বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন ক্ষমতাসীন দলের ছোটখাট নেতাদের ঘরে ঘরে অবৈধ টাকার খনি আবিস্কৃত হচ্ছে। চারদিকে লুটপাট করা টাকার উৎসবের কথা মানুষ জানছে। জুয়া, ক্যাসিনো, চাঁদাবাজী, লুট করে ঘরে ঘরে গড়ে তুলেছে টাকশাল, টাকার পাহাড়। এখন নিজেদের বিপদ আঁচ করতে পেরে আবোল তাবোল বকছে। কোনো লাভ হবে না। জনগণের প্রতিরোধের আওয়াজ সর্বত্র শোনা যাচ্ছে। পতন অনিবার্য। এখনো সময় আছে, সময় থাকতে সাবধান হোন, ব্লেম গেইম বন্ধ করুন, একটা তাহরির স্কয়ার হলে কেউ পাশে থাকবেনা। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, তাদের এতো টাকা হয়েছে যে টাকা লুকানোরও জায়গা পাচ্ছে না। কাজের লোকের বাড়িতেও কোটি কোটি টাকা সিন্দুকে ভরে লুকিয়ে রেখেছে। গতকালও একদিনে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের চার নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন নগদ ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, আট কেজি স্বর্ণালংকার ও ৬টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে। এই সরকারে লোকজন জুয়া-ক্যাসিনোতে ভাসিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। একটি মুসলিম প্রধান দেশকে নিষিদ্ধ জুয়া-ক্যাসিনোর দেশে পরিনত করা হয়েছে। এখন তাদের নেতা-এমপ-আমলারা ক্যাসিনোর পক্ষে প্রকাশ্যে সাফাই গাইছে। তারা সবকিছু হালাল করার চেস্টা করছেন। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি সবকিছু লোকদেখানো- আইওয়াশ মাত্র। তথাকথিত শুদ্ধি অভিযানের নামে ধরা হচ্ছে কাচকি মাছ। দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাটের গডফাদারাই এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে সবকিছু। তাদের ধরতে পারলে দেখা যাবে একেকজনের ভান্ডারে একেকটি টাকার ব্যাংক আছে। আপনারা অবগত আছেন, এই অভিযান শুরুর পর ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ, মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেবসহ সরকারের অনেক মন্ত্রী নেতা মজ্জাগত স্বভাববশত: সব কিছুর দায় চাপাচ্ছেন বিএনপির ওপর। নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপনোই যেন আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক অভ্যাস। এই কু-অভ্যাসের নীতি নিয়েই তারা এখন মিথ্যা অপপ্রচারের কোরাস গাইছে। ওরা নাৎসীদের মতো মনে করে মিথ্যাকে বারবার পূনরাবৃত্তি করলে সেটা কিছুটা সত্য বলে মানুষ মনে করে। এটি সম্পূর্ণরুপে ভুলধারণা ক্ষমতাসীনরা ভুল ধারণার উপর অপপ্রচারের অস্ত্র হাতে নিয়েছে। তবে সত্য সবসময় উন্মোচিত, কোন ঢাকনী দিয়ে তাকে ঢাকা যায়না।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের চিরাচরিত নীতি হচ্ছে তারা কোন বড় কেলেংকারী করে ধরা খাওয়ার পর যখন আর সামাল দিতে পারে না তখন তারা জনগনের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে দোষ চাপায় বিএনপির ওপর। তারা ফেঁসে গেলে সব দোষ বিএনপির। তারা একবার বলেন ক্যাসিনো নাকী চালু করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আবার কয়দিন পরে বলে না ক্যাসিনো চালু করেছেন মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, মোসাদ্দেক হোসেন ফালুরা। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল রাজশাহীতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ক্যাসিনো সংস্কৃতি বিএনপি আমলেই শুরু করা হয়েছে। মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, মোসাদ্দেক হোসেন ফালুরা এগুলো শুরু করেছিলেন। তখন ক্ষমতার শীর্ষপর্যায় এগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তথ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য আওয়ামী নেতামন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হয় তাদের ভিতরে বড় কোনো ঘাপলা রয়েছে, যে ঘাপলা এখনও উন্মোচিত হয়নি, সুতরাং আওয়ামী চুনোপুটিদের ধরে এখন সেটিকে আড়াল করা হচ্ছে আর সে জন্যই বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ নেত্রীবৃন্দ সম্পর্কে অপপ্রচার করা হচ্ছে। দূর্নীতি ও হরিলুটের কুৎসিত চেহারাগুলো বের হয়ে যাওয়াতে প্রধানমন্ত্রীর গোপাল ভাঁড় তথ্যমন্ত্রী অন্ধের প্রলাপ বকছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ যদি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর চেয়ে মিথ্যাচার বেশি করতে না পারে তাহলে তার মন্ত্রীত্ব থাকবে না। এজন্যই তিনি মিথ্যার শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে যাচ্ছেন।
রিজভী বলেন, আপনারা সরকারকে প্রশ্ন করুন ২০০৬ সাল থেকে বিএনপি ক্ষমতায় নেই, ক্যাসিনো যদি বিএনপি শুরু করে থাকে তাহলে ১৩ বছর সেটি চালু রাখলেন কেনো? বন্ধ করলেন না কেনো? হাছান মাহমুদ সাহেবও জানে এবং এদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ জানেন, কবে, কোথায়, কারা ক্যাসিনো সংস্কৃতি চালু করেছে। দেশবাসী, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ক্যাসিনো শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। মাত্র ৭/৮ দিন হলো তারা ক্যাসিনো শব্দটি শুনছে আওয়ামী লুটেরাদের কল্যাণে। কারা শতাধিক ক্যাসিনো চালিয়ে আসছেন। তাদের গডফাদার কারা। কারা নেপালীদের হায়ার করে ক্যাসিনো চালাতে এদেশে এনেছে। কারা ক্যাসিনো মেশিন আমদানী করেছে। এগুলোতো বিএনপি’র শাসনামলে শুনা যায়নি। তারাতো ক্ষমতায় এক যুগ, এই ১২ বছর কি বিএনপি ক্ষমতায় ছিল?
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেছেন জিয়াউর রহমানের আমল থেকে ক্যাসিনো চলছে, মির্জা আববাস ক্যাসিনো শুরু করেছে, হাওয়াভবনে ক্যাসিনো ছিল। কিন্তু সে সময়ের গণমাধ্যমে কোথাওতো একটি শব্দ পাওয়া যায়নি বিএনপি আমলে বিএনপি নেতারা ক্যাসিনোর সাথে যুক্ত ছিল। যখন মুখোশ খুলো গেছে তখন সেটি ঢাকতে তথ্যমন্ত্রীরা সভাবসুলবভাবে মানুষের মধ্যে বিরক্ত উদ্রেককারী ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। এটা সবাই জানে যে, মির্জা আব্বাস সাহেবই ঢাকাতে মেয়র থাকাকালীন ক্লাবগুলোতে জুয়া বন্ধ করেছেন। তবে ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ তিনি সাচ্চা কথাটি বলেছেন ‘মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই, আওয়ামী লীগের সময়ই ক্যাসিনো শুরু হয়েছে’। তাহলে আমাদের আর কি বলার আছে। তথ্যমন্ত্রীর এসব মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায়কে কালিমালিত্ব করার জন্য একটা ব্যার্থ প্রচেষ্টা করা। সেজন্যই বিএনপি নেত্রীবৃন্দের বিরুদ্ধে নিজের অপকর্মের দায় চাপাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় ক্যাসিনো সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে কলাবাগান ক্লাবের হাত ধরে প্রায় ৭/৮ বছর আগে। যুবলীগের কয়েকজন নেতার নিয়ন্ত্রনে হয়েছে এই সংস্কৃতি। আর ২২ সেপ্টেম্বর কয়েকটি পত্রিকার অনুসন্ধানমূলক খবরে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জুয়াড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় ক্যাসিনোর বিস্তার ঘটান নেপালি নাগরিক দীনেশ ও রাজকুমার। একজন প্রাবশালী যুবলীগ নেতা তত্ত্বাবধানে এরা একের পর এক ক্যাসিনো খুলে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে তারা তাদের দেশে পাচার করেন।আর যুবলীগ নেতারা দেশে -বিদেশে গড়েন টাকার পাহাড়।২০১৫ সালে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো খোলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ এ ব্যবসা শুরু করেন নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ ও রাজকুমার। তাদের এদেশে নিয়ে আসেন যুবলীগের এক শীর্ষ জুয়াড়ী।’
রিজভী বলেন, আমরা ক্ষমতাসীন মিথ্যাবাদী রাখালদের বলতে চাই, এখন থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে তাই প্রলাপ বকছেন। এসব বন্ধ করুন। বাংলাদেশের মানুষকে কি বোকা ভাবেন? শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবেনা।আপনাদের কথা অনুয়ায়ী যদি ক্যাসিনো-জুয়া বিএনপির সময়ে শুরু হয়ে থাকে তবে তো আপনারা ক্ষমতায় ১২ বছর, আপনারা কেন এই অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসাকে এতদিন ধরলেন না? বাড়িতে বস্তা বস্তা টাকার ভাগ গেলে কেন ধরেননি? যদি বিএনপির সময় এই ধরনের ক্যাসিনো ব্যবসা থাকত, তাহলে ১/১১ সরকারের সময়ে ধরা পড়ত। শতাধিক ক্যাসিনো চলছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা উড়ছে অবৈধভাবে। বিভিন্ন শহরে কিংবা রাজধানীতে এসব জুয়া,ক্যাসিনো কি রাতারাতি হয়েছে? প্রশাসন কি জানতো না? অনির্বাচিত এমপিরা কি জানতো না? চট্রগ্রামের এক হুইপতো ১৮০ কোটি টাকা আয় করেছে ক্যাসিনো থেকে। এগুলো কি প্রশাসন জানতো না? হোম মিনিস্ট্রি জানতোনা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানতেন না? জানতেন না প্রধানমন্ত্রী? সবাই জানতেন।এখন ধরা পড়ার পর লজ্জা শরমও পাচ্ছেন না তারা। তারা চাঁদাবাজি করে অবৈধ ক্যাসিনো আর অনৈতিক কাজে মগ্ন থেকেছেন এতোদিন। নিজেদের পকেট আর ব্যাংক ব্যালেন্সের উন্নয়ন করে ফুলে ফেঁপে একেকজন টাকার পাহাড় বানাচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা আইন প্রয়োগ করবে সেই পুলিশ এখন সরকারী দলের পান্ডা হিসাবে কাজ করছে। তাদের গডফাদারদের কেনো ধরা হচ্ছে না? রাঘব বোয়ালদের হাতে নিশ্চয়ই জাতীয় বাজেটের সমান টাকা রয়েছে।
ভেজা গামছা যেমন পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে এবং চিপে চিপে পানিশূন্য করা হয়, বাংলাদেশটাকে ঠিক সেরকম করেই সম্পদ শূন্য করছে এই গণ-ধিকৃত জবরদখলকারী সরকার!
বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, মান-সম্ভ্রম, এমনকি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত ওদের হাতে নিরাপদ নয়। তাছাড়াও প্রশ্নপত্র ফাস, পরিক্ষা না দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫ জনকে ভর্তি, জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি, সিট বানিজ্য ও ভর্তি বানিজ্যের মাধ্যমে জাতিকে বিকলঙ্গ করেছে এই অবৈধ শাসকঘোষ্ঠি।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে মিথ্যাচার করে জনগণ এসব ভালোভাবে নেয়না। হাসাহাসি করে। বিএনপি গত একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নেই, অতএব সবকিছুতেই বিএনপিকে টেনে এনে নিজেদের দেউলিয়াত্বের প্রমান দেয়া আওয়ামী লীগের জন্য কতটা শোভন? প্রশাসন আর আদালতের ঘাড় বন্দুক রেখে একদশক ধরে ক্ষমতায় আছেন বটে তবে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটাই সাফল্য নয় কারণ হিটলারও প্রবল প্রতাপের সঙ্গে একদশক ক্ষমতায় ছিল কিন্তু হিটলার নামটি সারা বিশ্বে একটি নিষিদ্ধ নাম। দুর্নীতিবাজ হিসেবে যাদেরকে ধরা হচ্ছে, তারা বিএনপি কিংবা অন্য দলের লোক এই বলেও একধরণের লজ্জা আছে, একটি ব্যর্থতা আছে এটিও কি আওয়ামী লীগ বুঝতে পারেনা? আওয়ামী লীগে অন্যদলের লোক চিহ্নিত করতে একদশক লেগেছে? তবে অপ্রিয় হলেও সত্য, আসলেই আওয়ামী লীগ এখন আর আওয়ামী লীগ নেই। দলটি এখন তাদের রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে সুবিধাবাদী, দুর্নীতিবাজ, জুয়াড়ী ও চাপাবাজদের চক্রে পরিণত হয়েছে।
রিজভী বলেন, একদশক বিএনপি ক্ষমতায় নেই, তাই মানুষ বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে চায়না। ২০১৬ সালে জুয়াখেলা বন্ধের দাবিতে সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী একটি রিট মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাবসহ দেশের ১৩টি নামিদামি ক্লাবে সব ধরনের জুয়াখেলার ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ক্লাবগুলোয় এ ধরনের জুয়াখেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং জুয়াখেলার আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালকসহ ১২ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিলো হাইকোর্ট। এরপর এতো বছরেও কেনো এটির নিষ্পত্তি হলোনা? জনগণ এসব প্রশ্নের জবাব জানতে চায়।
ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, তাদের এতো টাকা হয়েছে যে টাকা লুকানোরও জায়গা পাচ্ছে না। কাজের লোকের বাড়িতেও কোটি কোটি টাকা সিন্দুকে ভরে লুকিয়ে রেখেছে। গতকালও একদিনে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের চার নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন নগদ ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, আট কেজি স্বর্ণালংকার ও ৬টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে। এই সরকারে লোকজন জুয়া-ক্যাসিনোতে ভাসিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। একটি মুসলিম প্রধান দেশকে নিষিদ্ধ জুয়া-ক্যাসিনোর দেশে পরিনত করা হয়েছে। এখন তাদের নেতা-এমপ-আমলারা ক্যাসিনোর পক্ষে প্রকাশ্যে সাফাই গাইছে। তারা সবকিছু হালাল করার চেস্টা করছেন। