বাংলাদেশ

ভোটে অনিয়মের প্রতিবেদন বিএনপি কার্যালয়ে জমা দিলেন ধানের শীষের ১২০ প্রার্থী

ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১২০ জন প্রার্থী নির্বাচনে ‘অনিয়মের’ তথ্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তারা নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মী গ্রেফতার, সহিংসতায় আহত, নিহত হয়েছেন তাদের তালিকা দিয়েছেন। একইসঙ্গে নির্বাচনের আগের রাতে এবং ভোটের দিন যেসব ভোট কেন্দ্রে  ‘অনিয়ম’ হয়েছে তার ভিডিও এবং  লিখিত বর্ণনাও দিয়েছেন প্রতিবেদনে। বিএনপির কার্যালয়ের  সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।   

গত ৩ জানুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত  একটি চিঠি দেওয়া হয় ধানের শীষের প্রার্থীদের। চিঠিতে প্রত্যেক প্রার্থীকে ৮টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচনের  ‘অনিয়মের’ তথ্য সাত দিনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রার্থীদের নিজের ও পরিবারের অবরুদ্ধ হয়ে পড়া কিংবা হামলায় আহত,  সহায় সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য ও ছবি,  নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় সংঘটিত অনিয়ম, ভোট জালিয়াতি, সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের তাণ্ডব এবং সন্ত্রাসের একটি সচিত্র প্রতিবেদন ইত্যাদি চাওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি ছিল প্রতিবেদন জমা দেওয়া শেষ দিন। বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত ১২০ জন প্রার্থী সেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন পর্যন্ত ১২০ জন প্রার্থী সেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। ডাক যোগে চিঠি পাঠানোর কারণে অনেক প্রার্থী দেরিতে চিঠি পেয়েছেন, এই কারণে সব প্রার্থী এখনও প্রতিবেদন জমা দেননি। আশা করি ১-২ দিনের মধ্যে সবাই  জমা দিয়ে দেবেন।

চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম। তিনি বলেন, আমরা গত ৮ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। লিখিত প্রতিবেদন এবং সিডি জমা দিয়েছি।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, সব প্রতিবেদন জমা হলে তার ওপর ভিত্তি করে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এছাড়া যেসব প্রার্থী ভিডিও চিত্র জমা দিচ্ছেন সেইগুলো একসঙ্গে করে একটি তথ্য চিত্র তৈরি করা হবে। এরপর এগুলো সংবাদ সম্মেলনে করে গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে। এরপর ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হবে। এছাড়া দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে জানানো হবে।

সূত্র আরও জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থী নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। মামলার সময় প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনের প্রতিবেদনের পাশাপাশি ভোটের সামগ্রিক চিত্র নিয়ে সব আসন নিয়ে তৈরি করা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও জমা দেবেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগে সব প্রতিবেদন জমা হোক। তারপর আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো এইগুলো কোন কাজে লাগাবো।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য একজন সদস্য বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ‘অনিয়মের’ ঘটনাগুলোর আংশিক অডিও ও ভিডিও গত ৬ জানুয়ারি ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এখন সব প্রার্থী প্রতিবেদন জমা দিলে আবার এই নিয়ে কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হবে।

প্রসঙ্গত: একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ২৮১ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ২৫৬ জন। বাকিরা ছিলেন শরিক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। এরমধ্যে ধানের শীষ নিয়ে ৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।

এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি