আমেরিকা

প্রশান্ত মহাসাগরে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় হামলা, নিহত ৩

প্রশান্ত মহাসাগরে মাদকবাহী সন্দেহে একটি নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় দফা বিমান হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বুধবারের এই হামলার ঘটনায় কোনো মার্কিন সেনা হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে পরিচালিত এই অভিযানটি যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রপথে মাদক পাচারের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের অংশ। হামলাটি প্রথমটির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চালানো হয়, যখন প্রশান্ত মহাসাগরে আরেকটি নৌযানে হামলায় দুইজন নিহত হন। কলম্বিয়ার সরকার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ “অন্য দেশের ভূখণ্ডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সমান”। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ এক্স (X)-এ পোস্ট করে বলেন, “আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে যুদ্ধ বিভাগ একটি ‘ঘাতক আঘাত’ হেনেছে এমন একটি নৌযানে, যা একটি ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে ছিল।” তিনি আরও বলেন, “এই হামলাগুলো প্রতিদিন চলতে থাকবে। এরা কেবল মাদক পাচারকারী নয় — এরা আমাদের শহরে মৃত্যু ও ধ্বংস বয়ে আনা নারকো-সন্ত্রাসী।” তার পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওতে দেখা যায়, একটি নৌযান বিস্ফোরণের পর আগুনে জ্বলছে। পরে পানিতে ভাসমান কিছু বস্তুতে দ্বিতীয় দফা বিমান হামলা চালানো হয় বলে ধারণা করা হয়। কলম্বিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মরিসিও জারামিলো বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই হামলাগুলো অসম ও আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে। নৌযানে থাকা ব্যক্তিদের আত্মরক্ষার কোনো সুযোগই ছিল না। কোনো বিচার প্রক্রিয়া বা আদালতের আদেশ ছাড়াই এই অভিযান চালানো হয়েছে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান, যেন তারা কলম্বিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে মাদকবিরোধী লড়াই চালায়, একতরফা হামলা নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এসব হামলা চালানোর জন্য তার প্রশাসনের আইনি ক্ষমতা রয়েছে। তবে স্থলভাগে অভিযান চালাতে হলে তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন চাইতে পারেন। “আমরা প্রস্তুত আছি, এবং প্রয়োজনে স্থলভাগেও অভিযান চালানো হবে,” বলেন ট্রাম্প। মার্কিন হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ক্যারিবীয় সাগরে একটি আধা-ডুবোজাহাজে হামলায় দুজন বেঁচে যান, যাদের পরে কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরে ফেরত পাঠানো হয়। ইকুয়েডর সরকার জানায়, তাদের নাগরিক আন্দ্রেস ফার্নান্দো তুফিনো-র বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ মেলেনি। অপরজন, একজন কলম্বিয়ান নাগরিক, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কলম্বিয়া ও প্রতিবেশী ইকুয়েডর — উভয় দেশেরই দীর্ঘ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল রয়েছে, যা মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (DEA) অনুমান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো বেশিরভাগ কোকেইন প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুট দিয়েই আসে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক জব্দের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তা কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হামলায় নিহতদের পরিচয় বা তারা কোন মাদক চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন — সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। পুরো অভিযানে প্রায় ১০,০০০ মার্কিন সেনা, এবং ডজনখানেক যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম