্পোনেন্ট এবং একটি ওয়ারহেড।
এভাবে এক জটিল আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের মুখোশ উন্মোচিত হয়, যা ইরান থেকে হুতি বিদ্রোহীদের কাছে উন্নতমানের অস্ত্র সরবরাহে জড়িত ছিল।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম