বাংলাদেশ

হবিগঞ্জে আ.লীগ নেতা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজবা উদ্দিন ভূঁইয়া এবং তার ভাই কাকাইলছেও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নূরুল হক ভূঁইয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট উপজেলার চার জন মুক্তিযোদ্ধা এই অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযুক্ত অন্যরা হলেন—ওই উপজেলার শরীফনগর গ্রামের আলী রেজা (৭০) ও বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর (বিথঙ্গল) গ্রামের ছিদ্দিক মিয়া (৭২)।

তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ ’৭০-এর নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আজমিরীগঞ্জে নৌকা থেকে নামতে না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মেঘনা রিভার ফোর্সের কমান্ডার তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা মো. ফজলুর রহমান চৌধুরী জানান, ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক ভূঁইয়া, তার ভাই মিজবা উদ্দিন ভূঁইয়া ও রাজাকার কমান্ডার আলী রেজাকে আটক করে তিনি কাকাইলছেও-এ একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ সময় আসামিরা মালামাল লুটপাটের কথা স্বীকার করেছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন স্থানে লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনীর হয়ে কাজ করেছে।

অভিযোগকারী আজমিরীগঞ্জের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন জানান, তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা নূরুল হক ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাস কাকাইলছেও ইউনিয়নের দাপুটে চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি পদাধিকারবলে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তার ভাই বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজবা উদ্দিন ভূঁইয়া ভাইয়ের সহযোগী ছিলেন। অভিযুক্তরাসহ কয়েকজন বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল গ্রামে হাজী ইউনুছ মিয়ার বাড়িতে হামলা করেন। এ সময় তারা ইউনুছ মিয়ার ছেলে আদম আলী ও ওয়াহাব মিয়া তালুকদারকে খুন করে হাজী ইউনুছ মিয়া ও হাজী সুলতান মিয়া তালুকদারের বাড়ি থেকে লাখ লাখ টাকার মালামাল লুট করেন। যাওয়ার সময় তারা বাড়িগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন। এটি দিন-দুপুরে গ্রামের মানুষের সামনে ঘটেছিল।

মুক্তিযুদ্ধকালীন দাস পার্টির সদস্য যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে ইউপি নির্বাচনে লড়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন নূরুল হক ভূঁইয়া। তিনি পদাধিকারবলে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার হওয়া সত্ত্বেও তাকে মারিনি। তার মায়ের কান্নায় বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তিনি ও তার ভাই মিজবাউদ্দিন ভূঁইয়া আমাকেই এলাকাছাড়া করেছেন। কারণ এখন তাদের অনেক সম্পদ আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় লুটপাট করে তারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

অভিযুক্ত মিজবা উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, সব অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগকারীরা বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল গ্রামের বাসিন্দা যুদ্ধাপরাধ মামলায় কারান্তরীণ মধু মিয়ার মুক্তির দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণসহ ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। একজন হিন্দু মেয়ে মামলা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তাকে তিনি তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন। তাকে আমরা গিয়ে উদ্ধার করেছি। তিনি বলেন, ‘মূলত আমরা তার বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী। ইতোমধ্যে সাক্ষী দিয়েছি। আমাদের সাক্ষী দিতে নিষেধ করেছিল। তারা মূলত মধু মিয়ার কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।’

অভিযুক্ত নূরুল হক ভূঁইয়া জানান, এগুলো ভুয়া অভিযোগ। আমাদের এলাকায় দ্বন্দ্ব আছে। এলাকাগত দ্বন্দ্বের কারণেই মূলত এই অভিযোগ দিয়েছে।

এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/এন