বাংলাদেশ

সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ি যেন ‘ভোরের টর্চার’ সেল

সিলেট নগরীর হার্ট ‘সিটি পয়েন্ট’ এর একপাশে পুলিশ সুপারের কার্যালয়। অপর পাশে কুদরত উল্লাহ মার্কেট ও মসজিদের মাঝে টিন শেডের মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ি।

ফাঁড়িটি পুলিশের ‘ভোরের টর্চার’ সেল বলে অনেকেই না জানলেও আশপাশের লোকজনের নিকট বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। প্রায়ই শেষ রাত থেকে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত শুনা যায় ঐ ফাঁড়ির ভেতর মানুষের আর্তচিৎকার।

ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদেরও মূল টার্গেট- ভোরের যাত্রী, পর্যটক, মাজারে আসা দম্পতি। ফাঁড়িতে নিয়ে নিরীহদের আটকিয়ে পিটিয়ে বা মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়। অনেক সময় বাবার সামনে মেয়েকে বিব্রত করতেও দেখা যায়।

মঙ্গলবার বিকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন অভিযোগ করেন বন্দরবাজারের কয়েকজন যানবাহন চালক।

তারা বলেন, এসব ঘটনা বেশির ভাগ ঘটে ভোরে। আর ভুক্তভোগীরা বেশিরভাগ জেলার বাইরের হওয়ায় তা প্রকাশ হয় না। অনেকে আবার ভয়ে চুপ থাকেন। তবে গত রবিবার ঐ ফাঁড়িতে ‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হান আহমদ নামে এক যুবক মারা যাওয়ার পর অনেকেই বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। বেরিয়ে আসছে নানা অজানা তথ্য।

পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন কুদরত উল্লাহ রেস্ট হাউজের বর্ডার ব্যবসায়ী হাসান জানালেন, ঘটনার দিন ভোর রাতে ঐ ফাঁড়ির ভিতর থেকে আসা আর্তচিৎকার শুনে খুবই বিচলিত হন তিনি।

ফাঁড়িটির ইনচার্জ অভিযুক্ত এসআই আকবরের তাণ্ডব সম্পর্কে ফাঁড়ির অদূরে লাল বাজারের মৎস্যজীবীরাও বিস্তর অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেট জেলার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রায়হান আহমদ হত্যাকাণ্ডের পর বন্দর বাজার ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের অপকর্মের বিষয়টি সামনে আসে। ফাঁড়ির প্রতি নজরদারী না থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যেরও আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তা না হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বেশ কয়েকদিন আগে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে দস্তারবন্দী সম্মেলনে অংশ নিতে আসা কয়েকজন মাদ্রাসাছাত্র চৌহাট্টার রেস্তোরাঁয় চা পান করছিলেন। এসময় হঠাৎ দুই পুলিশ সদস্য মাদ্রাসার এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে সিএনজিতে তুলে নেয়। তাদের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে নিয়ে ঐ ছাত্রকে এক নারীর সঙ্গে ছবি তুলে পুলিশ। পুলিশ তখন বলে, যদি তুমি টাকা আনাতে পার তাহলে ছেড়ে দেব, না হয় পত্রিকায় ছবি ছাপা হবে। ছাত্রটি বাড়িতে মায়ের কাছে কল দিয়ে ১০ হাজার টাকা দিতে বললে ফাঁড়ির এসআইর মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে ৮ হাজার টাকা পাঠানো হয়।

পরে ছাত্রকে ছেড়ে দিলে সে স্থানীয় একটি সংবাদপত্র অফিসে এসে কান্নাকাটি করে বিষয়টি জানায়। তখন কোতোয়ালী থানার তৎকালীন ওসি আসাদুজ্জামানকে বিষয়টি জানানো হলে পরে ঐ পুলিশ ৮ হাজার টাকা ফেরত দেন ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এমন অনেক অভিযোগ এই বন্দর বাজার ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে।

এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার জানান, রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রায়হান নিহতের বিষয়টি তদন্ত করছেন।
-ইত্তেফাক

এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/এন