ওয়ালমার্ট যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার প্রার্থীদের নিয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত এসেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নতুন নির্দেশনার পর, যেখানে এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ১ লক্ষ ডলার (প্রায় ৭৪ হাজার পাউন্ড) নতুন ফি আরোপ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে মার্কিন নিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই নতুন ফি আরোপ করেন। তিনি দাবি করেন, দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য তৈরি এই কর্মসূচিটি “অপব্যবহার” হচ্ছে এবং এটি মার্কিন নাগরিকদের চাকরির সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে।
ওয়ালমার্ট, যা যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ খুচরা বিক্রেতা চেইন, এই কর্মসূচির অন্যতম বড় ব্যবহারকারী। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই কোম্পানিটি ২,০০০-এর বেশি এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন পেয়েছে। এক বিবৃতিতে কোম্পানির মুখপাত্র জানান, “আমরা আমাদের গ্রাহকদের সেবা দিতে সেরা প্রতিভা নিয়োগ ও বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে এইচ-১বি নিয়োগ নীতিতে এখন আমরা সতর্কভাবে এগোচ্ছি।”
ওয়ালমার্টের এই সিদ্ধান্তের খবর প্রথমে প্রকাশ করে ব্লুমবার্গ নিউজ। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালমার্ট প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষকে কর্মসংস্থান দেয়, যা দেশটির সর্ববৃহৎ বেসরকারি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। যদিও খুচরা খাতে ওয়ালমার্ট এইচ-১বি ভিসার সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী, এই কর্মসূচিটি সাধারণত প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বেশি সম্পর্কিত।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে অ্যামাজন সর্বাধিক — ১০,০০০-এর বেশি — এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন পেয়েছে। মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল ও গুগল প্রত্যেকেই একই সময়ে ৪,০০০-এর বেশি ভিসা পেয়েছে। বড় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি অনেক স্টার্টআপ ও ছোট প্রতিষ্ঠানও এই কর্মসূচির আওতায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে থাকে।
ট্রাম্পের নতুন আদেশ শুধুমাত্র নতুন ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে এবং এতে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় ফি না দিলে প্রবেশ সীমিত করা হবে।
এইচ-১বি প্রোগ্রামের সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, এটি মার্কিন কর্মীদের চাকরির সুযোগ কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে সমর্থকেরা, যেমন ইলন মাস্ক, দাবি করেন যে এটি যুক্তরাষ্ট্রকে সারা বিশ্ব থেকে সেরা মেধাবীদের আকর্ষণ করতে সহায়তা করে।
তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে ভারতের অংশ প্রায় ৭০% এবং চীনের প্রায় ১২%।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে — কর্মীটি কি এতটাই মূল্যবান যে সরকারের কাছে বছরে ১ লক্ষ ডলার পরিশোধ করা যুক্তিযুক্ত, না হলে তারা দেশে ফিরে যাক এবং একজন আমেরিকান কর্মী নিয়োগ করা হোক।”
অন্যদিকে, মার্কিন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অফ কমার্স গত সপ্তাহে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। সংস্থার প্রধান নীতিনির্ধারক নিল ব্র্যাডলি বলেন, এই ফি প্রবর্তনের ফলে মার্কিন নিয়োগকারীদের জন্য এইচ-১বি প্রোগ্রাম “অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর” হয়ে পড়বে।
তাদের অভিযোগে বলা হয়েছে, এই ফি কার্যকর হলে মার্কিন ব্যবসাগুলো হয় শ্রম ব্যয় বাড়াতে বাধ্য হবে, নয়তো দক্ষ কর্মী নিয়োগ কমিয়ে দিতে হবে।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফি আরোপ সম্পূর্ণ বৈধ এবং এটি “প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে একটি প্রাথমিক ও ধীরগতি পদক্ষেপ।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম