বাংলাদেশ

সিডরে নিখোঁজ শহিদুল বাড়ি ফিরলেন ১১ বছর পর!

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ হারায় অসংখ্য মানুষ। এদের মধ্যে অনেকে নিখোঁজ হয়। স্বজন হারানোর বেদনা আর সে রাতের তাণ্ডব এখনও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে দুঃসহ স্মৃতি। সেদিন অনেকে হারিয়েছেন পরিবারের সব থেকে নির্ভরযোগ্য মানুষটিকে। স্রোতে ভেসে গেছে অসংখ্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধ।

দীর্ঘ ১১ বছর পর ফিরে এসেছেন জেলে শহিদুল মোল্লা (বর্তমান বয়স ৪৮)। সরকারিভাবে নিখোঁজের তালিকায়ও তার নাম রয়েছে। পরিবারও তার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছে বহু আগে। কিন্ত গত ১২ নভেম্বর বিকেলে বাগেরহাটের শরণখোলার আমড়াগাছিয়া বাজারে পাগলবেশে ঘুরতে দেখে তাকে সনাক্ত করে পরিবারের লোকেরা। দীর্ঘ ১১ বছর পর হারানো স্বজনকে ফিরে পেয়ে তার পরিবারে ফিরে এসেছে পুরনো আনন্দ।

উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ফুলমিয়া মোল্লার ছেলে শহিদুল তার ছোট ভগ্নিপতি পান্না ফরাজীর নৌকায় পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ছাপড়াখালী এলাকায় মাছ ধরতে গিয়েছিল শহিদুল। ওই নৌকায় তার সঙ্গে ছিল আরও তিন জেলে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে আঘাতে তারা সবাই ভেসে যায়। তার বাবা ফুলমিয়া ছিলেন মৎস্য ব্যবসায়ী ইউনুচ শিকদারের নৌকায়। তারও কোনো খোঁজ মেলেনি আজও।

নিয়তি শহিদুলকে ফিরিয়ে দিলেও, সিডরের আঘাতে স্মরণ শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। এখন যা বলছে, একটু পর সেকথা আর মনে করতে পারছে না। সিডরে কোথায় ছিল, কি ঘটেছিল তাও বলতে পারছে না। তবুও তার অসংলগ্ন কথায় যা জানা গেল, ভারতের পাটগ্রাম নামক এলাকায় রশিদ খানের বাড়িতে থাকত। সেখানে গরু রাখা আর বাড়ির কাজবাজ করত। এর পর সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। সীমান্তে তাকে কেউ আটকায়নি। এসব তার ভারসাম্যহীন মনের কথা। সঠিক করে বলতে পারছে শুধু নিজের নামটাই।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে চার সন্তান নিয়ে দুর্বিসহ অবস্থায় পড়েন স্ত্রী মাসুমা বেগম। তিনি চার সন্তানের কথা ভেবে চার বছর আগে কাজের সন্ধানে চলে যান ভারতের বেঙ্গালোরে। অভাবের সংসারে অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে মেয়ে পুতুল (২০) ও মুকুলের (১৮)। মাসুম (১৭) হাফেজি পড়ছে। ছোট ছেলে মাসুদ (১১) সিডরের সময় তিন মাসের গর্ভে ছিলো তার। স্বামী ফিরে আসার খবর মোবাইলে শুনে খুশিতে আত্মহারা মাসুমা বেগম দু’একদিনের মধ্যেই ফিরে আসবেন বেঙ্গালোর থেকে।

এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি