আমেরিকা

টেনেসির বিশেষ নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জয়

যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে বহুল আলোচিত বিশেষ কংগ্রেশনাল নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ম্যাট ভ্যান এপস জয়লাভ করেছেন বলে দেশটির প্রধান গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এই নির্বাচনকে আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের পরীক্ষামূলক মঞ্চ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। প্রায় সব ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, রিপাবলিকান ভ্যান এপস ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাফটিন বেন-কে প্রায় নয় শতাংশ পয়েন্টে পরাজিত করতে যাচ্ছেন। ফলে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের ক্ষীণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় থাকছে। তবে মাত্র এক বছর আগের নির্বাচনের তুলনায় এবার তাদের ব্যবধান অর্ধেকেরও কম। এই বিশেষ নির্বাচনটি জাতীয় পর্যায়ে বড় নজর কাড়ে—বিশেষত ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে। রিপাবলিকান-প্রধান এলাকা হওয়া সত্ত্বেও, অনেক বিশ্লেষক এই ভোটকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের জনপ্রিয়তারও পরীক্ষা হিসেবে দেখেছিলেন। সিটটি যদি হারাত রিপাবলিকানরা, তবে সেটি হতো ট্রাম্পের জন্য বড় রাজনৈতিক ধাক্কা—এবং তার জনপ্রিয়তা হ্রাসের ইঙ্গিত। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা আসনটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, তবে ২০২৫ সালের নভেম্বরে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের দিনে পাওয়া ২২–পয়েন্ট ব্যবধান এবার অনেকটাই কমে এসেছে। আলাবামা থেকে কেনটাকি সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত টেনেসির ৭ম কংগ্রেশনাল জেলা গত ৪০ বছরে কোনো ডেমোক্র্যাট জয়ী হয়নি।
আসনটি শূন্য হয় যখন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মার্ক গ্রিন গত জুলাইয়ে ব্যক্তিখাতের কাজে যোগ দিতে পদত্যাগ করেন। দুই দলই এই নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীকে এগিয়ে নিতে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। শীর্ষ নেতারাও প্রচারে অংশ নেন—ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে কামালা হ্যারিস ও আল গোর, আর রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে স্পিকার মাইক জনসন।
ভ্যান এপস ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থান নেন, আর ট্রাম্পও তার জন্য ভার্চুয়াল সমাবেশ করেন। জয়ের পর ভ্যান এপস বলেন, “ট্রাম্প থেকে দূরে সরে গেলে হার, ট্রাম্পের সঙ্গে থাকলে জয়”— এই নির্বাচন তা প্রমাণ করেছে।
ট্রাম্পও সামাজিক মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, “র‌্যাডিক্যাল লেফট ডেমোক্র্যাটরা তাকে হারাতে কোটি কোটি ডলার ঢেলেছে।” ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বেন শুধুমাত্র ন্যাশভিলের ডেভিডসন কাউন্টিতে এগিয়ে ছিলেন। তবুও তিনি বলেন, “এই ফলাফলই বড় সূচনার ইঙ্গিত। ওয়াশিংটনের কেউ ভাবেনি আমরা এতটা কাছাকাছি যেতে পারব।” বেনের ক্যাম্পেইনের ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদ ইয়ান রাসেল বলেন, “এই আসন ধরে রাখতে রিপাবলিকানদের মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এটা তাদের জন্য খুবই খারাপ সংকেত।” কিছু রিপাবলিকানও ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একজন হাউস এইড বলেন, “ফলাফল খুব কাছাকাছি হয়ে গেছে।” আরেক সদস্য মন্তব্য করেন, “আমরা জিততে পারি যদি সবাই দলগতভাবে কাজ করি—এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বুদ্ধিমানের মতো চলেন। কিন্তু এর কোনোটাই নিশ্চিত নয়।” টেনেসি এখনো ট্রাম্পকেন্দ্রিক রাজ্য হিসেবে রয়ে গেছে—ট্রাম্প গত নির্বাচনে এখানে ৬৪% ভোট পেয়েছিলেন এবং আগের দুই নির্বাচনেও ৬০%–এর বেশি। নয় দফা ইরাক–আফগানিস্তান যুদ্ধ–অভিজ্ঞ ভ্যান এপস প্রাইমারি থেকে শুরু করে প্রচারণার প্রতিটি পর্যায়ে ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্যকে প্রধান অস্ত্র বানান।
অন্যদিকে বেন তার প্রচারণায় ব্যয়সঙ্কট, জীবনযাত্রার মান এবং স্থানীয় ইস্যুগুলোকে কেন্দ্র করেন। রিপাবলিকানরা আসনটি ধরে রাখলেও সংকুচিত ব্যবধান আগামী নির্বাচনে তাদের জন্য বড় সতর্কবার্তা হয়ে উঠেছে।