আমেরিকা

কেনটাকিতে ইউপিএস কার্গো প্লেন বিধ্বস্ত, নিহত কমপক্ষে ৭ জন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিল শহরে একটি ইউপিএস (UPS) কার্গো প্লেন উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ার। তিনি জানান, প্লেনটির তিনজন ক্রু সদস্য সম্ভবত নিহতদের মধ্যে রয়েছেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৫ মিনিটে (২২:১৫ জিএমটি) লুইসভিলের মুহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নকালে বিমানটি বিস্ফোরিত হয়ে পড়ে যায়। এখনো নিশ্চিত করা হয়নি যে নিহতদের মধ্যে ওই তিন ক্রু সদস্য আছেন কিনা। দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর, ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুটি স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়, যার একটি ছিল অটো সার্ভিস সেন্টার এবং অপরটি পেট্রোলিয়াম রিসাইক্লিং কোম্পানি। অটো প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। লুইসভিল ফায়ার বিভাগের প্রধান ব্রায়ান ও’নিল জানিয়েছেন, বিমানে থাকা বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল বিস্ফোরণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দুর্ঘটনার পর প্রথমে বিমানবন্দর থেকে পাঁচ মাইল পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়, পরে তা এক মাইলে সীমিত করা হয়। তদন্তে জানা গেছে, এমডি-১১এফ (MD-11F) মডেলের তিন ইঞ্জিন বিশিষ্ট ওই কার্গো বিমানটি ৩৮,০০০ গ্যালন (প্রায় ১,৪৪,০০০ লিটার) জ্বালানি বহন করছিল। বিমানটি লুইসভিল থেকে হাওয়াইয়ের উদ্দেশ্যে ৪,৩০০ মাইল (৬,৯২০ কিলোমিটার) যাত্রা শুরু করেছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানে এমন কোনো বিপজ্জনক পণ্য ছিল না যা দূষণ বা রাসায়নিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। ইউপিএস জানিয়েছে, বিমানে তিনজন ক্রু ছিলেন, তবে আহত বা নিহতের তথ্য তারা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। দুর্ঘটনার কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি ব্যুরো (NTSB) বুধবার কেনটাকিতে তাদের তদন্ত দল পাঠাবে। গভর্নর বেসিয়ার বলেছেন, “এখনই কোনো অনুমান করা উচিত নয়। এনটিএসবি এই তদন্তের নেতৃত্ব দেবে।” লুইসভিল মেট্রো পুলিশের প্রধান পল হামফ্রে জানিয়েছেন, “আগামী কয়েক দিন পর্যন্ত ঘটনাস্থলটি সক্রিয় তদন্ত এলাকায় পরিণত থাকবে। তদন্ত শুরু করার আগে জায়গাটিকে নিরাপদ করতে সময় লাগবে।” বিমানটি ৩৪ বছর আগে থাই এয়ারওয়েজ-এর যাত্রীবাহী ফ্লাইট হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং ২০০৬ সালে ইউপিএসের কার্গো ফ্লিটে যোগ দেয়। এটি মূলত ম্যাকডোনেল ডগলাস (McDonnell Douglas) নির্মিত, যা ১৯৯৭ সালে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয়। বোয়িং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এনটিএসবিকে তদন্তে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে এবং “ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” লুইসভিল শহরকে ইউপিএসের বিশ্বব্যাপী কার্গো হাব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোম্পানির ওয়ার্ল্ডপোর্ট (Worldport) কেন্দ্রটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পার্সেল হ্যান্ডলিং সুবিধা। সিটি কাউন্সিল সদস্য বেটসি রুহে বলেন, “লুইসভিল একটি ইউপিএস টাউন—এখানে এমন কাউকে পাওয়া কঠিন যিনি ইউপিএসে কাজ করেন না বা কাউকে চেনেন না। সবাই এখন বন্ধু ও পরিবারের নিরাপত্তার খবর নিচ্ছেন।” লুইসভিলের মেয়র ক্রেইগ গ্রিনবার্গ এক্স-এ পোস্ট করে লিখেছেন, “এটি এক অবিশ্বাস্য ট্র্যাজেডি, যা আমাদের কমিউনিটি কখনো ভুলবে না। আমরা সাহসী ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকর্মীদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আহতদের সাহায্য করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।” ইউপিএস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ঘটনাটিতে গভীরভাবে মর্মাহত এবং মঙ্গলবার রাতের সব প্যাকেজ বাছাই কার্যক্রম স্থগিত করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আমাদের কর্মীদের, গ্রাহকদের এবং সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাই ইউপিএসের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার — বিশেষ করে লুইসভিলের মতো স্থানে, যা আমাদের বিমানবহরের হৃদয়।”   এলএবাংলাটাইমস/ওএম