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি সবকিছু লোকদেখানো- আইওয়াশ মাত্র। তথাকথিত শুদ্ধি অভিযানের নামে ধরা হচ্ছে কাচকি মাছ। দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাটের গডফাদারাই এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে সবকিছু। তাদের ধরতে পারলে দেখা যাবে একেকজনের ভান্ডারে একেকটি টাকার ব্যাংক আছে। আপনারা অবগত আছেন, এই অভিযান শুরুর পর ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ, মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেবসহ সরকারের অনেক মন্ত্রী নেতা মজ্জাগত স্বভাববশত: সব কিছুর দায় চাপাচ্ছেন বিএনপির ওপর। নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপনোই যেন আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক অভ্যাস। এই কু-অভ্যাসের নীতি নিয়েই তারা এখন মিথ্যা অপপ্রচারের কোরাস গাইছে। ওরা নাৎসীদের মতো মনে করে মিথ্যাকে বারবার পূনরাবৃত্তি করলে সেটা কিছুটা সত্য বলে মানুষ মনে করে। এটি সম্পূর্ণরুপে ভুলধারণা ক্ষমতাসীনরা ভুল ধারণার উপর অপপ্রচারের অস্ত্র হাতে নিয়েছে। তবে সত্য সবসময় উন্মোচিত, কোন ঢাকনী দিয়ে তাকে ঢাকা যায়না।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের চিরাচরিত নীতি হচ্ছে তারা কোন বড় কেলেংকারী করে ধরা খাওয়ার পর যখন আর সামাল দিতে পারে না তখন তারা জনগনের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে দোষ চাপায় বিএনপির ওপর। তারা ফেঁসে গেলে সব দোষ বিএনপির। তারা একবার বলেন ক্যাসিনো নাকী চালু করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আবার কয়দিন পরে বলে না ক্যাসিনো চালু করেছেন মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, মোসাদ্দেক হোসেন ফালুরা। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল রাজশাহীতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ক্যাসিনো সংস্কৃতি বিএনপি আমলেই শুরু করা হয়েছে। মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, মোসাদ্দেক হোসেন ফালুরা এগুলো শুরু করেছিলেন। তখন ক্ষমতার শীর্ষপর্যায় এগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তথ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য আওয়ামী নেতামন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে মনে হয় তাদের ভিতরে বড় কোনো ঘাপলা রয়েছে, যে ঘাপলা এখনও উন্মোচিত হয়নি, সুতরাং আওয়ামী চুনোপুটিদের ধরে এখন সেটিকে আড়াল করা হচ্ছে আর সে জন্যই বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ নেত্রীবৃন্দ সম্পর্কে অপপ্রচার করা হচ্ছে। দূর্নীতি ও হরিলুটের কুৎসিত চেহারাগুলো বের হয়ে যাওয়াতে প্রধানমন্ত্রীর গোপাল ভাঁড় তথ্যমন্ত্রী অন্ধের প্রলাপ বকছেন। তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ যদি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর চেয়ে মিথ্যাচার বেশি করতে না পারে তাহলে তার মন্ত্রীত্ব থাকবে না। এজন্যই তিনি মিথ্যার শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে যাচ্ছেন।
রিজভী বলেন, আপনারা সরকারকে প্রশ্ন করুন ২০০৬ সাল থেকে বিএনপি ক্ষমতায় নেই, ক্যাসিনো যদি বিএনপি শুরু করে থাকে তাহলে ১৩ বছর সেটি চালু রাখলেন কেনো? বন্ধ করলেন না কেনো? হাছান মাহমুদ সাহেবও জানে এবং এদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ জানেন, কবে, কোথায়, কারা ক্যাসিনো সংস্কৃতি চালু করেছে। দেশবাসী, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ক্যাসিনো শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। মাত্র ৭/৮ দিন হলো তারা ক্যাসিনো শব্দটি শুনছে আওয়ামী লুটেরাদের কল্যাণে। কারা শতাধিক ক্যাসিনো চালিয়ে আসছেন। তাদের গডফাদার কারা। কারা নেপালীদের হায়ার করে ক্যাসিনো চালাতে এদেশে এনেছে। কারা ক্যাসিনো মেশিন আমদানী করেছে। এগুলোতো বিএনপি’র শাসনামলে শুনা যায়নি। তারাতো ক্ষমতায় এক যুগ, এই ১২ বছর কি বিএনপি ক্ষমতায় ছিল?
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেছেন জিয়াউর রহমানের আমল থেকে ক্যাসিনো চলছে, মির্জা আববাস ক্যাসিনো শুরু করেছে, হাওয়াভবনে ক্যাসিনো ছিল। কিন্তু সে সময়ের গণমাধ্যমে কোথাওতো একটি শব্দ পাওয়া যায়নি বিএনপি আমলে বিএনপি নেতারা ক্যাসিনোর সাথে যুক্ত ছিল। যখন মুখোশ খুলো গেছে তখন সেটি ঢাকতে তথ্যমন্ত্রীরা সভাবসুলবভাবে মানুষের মধ্যে বিরক্ত উদ্রেককারী ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। এটা সবাই জানে যে, মির্জা আব্বাস সাহেবই ঢাকাতে মেয়র থাকাকালীন ক্লাবগুলোতে জুয়া বন্ধ করেছেন। তবে ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ তিনি সাচ্চা কথাটি বলেছেন ‘মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই, আওয়ামী লীগের সময়ই ক্যাসিনো শুরু হয়েছে’। তাহলে আমাদের আর কি বলার আছে। তথ্যমন্ত্রীর এসব মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায়কে কালিমালিত্ব করার জন্য একটা ব্যার্থ প্রচেষ্টা করা। সেজন্যই বিএনপি নেত্রীবৃন্দের বিরুদ্ধে নিজের অপকর্মের দায় চাপাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় ক্যাসিনো সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে কলাবাগান ক্লাবের হাত ধরে প্রায় ৭/৮ বছর আগে। যুবলীগের কয়েকজন নেতার নিয়ন্ত্রনে হয়েছে এই সংস্কৃতি। আর ২২ সেপ্টেম্বর কয়েকটি পত্রিকার অনুসন্ধানমূলক খবরে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জুয়াড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় ক্যাসিনোর বিস্তার ঘটান নেপালি নাগরিক দীনেশ ও রাজকুমার। একজন প্রাবশালী যুবলীগ নেতা তত্ত্বাবধানে এরা একের পর এক ক্যাসিনো খুলে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে তারা তাদের দেশে পাচার করেন।আর যুবলীগ নেতারা দেশে -বিদেশে গড়েন টাকার পাহাড়।২০১৫ সালে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো খোলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ এ ব্যবসা শুরু করেন নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ ও রাজকুমার। তাদের এদেশে নিয়ে আসেন যুবলীগের এক শীর্ষ জুয়াড়ী।’
রিজভী বলেন, আমরা ক্ষমতাসীন মিথ্যাবাদী রাখালদের বলতে চাই, এখন থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে তাই প্রলাপ বকছেন। এসব বন্ধ করুন। বাংলাদেশের মানুষকে কি বোকা ভাবেন? শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবেনা।আপনাদের কথা অনুয়ায়ী যদি ক্যাসিনো-জুয়া বিএনপির সময়ে শুরু হয়ে থাকে তবে তো আপনারা ক্ষমতায় ১২ বছর, আপনারা কেন এই অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসাকে এতদিন ধরলেন না? বাড়িতে বস্তা বস্তা টাকার ভাগ গেলে কেন ধরেননি? যদি বিএনপির সময় এই ধরনের ক্যাসিনো ব্যবসা থাকত, তাহলে ১/১১ সরকারের সময়ে ধরা পড়ত। শতাধিক ক্যাসিনো চলছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা উড়ছে অবৈধভাবে। বিভিন্ন শহরে কিংবা রাজধানীতে এসব জুয়া,ক্যাসিনো কি রাতারাতি হয়েছে? প্রশাসন কি জানতো না? অনির্বাচিত এমপিরা কি জানতো না? চট্রগ্রামের এক হুইপতো ১৮০ কোটি টাকা আয় করেছে ক্যাসিনো থেকে। এগুলো কি প্রশাসন জানতো না? হোম মিনিস্ট্রি জানতোনা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানতেন না? জানতেন না প্রধানমন্ত্রী? সবাই জানতেন।এখন ধরা পড়ার পর লজ্জা শরমও পাচ্ছেন না তারা। তারা চাঁদাবাজি করে অবৈধ ক্যাসিনো আর অনৈতিক কাজে মগ্ন থেকেছেন এতোদিন। নিজেদের পকেট আর ব্যাংক ব্যালেন্সের উন্নয়ন করে ফুলে ফেঁপে একেকজন টাকার পাহাড় বানাচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা আইন প্রয়োগ করবে সেই পুলিশ এখন সরকারী দলের পান্ডা হিসাবে কাজ করছে। তাদের গডফাদারদের কেনো ধরা হচ্ছে না? রাঘব বোয়ালদের হাতে নিশ্চয়ই জাতীয় বাজেটের সমান টাকা রয়েছে।
ভেজা গামছা যেমন পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে এবং চিপে চিপে পানিশূন্য করা হয়, বাংলাদেশটাকে ঠিক সেরকম করেই সম্পদ শূন্য করছে এই গণ-ধিকৃত জবরদখলকারী সরকার!
বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, মান-সম্ভ্রম, এমনকি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত ওদের হাতে নিরাপদ নয়। তাছাড়াও প্রশ্নপত্র ফাস, পরিক্ষা না দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫ জনকে ভর্তি, জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি, সিট বানিজ্য ও ভর্তি বানিজ্যের মাধ্যমে জাতিকে বিকলঙ্গ করেছে এই অবৈধ শাসকঘোষ্ঠি।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে মিথ্যাচার করে জনগণ এসব ভালোভাবে নেয়না। হাসাহাসি করে। বিএনপি গত একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নেই, অতএব সবকিছুতেই বিএনপিকে টেনে এনে নিজেদের দেউলিয়াত্বের প্রমান দেয়া আওয়ামী লীগের জন্য কতটা শোভন? প্রশাসন আর আদালতের ঘাড় বন্দুক রেখে একদশক ধরে ক্ষমতায় আছেন বটে তবে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটাই সাফল্য নয় কারণ হিটলারও প্রবল প্রতাপের সঙ্গে একদশক ক্ষমতায় ছিল কিন্তু হিটলার নামটি সারা বিশ্বে একটি নিষিদ্ধ নাম। দুর্নীতিবাজ হিসেবে যাদেরকে ধরা হচ্ছে, তারা বিএনপি কিংবা অন্য দলের লোক এই বলেও একধরণের লজ্জা আছে, একটি ব্যর্থতা আছে এটিও কি আওয়ামী লীগ বুঝতে পারেনা? আওয়ামী লীগে অন্যদলের লোক চিহ্নিত করতে একদশক লেগেছে? তবে অপ্রিয় হলেও সত্য, আসলেই আওয়ামী লীগ এখন আর আওয়ামী লীগ নেই। দলটি এখন তাদের রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে সুবিধাবাদী, দুর্নীতিবাজ, জুয়াড়ী ও চাপাবাজদের চক্রে পরিণত হয়েছে।
রিজভী বলেন, একদশক বিএনপি ক্ষমতায় নেই, তাই মানুষ বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে চায়না। ২০১৬ সালে জুয়াখেলা বন্ধের দাবিতে সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী একটি রিট মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাবসহ দেশের ১৩টি নামিদামি ক্লাবে সব ধরনের জুয়াখেলার ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ক্লাবগুলোয় এ ধরনের জুয়াখেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং জুয়াখেলার আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালকসহ ১২ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিলো হাইকোর্ট। এরপর এতো বছরেও কেনো এটির নিষ্পত্তি হলোনা? জনগণ এসব প্রশ্নের জবাব জানতে চায়।