আমেরিকা

ট্রাম্পের চাপ উপেক্ষা করে ইন্ডিয়ানা রিপাবলিকানদের ভোটিং মানচিত্র বাতিল

ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর চাপ উপেক্ষা করে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য দলীয় স্বার্থে করা নতুন ভোটিং মানচিত্রের প্রস্তাব বাতিল করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম রক্ষণশীল এই অঙ্গরাজ্যে সিনেটে ২১ জন রিপাবলিকান সব ১০ জন ডেমোক্র্যাটের সঙ্গে ভোট দিয়ে বিলটিকে ৩১–১৯ ব্যবধানে ঠেকিয়ে দেন। প্রস্তাবটি এর আগে হাউসে পাস হয়েছিল। আইনসভায় অনুমোদন পেলে রিপাবলিকানরা ইন্ডিয়ানার ডেমোক্র্যাটদের দখলে থাকা দুইটি কংগ্রেসনাল আসন উল্টে দিতে পারত। ট্রাম্পের দলে সুবিধা এনে দিতে রাজ্যভিত্তিক মানচিত্র পুনর্নির্ধারণের আহ্বানের ফলে দেশজুড়ে গেরিম্যান্ডারিং বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন টেক্সাস এবং ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন ক্যালিফোর্নিয়া এ উদ্যোগের সামনের সারিতে রয়েছে। ইউটাহ, ওহাইও, নিউ হ্যাম্পশায়ার, মিসৌরি ও ইলিনয়ে ইতোমধ্যে মানচিত্র পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বা পাস হয়েছে। ভোটের আগেই রিপাবলিকান সিনেটর স্পেন্সার ডিয়ারি জানান, নির্বাচনের মাঝপথে গেরিম্যান্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান রক্ষণশীল মূল্যবোধ থেকেই এসেছে। তিনি বলেন, ফেডারেল সরকার যদি কোনো অঙ্গরাজ্যকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চায় তবে তিনি তা প্রতিহত করবেন। ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকান গভর্নর মাইক ব্রাউন ফলাফলে হতাশা প্রকাশ করে জানান, যারা “ইন্ডিয়ানার মানুষের স্বার্থ রক্ষা করছে না” তাদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মিলে ব্যবস্থা নেবেন। হোয়াইট হাউসের টানা কয়েক মাসের লবিংয়ের পরও এই আইনটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। ভোটের আগের দিন ট্রাম্প সতর্ক করেছিলেন, প্রস্তাবের বিরোধিতা করা রিপাবলিকানরা নিজেদের আসন হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন। তিনি রাজ্য সিনেটের রিপাবলিকান নেতা রডরিক ব্রেকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, “পুরো যুক্তরাষ্ট্রে একমাত্র তিনিই রিপাবলিকানদের অতিরিক্ত আসন অর্জনের বিরুদ্ধে।” ডেমোক্র্যাট ও লিবারেল কর্মীদের জন্য এটি ছিল বড় একটি জয়। ইন্ডিয়ানাপোলিসের কর্মী কিথ “ওয়াইল্ডস্টাইল” পাসকাল বলেন, রাজ্যসভায় সরাসরি এই মানচিত্র ঠেকাতে পারায় অনেকটাই স্বস্তি নেমে এসেছে। নতুন মানচিত্র ইন্ডিয়ানাপোলিসের কিছু এলাকা পুনর্গঠন করে রাজ্যের একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ কংগ্রেস সদস্য আন্দ্রে কারসনকে আসন হারানোর ঝুঁকিতে ফেলতে পারত। ভোটের আগে ট্রাম্প ইন্ডিয়ানার আইনপ্রণেতাদের হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকেও দু’বার ইন্ডিয়ানায় পাঠান সমর্থন জোগাড় করতে। প্রায় এক ডজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা জানান, এই ভোটকে কেন্দ্র করে তারা মৃত্যু-হুমকি ও ‘সোয়াটিং’ আক্রমণের শিকার হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মানচিত্র প্রস্তাবটি ব্যর্থ হওয়া ট্রাম্পের জন্য আরেকটি ধাক্কা, বিশেষত সাম্প্রতিক বিভিন্ন রাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের একাধিক বিজয়ের পর। রিপাবলিকানদের মধ্যে উদ্বেগও বাড়ছে। সাবেক হোয়াইট হাউস কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন বলেন, “আমাদের বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। রিডিস্ট্রিকটিং যুদ্ধে যদি আমরা অতিরিক্ত ১০টি আসন না পাই, তবে হাউস ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে।” ট্রাম্পের অনুরোধে টেক্সাস প্রথমেই মানচিত্র পুনঃনকশা শুরু করে। নিম্ন আদালত জাতিগত ভিত্তিতে মানচিত্র আঁকার অভিযোগে তা আটকে দিলেও সুপ্রিম কোর্ট টেক্সাস রিপাবলিকানদের এগিয়ে যেতে অনুমতি দেয়। নতুন মানচিত্রে সেখানে কমপক্ষে পাঁচটি আসন রিপাবলিকানদের পক্ষে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার মানচিত্রেও ডেমোক্র্যাটদের জন্য অতিরিক্ত পাঁচটি আসন যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।