বাংলাদেশ

একজন আইয়ুব বাচ্চু ও একটি অপ্রকাশিত ঘটনা!

২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার আড়াই বছর বয়সী ভাগিনা আয়ানকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে জরুরি ভিত্তিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। অপারেশনটা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। আয়ানকে বাঁচাতে হলে এই অপারেশনের কোন বিকল্প ছিলো না। কিন্তু সকাল নয়টা পর্যন্ত কারও কোন সাহায্য না পেয়ে হতাশ হয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেবকে অনুরোধ করলাম অপারেশন শুরু করার প্রস্তুতি নিতে এবং সংগৃহীত টাকা পেমেন্ট করে বকেয়া টাকার জন্য তিন ঘন্টা সময় নিলাম। আয়ানকে তখন জরুরি বিভাগ থেকে আনা হবে অপারেশন থিয়েটারে, তাই অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

ঠিক তখনই এক মহান ব্যক্তির আগমন ঘটলো সেখানে। এসেই তিনি আয়ানের অভিভাবককে খুঁজতে লাগলেন। আমরা তখন উনার সাথে কথা বললাম এবং খুবই অবাক হলাম তাকে দেখে। জানতে পারলাম তিনি ফেসবুকের পোস্টটা দেখে আয়ানকে দেখতে এসেছেন। উনি আয়ানকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।

জরুরি বিভাগ থেকে আয়ানকে অচেতন এবং অক্সিজেন মাস্ক পরানো অবস্থায় অপারেশন থিয়েটারের সামনে আনা হয়। ওই ভদ্রলোক আয়ানকে দেখে কাছে গেলেন এবং আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দুই তিনবার বললেন, “আয়ান বাবুটা, সোনামনিটা, আল্লাহ্ তোমাকে ভালো করে দিবেন, সুস্থ করে দিবেন।” এ কথাগুলো বলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলেন। তার কান্না দেখে আমরাও কেঁদে ফেললাম।

যাই হোক, কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়ানকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হলো। প্রায় চার ঘন্টা লাগলো অপারেশন শেষ হতে। আল্লাহর অশেষ রহমতে অপারেশন সফল হলো। ওই বিশেষ ব্যক্তিটি তখন জানালেন সম্পূর্ণ বকেয়া টাকা তিনি পরিশোধ করে দিয়েছেন, এবং অনুরোধ করলেন যে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা যাতে তার এই আর্থিক সহযোগিতার কথা কাউকে না বলি।

আজ তিনি জীবিত নেই। তাই নিজেকে কোনভাবেই আর আটকাতে পারলাম না, বলে ফেললাম। উনি আর কেউ নন, প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু! মহান আল্লাহ্ তাআলা এই মহামানবকে বেহেশত নসীব করুক। আমিন।


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি