মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোম জানিয়েছেন, তিনি কয়েকটি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করবেন—যেসব দেশ “যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছে” বলে তিনি দাবি করেছেন।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোম লিখেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে “যে সব দেশ খুনি, অপকর্মকারী ও ভোগবাদী লোকজন পাঠিয়ে আমেরিকাকে প্লাবিত করছে, তাদের ওপর পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা” সুপারিশ করবেন। ট্রাম্প এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (DHS) পরে নোমের পোস্টটি নিজেদের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে শেয়ার করে।
এখনও পরিষ্কার নয় কোন দেশগুলো এই নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে বা কবে এটি কার্যকর হবে। DHS জানিয়েছে, খুব শিগগিরই তালিকা ঘোষণা করা হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ফক্স নিউজকে জানান, কয়েক মাস আগে ট্রাম্প “থার্ড ওয়ার্ল্ড ও ফেইলড স্টেট” দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিলেন। নোমের প্রস্তাব নতুন করে আরও বহু দেশকে সেই তালিকায় যুক্ত করবে।
৪ জুন হোয়াইট হাউস ১৯টি দেশের তালিকা প্রকাশ করে—যেগুলোর বেশিরভাগই ছিল আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে—এবং যাদের ওপর আংশিক বা পূর্ণ ইমিগ্রেশন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
নোমের মন্তব্য আসে ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে গত বুধবার দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করার ঘটনার কয়েকদিন পর। তার আগে নোম দাবি করেছিলেন, বাইডেন প্রশাসনের ‘অপারেশন অ্যালাইস ওয়েলকাম’ কর্মসূচির অধীনে ১ লক্ষ আফগান নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, এবং DHS ভেটিং প্রক্রিয়া নতুন করে সাজাবে।
ডি.সি.-র ওই গুলিবর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন আফগান নাগরিক, যিনি ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে—যা ২০ বছরের আফগান যুদ্ধকালে মার্কিন সেনাদের সহযোগীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সিবিএস নিউজের প্রাপ্ত ইমেইল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ওই ব্যক্তি মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছিলেন।
গুলিতে সারা বেকস্ট্রম (২০) নিহত হন এবং অ্যান্ড্রু উলফ (২৪) গুরুতর আহত হন। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্যাট্রিক মরিসি জানান, উলফ নার্সদের থাম্বস-আপ ইশারা করেছেন, তবে তিনি এখনও গুরুতর অবস্থায় আছেন।
ঘটনার পরই আশ্রয়প্রার্থীদের সব আবেদন স্থগিত করে দেওয়া হয়। মার্কিন সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের পরিচালক জোসেফ এডলো বলেন, “যতক্ষণ না আমরা প্রতিটি বিদেশি নাগরিককে সর্বোচ্চ মাত্রায় যাচাই-বাছাই করতে পারি”, ততক্ষণ এই স্থগিতাদেশ থাকবে। তিনি আরও জানান, ট্রাম্প তাঁকে ১৯টি দেশের অভিবাসীদের দেওয়া গ্রিন কার্ড পর্যালোচনা করতে বলেছেন।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, তিনি “সব থার্ড ওয়ার্ল্ড দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ” করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। থার্ড ওয়ার্ল্ড বলতে সাধারণত দরিদ্র, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বোঝানো হয়।
থ্যাঙ্কসগিভিং উপলক্ষে পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, শরণার্থীরা “যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে” এবং তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে “যে কেউ দেশের জন্য নিট সম্পদ নয়—তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে”।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপক বহিষ্কার, শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা কমানো এবং মার্কিন ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণকারী অনেক শিশুর স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব অধিকার শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
ডি.সি.-র ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের আফগান কমিউনিটি কোয়ালিশন এক বিবৃতিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায় এবং তদন্তের দাবি তোলে। তারা জোর দিয়ে বলে, এটি “এক ব্যক্তির কাজ”, এবং আফগান অভিবাসীদের আবেদন স্থগিত বা বিলম্ব না করতে সরকারকে অনুরোধ জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, “২০ বছরের আফগান-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব ভুলে যাওয়া যাবে না।”
এদিকে জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম