ফেনীতে আওয়ামী লীগের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী ও স্বতন্ত্র এমপি রহিম উল্লাহর সমর্থকদের
মধ্যে বিরোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বাড়ছে অস্ত্রের মহড়া। শনিবার রাতে বিপুল অস্ত্রসহ
যুবলীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতাকর্মীর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের ঘটনা এ পরিস্থিতির ‘নির্দেশক’ বলেই
মনে করছে স্থানীয়রা। মূলত সশস্ত্র মহড়া চালাতে গিয়েই নিজাম হাজারীর সমর্থকরা র্যাবের কাছে
ধরা পড়ে যায়। তবে নিজাম হাজারী এ ঘটনাকে অভিহিত করেছেন ‘র্যাবের সাজানো নাটক’ হিসেবে।
রাজনীতিসচেতন স্থানীয় বাসিন্দারা ফেনীতে ফের ‘সহিংস পরিস্থিতির’ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আতঙ্ক
রয়েছে চারদিকে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এসব আশঙ্কা নাকচ করে কালের কণ্ঠকে
বলেন, ‘একসময় ফেনীতে অনেক লাশ পড়ত। বর্তমান সরকারের আমলে সেটা নেই। আশঙ্কা তৈরির
প্রশ্নই ওঠে না। তবে নানাজন নানাভাবে আশঙ্কার কথা বলতেই পারেন। দলের একজন নেতা মারা
গেছেন, সেই কারণে দলীয় সিদ্ধান্তে আজিজ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে
বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গেছেন। সেখান থেকে ফেরার পথে র্যাব গাড়ি তল্লাশি করে কিছু অস্ত্র উদ্ধার
করেছে, যা নেতাদের নামে লাইসেন্সকৃত। র্যাব যে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেছে তার বেশির ভাগ অস্ত্রের
লাইসেন্স আছে। বাকি অস্ত্রগুলো র্যাব সদস্যরা কোত্থেকে পেয়েছেন, তাঁরাই (র্যাব) জানেন।’
র্যাব কেন অবৈধ অস্ত্র দিয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফাঁসিয়ে দেবে?- এমন প্রশ্নের জবাবে
নিজাম হাজারী বলেন, ‘এটা র্যাব জানে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়
র্যাব এ ধরনের ঘটনা সাজানোর কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই বিষয়টি আমি
প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করব। আমি এখন ঢাকার পথে রয়েছি। রবিবার রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহোদয়
এবং দুই-এক দিনের মধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ে অবহিত করব।’
নিজাম হাজারী প্রশ্ন তোলেন, ‘যুবলীগ-ছাত্রলীগ অবৈধ অস্ত্র এবং দা-কিরিচ নিয়ে কেন প্রতিবাদ
সমাবেশ করতে যাবে? তারা তো মারামারি করতে যায়নি। এ ছাড়া অস্ত্রগুলো আটকের পর যখন
র্যাবকে এগুলো বৈধ অস্ত্র বলে জানানো হয়েছে, তখন তারা অস্ত্রগুলো ক্যাম্পে নিয়ে লাইসেন্স দেখে
পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু র্যাব পরে অস্ত্রের লাইসেন্স দেখতে চায়নি।’ গত ৩১ মে যুবলীগকর্মী
আজিজুল হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে দুই এমপির বিরোধ কাজ করেছে এবং আগামী দিনেও এর জের
ধরে নানা ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। গত বছরের ২০ মে ফুলগাজী উপজেলা
চেয়ারম্যান একরামকে ফেনী জেলা সদরে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই নিয়ে সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি
হয়েছিল। একরাম হত্যা ঘটনার পর ফেনীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে
অনেকের মত।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক অস্বীকার করে নিজাম হাজারী বলেন, ‘আমি ফেনীর ভালো
চাই। শান্তি চাই। রহিম উল্লাহর সঙ্গে আমার কোনোকালেই বিরোধ ছিল না। এখনো নেই। ভবিষ্যতেও
থাকবে না।’ এ বিরোধ সম্পর্কে জানতে একাধিকবার ফোন করা হয় স্বতন্ত্র আসনের এমপি রহিম
উল্লাহকে। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ৩১ মে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা সদর ইউনিয়নের
সোনাপুর বাজারে যুবলীগকর্মী আজিজুল হক সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান। নিহত আজিজুল ফেনী
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর
অনুসারী ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডে ফেনী-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রহিম উল্লাহকে দায়ী করে
ফেনী সদরের একটি রেস্তোরাঁয় শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজাম হাজারীর অনুসারীরা।
এরপর বিকেলে সোনাগাজীতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে সশস্ত্র কর্মীরা এমপি রহিম
উল্লাহর বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেয়। যদিও রহিম উল্লাহ তখন এলাকায় ছিলেন না। ফেনীর
পরিস্থিতি সম্পর্কে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একরাম
মার্ডারের মতো বীভৎস হত্যাকাণ্ডর পুনরাবৃত্তি হতো কি না জানি না। তবে শনিবার বড় ধরনের
অঘটন ঘটতে পারত।’
এমপি নিজাম হাজারীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন বলেন, ‘র্যাব
ঘটনা সাজাবে কেন? র্যাবের কাছে গোপন তথ্য ছিল গাড়িতে অবৈধ অস্ত্র আছে। এ কারণে র্যাব
সদস্যরা গাড়ি তল্লাশি করে অস্ত্র উদ্ধার করেছেন। অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে বৈধ অস্ত্র রাখা যায় না। এ ছাড়া
যাদের কাছে অস্ত্রগুলো পাওয়া গেছে তারা অস্ত্রের মালিক নয়। প্রকৃত মালিক ছাড়া বৈধ অস্ত্র অন্য
কারো হাতে রাখার সুযোগ নেই।’
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, শনিবার রাতের বহরে ১০টি গাড়ি ছিল। সেখান থেকে মাত্র তিনটি গাড়ি
তল্লাশি করেছে র্যাব। অন্য সাতটি গাড়ি তল্লাশি করেনি। সেগুলোতে আওয়ামী লীগের উপজেলা
পর্যায়ের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। তাঁদের গ্রেপ্তার না করে কৌশলে পালানোর সুযোগ
দেওয়া হয়েছে বলে অনেকের মত।
কারাগারে ২৬ : অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারকৃত যুবলীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর
আদেশ দিয়েছেন ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী। ফেনী মডেল থানার
উপপরিদর্শক আজিজ আহমদ আসামিদের আদালতে সোপর্দ করেন। আসামিদের কারাগারে
পাঠানোর আদেশের পাশাপাশি আগামী ২৯ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
শনিবার রাত ৮টায় ফেনীর লালপুল এলাকায় তিনটি মাইক্রোবাস তল্লাশি করে র্যাব পাঁচটি শটগান,
পাঁচটি পিস্তল, ১৬টি রামদাসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা যুবলীগ-ছাত্রলীগের
নেতাকর্মী। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন র্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার মো.
ইব্রাহীম।
গতকাল কারাগারে পাঠানো আসামিদের মধ্যে রয়েছেন এনামুল করিম ওরফে রাজীব, সালেহ
আহম্মেদ ওরফে মিন্টু মেম্বার, মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে রিপন, মো. শাহাদত হোসেন, মো.
আশরাফুল ইসলাম ওরফে মাসুম, মো. ওমর ফারুক, মো. রবিউল ইসলাম ওরফে মানিক, মো.
শাহাদত হোসেন, আবু তাহের, মো. একরামুল হক ওরফে সিফাত, মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে
শুভ, মো. ইমরান হোসেন, আ. রহমান ওরফে রিন্টু, আরাফাত হোসেন ওরফে আসিফ, মো.
নোমান, মাহবুবুর রহমান ওরফে জেমী, মো. হাসান, মো. রবিউল হক ওরফে লিটন, আবু ইউসুফ
ওরফে ডলার, মইনুদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মো. সরোয়ার হোসেন, আবুল কাশেম ওরফে বেসু, মো.
ফরিদ, মো. ফারুক হোসেন, মো. কফিল উদ্দিন ওরফে সোহেল। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে
শনিবার রাতেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যারিকেড দেয়। এ
পরিস্থিতিতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
আটক অস্ত্রের মালিক যারা : জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও দাগনভূঁঞা উপজেলা চেয়ারম্যান
দিদারুল কবির রতন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, র্যাবের জব্দ করা অস্ত্রগুলো আওয়ামী লীগ ও
যুবলীগ নেতাদের নামে লাইসেন্সকৃত। সেখানে তাঁর অস্ত্রও রয়েছে। এ ছাড়া দাগনভূঁঞা উপজেলা
ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন মামুন, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার
চৌধুরী সোহেল, দাগনভূঁঞা পৌর মেয়র ওমর ফারুক খান, জালস্কর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর
রশিদ মিলন ওরফে পিএস মিলন, যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী খোকন হাজারীর নামে লাইসেন্সকৃত
অস্ত্র আছে।
মধ্যে বিরোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বাড়ছে অস্ত্রের মহড়া। শনিবার রাতে বিপুল অস্ত্রসহ
যুবলীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতাকর্মীর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের ঘটনা এ পরিস্থিতির ‘নির্দেশক’ বলেই
মনে করছে স্থানীয়রা। মূলত সশস্ত্র মহড়া চালাতে গিয়েই নিজাম হাজারীর সমর্থকরা র্যাবের কাছে
ধরা পড়ে যায়। তবে নিজাম হাজারী এ ঘটনাকে অভিহিত করেছেন ‘র্যাবের সাজানো নাটক’ হিসেবে।
রাজনীতিসচেতন স্থানীয় বাসিন্দারা ফেনীতে ফের ‘সহিংস পরিস্থিতির’ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আতঙ্ক
রয়েছে চারদিকে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এসব আশঙ্কা নাকচ করে কালের কণ্ঠকে
বলেন, ‘একসময় ফেনীতে অনেক লাশ পড়ত। বর্তমান সরকারের আমলে সেটা নেই। আশঙ্কা তৈরির
প্রশ্নই ওঠে না। তবে নানাজন নানাভাবে আশঙ্কার কথা বলতেই পারেন। দলের একজন নেতা মারা
গেছেন, সেই কারণে দলীয় সিদ্ধান্তে আজিজ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে
বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গেছেন। সেখান থেকে ফেরার পথে র্যাব গাড়ি তল্লাশি করে কিছু অস্ত্র উদ্ধার
করেছে, যা নেতাদের নামে লাইসেন্সকৃত। র্যাব যে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেছে তার বেশির ভাগ অস্ত্রের
লাইসেন্স আছে। বাকি অস্ত্রগুলো র্যাব সদস্যরা কোত্থেকে পেয়েছেন, তাঁরাই (র্যাব) জানেন।’
র্যাব কেন অবৈধ অস্ত্র দিয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফাঁসিয়ে দেবে?- এমন প্রশ্নের জবাবে
নিজাম হাজারী বলেন, ‘এটা র্যাব জানে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়
র্যাব এ ধরনের ঘটনা সাজানোর কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই বিষয়টি আমি
প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করব। আমি এখন ঢাকার পথে রয়েছি। রবিবার রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহোদয়
এবং দুই-এক দিনের মধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ে অবহিত করব।’
নিজাম হাজারী প্রশ্ন তোলেন, ‘যুবলীগ-ছাত্রলীগ অবৈধ অস্ত্র এবং দা-কিরিচ নিয়ে কেন প্রতিবাদ
সমাবেশ করতে যাবে? তারা তো মারামারি করতে যায়নি। এ ছাড়া অস্ত্রগুলো আটকের পর যখন
র্যাবকে এগুলো বৈধ অস্ত্র বলে জানানো হয়েছে, তখন তারা অস্ত্রগুলো ক্যাম্পে নিয়ে লাইসেন্স দেখে
পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু র্যাব পরে অস্ত্রের লাইসেন্স দেখতে চায়নি।’ গত ৩১ মে যুবলীগকর্মী
আজিজুল হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে দুই এমপির বিরোধ কাজ করেছে এবং আগামী দিনেও এর জের
ধরে নানা ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। গত বছরের ২০ মে ফুলগাজী উপজেলা
চেয়ারম্যান একরামকে ফেনী জেলা সদরে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই নিয়ে সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি
হয়েছিল। একরাম হত্যা ঘটনার পর ফেনীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে
অনেকের মত।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক অস্বীকার করে নিজাম হাজারী বলেন, ‘আমি ফেনীর ভালো
চাই। শান্তি চাই। রহিম উল্লাহর সঙ্গে আমার কোনোকালেই বিরোধ ছিল না। এখনো নেই। ভবিষ্যতেও
থাকবে না।’ এ বিরোধ সম্পর্কে জানতে একাধিকবার ফোন করা হয় স্বতন্ত্র আসনের এমপি রহিম
উল্লাহকে। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ৩১ মে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা সদর ইউনিয়নের
সোনাপুর বাজারে যুবলীগকর্মী আজিজুল হক সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান। নিহত আজিজুল ফেনী
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর
অনুসারী ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডে ফেনী-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রহিম উল্লাহকে দায়ী করে
ফেনী সদরের একটি রেস্তোরাঁয় শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজাম হাজারীর অনুসারীরা।
এরপর বিকেলে সোনাগাজীতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে সশস্ত্র কর্মীরা এমপি রহিম
উল্লাহর বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেয়। যদিও রহিম উল্লাহ তখন এলাকায় ছিলেন না। ফেনীর
পরিস্থিতি সম্পর্কে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একরাম
মার্ডারের মতো বীভৎস হত্যাকাণ্ডর পুনরাবৃত্তি হতো কি না জানি না। তবে শনিবার বড় ধরনের
অঘটন ঘটতে পারত।’
এমপি নিজাম হাজারীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লে. কর্নেল মিফতা উদ্দিন বলেন, ‘র্যাব
ঘটনা সাজাবে কেন? র্যাবের কাছে গোপন তথ্য ছিল গাড়িতে অবৈধ অস্ত্র আছে। এ কারণে র্যাব
সদস্যরা গাড়ি তল্লাশি করে অস্ত্র উদ্ধার করেছেন। অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে বৈধ অস্ত্র রাখা যায় না। এ ছাড়া
যাদের কাছে অস্ত্রগুলো পাওয়া গেছে তারা অস্ত্রের মালিক নয়। প্রকৃত মালিক ছাড়া বৈধ অস্ত্র অন্য
কারো হাতে রাখার সুযোগ নেই।’
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, শনিবার রাতের বহরে ১০টি গাড়ি ছিল। সেখান থেকে মাত্র তিনটি গাড়ি
তল্লাশি করেছে র্যাব। অন্য সাতটি গাড়ি তল্লাশি করেনি। সেগুলোতে আওয়ামী লীগের উপজেলা
পর্যায়ের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। তাঁদের গ্রেপ্তার না করে কৌশলে পালানোর সুযোগ
দেওয়া হয়েছে বলে অনেকের মত।
কারাগারে ২৬ : অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারকৃত যুবলীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর
আদেশ দিয়েছেন ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী। ফেনী মডেল থানার
উপপরিদর্শক আজিজ আহমদ আসামিদের আদালতে সোপর্দ করেন। আসামিদের কারাগারে
পাঠানোর আদেশের পাশাপাশি আগামী ২৯ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
শনিবার রাত ৮টায় ফেনীর লালপুল এলাকায় তিনটি মাইক্রোবাস তল্লাশি করে র্যাব পাঁচটি শটগান,
পাঁচটি পিস্তল, ১৬টি রামদাসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা যুবলীগ-ছাত্রলীগের
নেতাকর্মী। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন র্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার মো.
ইব্রাহীম।
গতকাল কারাগারে পাঠানো আসামিদের মধ্যে রয়েছেন এনামুল করিম ওরফে রাজীব, সালেহ
আহম্মেদ ওরফে মিন্টু মেম্বার, মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে রিপন, মো. শাহাদত হোসেন, মো.
আশরাফুল ইসলাম ওরফে মাসুম, মো. ওমর ফারুক, মো. রবিউল ইসলাম ওরফে মানিক, মো.
শাহাদত হোসেন, আবু তাহের, মো. একরামুল হক ওরফে সিফাত, মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে
শুভ, মো. ইমরান হোসেন, আ. রহমান ওরফে রিন্টু, আরাফাত হোসেন ওরফে আসিফ, মো.
নোমান, মাহবুবুর রহমান ওরফে জেমী, মো. হাসান, মো. রবিউল হক ওরফে লিটন, আবু ইউসুফ
ওরফে ডলার, মইনুদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মো. সরোয়ার হোসেন, আবুল কাশেম ওরফে বেসু, মো.
ফরিদ, মো. ফারুক হোসেন, মো. কফিল উদ্দিন ওরফে সোহেল। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে
শনিবার রাতেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যারিকেড দেয়। এ
পরিস্থিতিতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
আটক অস্ত্রের মালিক যারা : জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও দাগনভূঁঞা উপজেলা চেয়ারম্যান
দিদারুল কবির রতন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, র্যাবের জব্দ করা অস্ত্রগুলো আওয়ামী লীগ ও
যুবলীগ নেতাদের নামে লাইসেন্সকৃত। সেখানে তাঁর অস্ত্রও রয়েছে। এ ছাড়া দাগনভূঁঞা উপজেলা
ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন মামুন, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার
চৌধুরী সোহেল, দাগনভূঁঞা পৌর মেয়র ওমর ফারুক খান, জালস্কর ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর
রশিদ মিলন ওরফে পিএস মিলন, যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী খোকন হাজারীর নামে লাইসেন্সকৃত
অস্ত্র আছে।