বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশে সর্বপ্রথম গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করেছিলেন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ওই সময় শুধু আমাদের দলের লোকদের হত্যা করা হয়েছিলো এমন নয়, বরং সেনাবাহিনীর অফিসার যারা একটা সময় জাতির পিতার ডাকে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলো তাদেরকেও একে একে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো ওই খুনি জিয়াউর রহমান।’
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫’র পর ১৯টা ক্যু-ই হয়েছে। সেনাবাহিনী-বিমানবাহিনীর শত শত অফিসারকে হত্যা করেছিলো। শুধু তাই নয়, সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সৈনিককে হত্যা করা হয়েছিলো। অনেকে হয়তো ছুটিতে থেকে জয়েন করেছে তাদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে হয়তো জানতেও পারেনি তাদের কেন হত্যা করা হচ্ছে, ডিফেন্ড করার সুযোগ দেয়া হয়নি; গুলি করে হত্যা করেছে-ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শোনা যেত জিয়াউর রহমান নাকি কাটা চামচ দিয়ে খেতে খেতেই মৃত্যুদন্ডের ফাইলে সই করতেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ওই সময় যারা কয়েদি ছিলো তারা বলতে পারবে এক-এক রাতে ৮ জন ১০ জন করে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি দিয়েছে। তাদের কান্নায় চিৎকারে আকাশ ভারি হয়ে উঠতো। আর এখন সেই বিএনপি গুম, খুনের কথা বলে!’
জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অনেক বিএনপি নেতা বলার চেষ্টা করেন বিএনপি তো তখন প্রতিষ্ঠাই হয়নি, কী করে বিএনপি খুনি হলো। কিন্তু বিএনপি যার হাতে জন্ম, সেই জিয়াই যখন খুনি এবং শুধু খুনিই নন, তিনিই ইনডেমনিটি জারি করে খুনিদের রক্ষা করেছিলেন এবং বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।’
বিএনপির জন্ম অবৈধ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের চরিত্রগুলোই তো খুনের, যেটা দেখা গেছে ২১ আগস্টে। জিয়ার ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাহলে তো বিএনপির জন্মই অবৈধ হয়ে যায়। যারা খুনিদের পুরস্কৃত করে, তারা খুনিদের দল হবে না কেন? এরা খুনির দল ছাড়া আর কী। তাদের জন্ম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে বিএনপি নেতারা নতুন সাফাই গাইতে শুরু করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান নিজেই খুনী। জিয়াউর রহমান শুধু খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল না, এই হত্যার বিচার হবে না সেই ব্যবস্থাও জিয়াউর রহমান করেছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল।
ডালিমসহ অন্যদের যখন বিদেশে পাঠানো হলো অনেক দেশ তাদের গ্রহণ করেনি। যেসব দেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সপক্ষে ছিল, তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কূটনীতিক হিসেবে মেনে নিতে নিতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল, তারাও পরবর্তীতে জিয়ার সঙ্গে গেছে। অনেকে এখনো বেঁচে আছে, বড় বড় কথাও বলে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারবালায় যেভাবে নির্মম হত্যাকান্ড চালানো হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেন কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ৩২ নম্বরে। আমরা দুইবোন ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে যাই। সেদিন শুধু একটা পরিবারকে হত্যা নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের ইতিহাস মুছে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে যার অবদান, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যত আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান তা মুছে দেয়া হয়েছিল। তখন একটি মাত্র টেলিভিশন ছিল-বিটিভি। সেই বিটিভিতেও একটি বারের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামটি আসেনি। একেবারে ইতিহাস থেকেই মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ১৫ আগস্টের খুনিদের মদদ দিয়েছে। যেভাবে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল সেভাবে খালেদা জিয়াও পুনর্বাসন করেছেন। এরশাদও খুনিদের মদদ দিয়েছে, পুরস্কৃত করেছে।’