বাংলাদেশ

সংলাপ শেষ, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করল আ.লীগ

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় দফায় আজ গণভবনে দীর্ঘ সময় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হলেও অচলাবস্থা নিরসন হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষ হয়েছে। বুধবার সকাল ১১টার কিছু সময় পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংলাপ শুরু হয়ে দুপুর ২টার পর পর্যন্ত চলে।

দ্বিতীয় দফার সংলাপে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ চার দফা দাবি উত্থাপন করেছে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গণভবনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

অন্য দাবিগুলো হলো- সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ১০ সদস্যের নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার।

আজকের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন ফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। এ ছাড়া প্রতিনিধি দলে রয়েছেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. ‌মোশাররফ হো‌সেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ‌মোস্তফা মহ‌সিন মন্টু, দলের কার্যকরী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত ‌চৌধু‌রী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দলের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।

অন্যদিকে, ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এ ছাড়া প্রতিনিধি দলে যারা রয়েছেন তারা হলেন- আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ন, স ম রেজাউল করিম, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন।

নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবি মানা হবে না :
বৈঠকের পর সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানের বাইরে কিছুই করার অবকাশ নেই। তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রস্তাব মেনে নিতে আপত্তি নেই। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কালীন সরকার গঠনের দাবি মানা হবে না।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হবে না। তবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা থাকতে পারে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবেন। তিনি দেশবাসীর সাথে প্রতারণা করবেন না। সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। কেউ বেশি সুযোগ থাকবে না।

এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর গত ১ নভেম্বর গণভবনে প্রথম দফায় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্টের ২০ জনের প্রতিনিধি দল ৭ দফা দাবি নিয়ে সংলাপে অংশ নেয়। আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা।

প্রথম দফা সংলাপের পর সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ঐক্যফ্রন্টের কয়েকটি দফা প্রায় মেনে নিয়েছেন। বাকিগুলো আদালত ও নির্বাচন কমিশনের বিষয়, সেখানে সরকারের কিছুই করার নেই।

কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট শুরু থেকেই বলে আসছে, সংলাপ থেকে কোনো সমাধান আসেনি। আর সেজন্যই তারা দ্বিতীয় দফায় বসতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন। প্রধানমন্ত্রীও সে আহ্বানে সাড়া দেন।

এদিকে, দ্বিতীয় দফা সংলাপের আগে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নানা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, দ্বিতীয় দফা সংলাপ ব্যর্থ হলে রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন।

এমনকি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি হিসেবে ৮ নভেম্বর রাজশাহী অভিমুখে রোড মার্চ করা এবং পরের দিন ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন তফসিল না পেছালে ইসি অভিমুখে পদযাত্রা করারও ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে এর আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জোর করে কিছু আদায় করা যাবে না। যা হবে সংবিধানের মধ্য থেকেই।

এদিকে, গত ১ নভেম্বর রাজনৈতিক জোট ও বিভিন্ন দলের সঙ্গে শুরু হওয়া সংলাপ শেষ হচ্ছে আজ। এ নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।

এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি