বাংলাদেশ

বাংলাদেশে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের বিনিয়োগ কম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে প্রচার-প্রচারণার ঝড় তোলা

হয়েছিল। সারা ঢাকা শহর মোদির পোস্টারে সয়লাব হয়ে যায়। ইংরেজিতে যেটিকে বলে চঁনষরপরঃু

নষরঃু, ঠিক সেটিই করা হয় ঢাকা তথা বাংলাদেশে। টেলিভিশন এবং পত্রপত্রিকাগুলোয় মোদিকে

নিয়ে হুলুস্থুল শুরু হয়। তার সফরের আগে এবং সফর কালে সমস্বর ঐক্যতানে বলা হয় ‘বাংলা

ভারত সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা হলো’, ‘নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হলো’, ‘মোদির সফর একটি

মাইলফলক’, এবং ‘এটি একটি ঐতিহাসিক সফর’। কীভাবে এটি মাইলফলক হলো? কীভাবে নতুন

দিগন্ত, নতুন যুগ এবং ইতিহাসের সৃষ্টি হলো? এই সফরে বাংলাদেশ ভারত থেকে কি পেল? এবং

ভারতকে কি দিল? মোদির সফর শেষ হয়েছে। এখন সময় হয়েছে এই সফরের একটি নিরপেক্ষ,

নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ পোস্টমর্টেমের।ভারতকে কি দিল বাংলাদেশ?আজ ২০১৫ সালে নয়, সেই ভারত

বিভাগের পর থেকেই অর্থাৎ বিগত ৬৭ বছর ধরে ভারত তৎকালীন পাকিস্তান এবং বর্তমান

বাংলাদেশের নিকট থেকে তিনটি সুবিধা চেয়ে আসছে। এগুলো হলো (১) চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর

ব্যবহারের সুবিধা (২) ভারতের এক অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতেরই অপর অঞ্চলে

স্থল, নৌ ও রেলপথে যাতায়াতের সুবিধা। এটিকে তারা বলে  ট্রানজিট। হাল আমলে বলা হচ্ছে

কানেকটিভিটি। কিন্তু আসলে এটি কোরিডোর সুবিধা। (৩) সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের নামে ভারতের

অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বিচ্ছিন্নতা দমনে বাংলাদেশের সহযোগিতা। এবার ভারত তার তিনটি দাবিই

আদায় করতে সমর্থ হয়েছে। বিগত ৬৭ বছর ধরে ভারত যেটি আদায় করতে পারেনি ২০১৫ সালের

৬ ও ৭ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেটি আদায় করলেন। বিনিময়ে বাংলাদেশকে তার কিছুই দিতে

হয়নি। তাই নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে যে, নরেন্দ্র মোদি এবার বাংলাদেশ জয় করেছেন। ৬৭ বছর

পর সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অধিকারভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান হয়। তখন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে

(বর্তমান বাংলাদেশ) কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। এজন্য পাকিস্তান সরকার ছয় মাসের জন্য

কলকাতা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি চায় ভারত সরকারের নিকট। পাকিস্তান সরকার আরো বলে যে,

এই ছয় মাস সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে একটি বন্দর নির্মাণ করা হবে। তখন ভারত সরকারের তরফ

থেকে বলা হয় যে, ছয় মাস কেন, ছয় ঘন্টার জন্যও পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে কলকাতা

বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ও

মংলাবন্দর ব্যবহার করার অনুমতি চেয়ে আসছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থে এ

পর্যন্ত তাকে এই অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু এবার মোদি বাংলাদেশে আসার আগেই এই অধিকার

পেয়ে গেছেন। গত বুধবার ‘ইরাবতী স্টার’ নামে ভারতের একটি ট্রান্সশিপমেন্ট জাহাজ ২৫০টি

কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। বৃহস্পতিবার তারা ৯২টি কন্টেনার খালাস করে বন্দর ত্যাগ

করে। এখন আরেকটি ভারতীয় জাহাজ আসবে এবং মাল বোঝাই ঐ কন্টেনারগুলো ভারতের

চেন্নাই, কোচিন ও নভোসেবা বন্দরে নিয়ে যাবে। সেদিন ভারত ছয় ঘন্টার জন্যও কলকাতা বন্দর

ব্যবহার করতে দেয়নি। ভারত কাজটা কি ঠিক করেছিল? যদি ঠিক করে থাকে তাহলে আজ

বাংলাদেশ ভারতকে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দিচ্ছে কেন?ইরাবতী জাহাজটি হলদিয়া

বন্দরে যেতে পারলেও নিয়ম অনুযায়ী চেন্নাই, কোচিন ও নভোসেবা বন্দরে যেতে পারবে না। তাই

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ৯২টি কন্টেনারকে ট্রানশিপমেন্টের আওতায় অন্য একটি জাহাজে করে

পণ্যগুলো সেখানে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এক দেশের পণ্য আরেক দেশ ব্যবহার করে

তৃতীয় দেশে নেয়ার নাম ট্রানশিপমেন্ট। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের বিভিন্ন বন্দরে

পণ্য নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলে আসছিল দুই দেশেই। সম্প্রতি ভারতের লোকসভায়

স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ার সময়ও ভারতের একাধিক এমপি ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে

ট্রানজিটের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছিলেন। এর আগে

চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে সরাসরি পণ্য আনা-নেয়া হলেও অন্য দেশ থেকে পণ্য

নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতে যাওয়ার নজির এটাই প্রথম। ধারণা করা হচ্ছে, মোদির

সফরকে সামনে রেখেই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্যের ট্রানশিপমেন্ট করার সুযোগ

দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয়, মংলাবন্দরও ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছে

ভারত।৪০ বছর পর কানেকটিভিটির নামে ট্রানজিট তথা করিডোরআগরতলা থেকে বাংলাদেশর

ওপর দিয়ে কলকাতা এবং কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আগরতলায় যাতায়াতের বাস

সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এটিও তো ভারতের স্বার্থেই করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা শিলং-গুয়াহাটি

বাস সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। এটিও ভারতের স্বার্থেই করা হয়েছে। খুলনা-মংলা এবং

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। সেটিও ভারতের স্বার্থেই করা হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারত এক এক সময় এক এক নামে করিডোর চেয়ে আসছে।

কোনো সময় ট্রানজিট, কোনো সময় কানেকটিভিটি। এবার স্থল ট্রানজিটের সাথে তারা উপকূলীয়

জাহাজ চলাচলেরও অধিকার পেয়েছে। আসলে স্থল ট্রানজিট তাদেরকে ৪ বছর আগেই দেয়া হয়েছে।

আখাউড়া থেকে আগরতলা হয়ে ত্রিপুরার পালাটোনা নামক স্থানে ১৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন

ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারত বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করেছে। ভারতকে

এই সুবিধা দেয়ার জন্য তিস্তা নদীকে দ্বিখ-িতও করা হয়েছে।এটি যদি কানেকটিভিটিই হবে তাহলে

শুধুমাত্র ভারতের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে কেন, বাংলাদেশ তো ভারতের পূর্ব ভূখ- দিয়ে

মিয়ানমার ও গণচীন, উত্তরের ভূখ- দিয়ে নেপাল ও ভুটান এবং পশ্চিমের ভূখ- দিয়ে পাকিস্তান,

আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় যেতে চায়। সেই ব্যবস্থা এবার দুই প্রধানমন্ত্রী করেননি।নিরাপত্তা

সহযোগিতাভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ঐ দেশের ৯টি রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী তথা স্বাধীনতা

আন্দোলন শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই সব আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নেয়। ৯টি রাজ্য হলো,

পাঞ্জাব, কাশ্মীর, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও অরুণাচল। পাঞ্জাব ও

কাশ্মীর ছাড়া অবশিষ্ট ৭টি প্রদেশ বাংলাদেশের উল্টর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এসব রাজ্যের

বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর

আওয়ামী লীগ সরকার এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে ভারতকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে।

আঞ্চলিক এবং এশীয় পরাশক্তি হওয়ার পথে উল্টর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রাম ছিল ভারতের

সামনে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। ভারতের ৬০ বছরের এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধানে দারুণ ভূমিকা

রেখেছে আওয়ামী সরকার। বাংলাদেশের সক্রিয় হস্তক্ষেপে পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রাম

অনেকটা দমিত এবং স্তিমিত। এই নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন

নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনা। এটিতেও একতরফাভাবে লাভবান হবে ভারত। কারণ বাংলাদেশে

কোনো বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলন নেই। সন্তু লারমা যেটা করেছিলেন সেটিও ভারতেরই মদদে।

বাংলাদেশে মাঝে মাঝে যেসব জঙ্গির কথা শোনা যায়, প্রশাসনিক শক্তির কাছে দাঁড়াবার কোনো

ক্ষমতা তাদেও নেই।অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাভারতের ৬৭ বছরের আশা পূরণ হয়েছে। উপরি পাওনা

হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশ আরো যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

(১) ভারতীয় ব্যাবসায়ী কোম্পানিগুলোর জন্য একাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হবে।

এজন্য তাদেরকে ৬০০ একর বা ১৮০০ বিঘা জমি দেয়া হবে।(২) ভারতের রাষ্ট্রীয় বীমা প্রতিষ্ঠানকে

বাংলাদেশে ব্যাবসা করার সুযোগ দেয়া হবে। (৩) উল্টর-পূর্ব ভারতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ দেয়া

হবে। (৪) ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হবে, যে সেতু দিয়ে সহজে ভারতে যাওয়া যাবে।

বিনিময়ে বাংলাদেশ কি পেল?বাংলাদেশ ভারতকে নিঃশেষে সব উজাড় করে দিয়েছে। বিনিময়ে কিছুই

পায়নি বাংলাদেশ। কারণ, (১) যে স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে এত শোরগোল তোলা হয়েছে সেটি তো ৪১

বছর আগেই আমাদের পাওনা ছিল। ৪১ বছর পর তারা আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিল। শুধু

বাংলাদেশই কি কয়েকটি ছিটমহল পেয়েছে? ভারত কি পায়নি?(২) সমুদ্রবন্দর এবং ট্রানজিট ছিল

বাংলাদেশের ট্রাম্পকার্ড। সেখানে তিস্তার পানি না পেয়েই বাংলাদেশ সেই ট্রাম্পকার্ডটি খুইয়েছে। এখন

শুনতে হচ্ছে শুধু কথার ফুলঝুরি। ৪০ বছর ধরে সেগুলো শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে।

(৩) ভারত বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই

ঋণ ব্যবহার করা হবে ভারতের স্বার্থে। এই ঋণের টাকা দিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ভারী

যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাস্তা নির্মাণ করা হবে। মজার ব্যাপার হলো এই যে, এই ২০০ কোটি

ডলারের মধ্যে ৭৫ শতাংশ খরচ করতে হবে ভারত থেকে নির্মাণসামগ্রী এবং পরিষেবা আমদানিতে।

আরো মজার ব্যাপার হলো এই যে, এই ২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগের ফলে ৫০ হাজার ভারতীয়

নাগরিকের চাকরির সংস্থান হবে।  এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০১১ সালে ভারত ১০০

কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেখান থেকে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতু

নির্মাণের জন্য অনুদান হিসেবে রূপান্তর করা হয়। অবশিষ্ট ৮০ কোটি ডলার এখনো নাকি পাওয়া

যায়নি। ভারতীয় সাহায্য : একটি চাঞ্চল্যকর তথ্যবাংলা ভারত বন্ধুত্ব নিয়ে ভারতপ্রেমী মহলটি

অষ্টপ্রহর তার স্বরে চীৎকার করেন। ভারত বিশ্ববাজার থেকে বছরে ৪৫ হাজার কোটি ডলারের

পণ্যসামগ্রী আমদানি করে থাকে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারত কত টাকার পণ্য আমদানি করে,

সেটা কি জানেন? বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে আমদানি করে মাত্র ৪৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪৫ কোটি

ডলারের পণ্যসামগ্রী। ভারতের আমদাীতে বাংলাদেশের অংশ ১ শতাংশও নয়। বাংলাদেশের অংশ ১

শতাংশের ১০ ভাগের ১ ভাগ। সকলেই জানেন যে, বাংলাদেশের শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির

জন্য সবচেয়ে বেশিী প্রয়োজন প্রত্যক্ষ বিদেশিী বিনিয়োগ বা এফডিআই (ফরেন ডাইরেক্ট

ইনভেস্টমেন্ট)। বাংলা ভারত বন্ধুত্বের জন্য ভারত প্রেমীরা জান কোরবান করেন। তারা কি জানেন

যে, বাংলাদেশে ভারতের এফডিআই পাকিস্তানের এফডিআই এর চেয়েও কম? ২০১৪ সালে

বাংলাদেশে পাকিস্তানের এফডিআই ছিল ১৩০.৭৪ মিলিয়ন ডলার। সেখানে ভারতের বিনিয়োগ ছিল

প্রায় তার অর্ধেক, অর্থাৎ ৭৪.৫৪ মিলিয়ন ডলার। (সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংক)সকলে এটাও জানেন যে,

অশুল্ক বাধা অপসারিত হলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বেড়ে যেত। ভারতের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ

থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও অশুল্ক প্রাচীর দূর করা বা হ্রাস করা হয়নি। অর্থ ঃ বার্লিন

প্রাচীর সমাচারস্থলসীমান্ত চুক্তিকে নরেন্দ্র মোদি বার্লিন প্রাচীরের পতনের সাথে তুলনা করেছেন। তা

তিনি করতেই পারেন। তাই বলে আমরাও কি সেই কথায় তার সাথে নাচব? বার্লিন প্রাচীরের পতনের

ফলে দুই জার্মানি অর্থাৎ দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র এক হয়ে গেছে। আমরাও কি তাই হব? এটি দুই বাংলার

এক হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত কি না, কে জানে। কে কার মাঝে মিশে যাবে? দুই বাংলা এক হয়ে কি

বৃহত্তর বঙ্গ হিসেবে ভারতের শোভাবর্দ্ধন করবে? নাকি পশ্চিমবঙ্গ ভারত থেকে বেরিয়ে এসে

বাংলাদেশের সাথে একাকার হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বৃহত্তর বঙ্গ গঠন করবে? ১৯৪৭ সালে প-িত নেহ্রু

দুই বাংলার এক হওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এবার কি নরেন্দ্র মোদি সেটি

অ্যালাও করবেন?তবে অভিজ্ঞ মহল বলেন যে, বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার মধ্যকার বার্লিন প্রাচীরের

যদি পতন হয়ে থাকে তাহলে সীমান্তে মাইলের পর মাইল কাঁটাতারের বেড়া দাঁড়িয়ে আছে কেন? এই

বেড়া আর যাই হোক, বন্ধুত্বের পরিচায়ক নয়। বিএনপির রহস্যময় নীরবতা১৯৯৬ সালে আওয়ামী

লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা ভারতকে ট্রানজিট তথা করিডোর দেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে

পড়ে। এই ট্রানজিটের বিরুদ্ধে তখন সারা দেশ সোচ্চার হয়ে ওঠে। লাখ লাখ প্রতিবাদী কণ্ঠের নেতৃত্ব

দেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি একাধিকবার ঘোষণা করেন, বুকের রক্ত দেব, তবুও ট্রানজিট দেব

না। বিএনপির স্লোগান ছিল, জান দেব, তবুও ট্রানজিট দেব না। সারাদেশের সগর্জন প্রতিবাদের মুখে

তৎকালীন সরকার ট্রানজিট প্রদান থেকে পিঠটান দেয়। এবার কিছুই না পেয়েও বাংলাদেশ ট্রানজিট

এবং সমুদ্রবন্দরসহ সবকিছু ভারতকে উজাড় করে দিল। অথচ তারপরও বিএনপি একেবারে ঠোঁট

সেলাই করে বসে আছে। নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা করার জন্য বিএনপি অস্থির ছিল। তার সাথে

দেখা করার জন্য কি বিএনপি তার দলীয় নীতি এবং অবস্থান বিসর্জন দেবে? ইদানিং ধর্মনিরপেক্ষতার

ব্যাপারেও বিএনপি সুবিধাবাদী অবস্থানে চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। বিএনপি কি তাহলে নীতি ও

আদর্শের রাজনীতি ব্যাক বার্নারে রেখে শুধু ক্ষমতার রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকবে? তাহলে আর

আওয়ামী লীগের সাথে তার পার্থক্য রইল কোথায়? বিএনপি যদি ভারত এবং সেক্যুলারিজম প্রশ্নে

‘ধরি মাছ না ছুই পানি’ করতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে বিএনপিকে নিয়ে নতুন করে

ভাবতে হবে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে প্রচার-প্রচারণার ঝড়

তোলা হয়েছিল। সারা ঢাকা শহর মোদির পোস্টারে সয়লাব হয়ে যায়। ইংরেজিতে যেটিকে বলে

চঁনষরপরঃু নষরঃু, ঠিক সেটিই করা হয় ঢাকা তথা বাংলাদেশে। টেলিভিশন এবং

পত্রপত্রিকাগুলোয় মোদিকে নিয়ে হুলুস্থুল শুরু হয়। তার সফরের আগে এবং সফর কালে সমস্বর

ঐক্যতানে বলা হয় ‘বাংলা ভারত সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা হলো’, ‘নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হলো’,

‘মোদির সফর একটি মাইলফলক’, এবং ‘এটি একটি ঐতিহাসিক সফর’। কীভাবে এটি মাইলফলক

হলো? কীভাবে নতুন দিগন্ত, নতুন যুগ এবং ইতিহাসের সৃষ্টি হলো? এই সফরে বাংলাদেশ ভারত

থেকে কি পেল? এবং ভারতকে কি দিল? মোদির সফর শেষ হয়েছে। এখন সময় হয়েছে এই

সফরের একটি নিরপেক্ষ, নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ পোস্টমর্টেমের।ভারতকে কি দিল বাংলাদেশ?আজ

২০১৫ সালে নয়, সেই ভারত বিভাগের পর থেকেই অর্থাৎ বিগত ৬৭ বছর ধরে ভারত তৎকালীন

পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশের নিকট থেকে তিনটি সুবিধা চেয়ে আসছে। এগুলো হলো (১)

চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের সুবিধা (২) ভারতের এক অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে

ভারতেরই অপর অঞ্চলে স্থল, নৌ ও রেলপথে যাতায়াতের সুবিধা। এটিকে তারা বলে  ট্রানজিট। হাল

আমলে বলা হচ্ছে কানেকটিভিটি। কিন্তু আসলে এটি কোরিডোর সুবিধা। (৩) সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ

দমনের নামে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বিচ্ছিন্নতা দমনে বাংলাদেশের সহযোগিতা। এবার

ভারত তার তিনটি দাবিই আদায় করতে সমর্থ হয়েছে। বিগত ৬৭ বছর ধরে ভারত যেটি আদায়

করতে পারেনি ২০১৫ সালের ৬ ও ৭ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেটি আদায় করলেন। বিনিময়ে

বাংলাদেশকে তার কিছুই দিতে হয়নি। তাই নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে যে, নরেন্দ্র মোদি এবার

বাংলাদেশ জয় করেছেন। ৬৭ বছর পর সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অধিকারভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান

হয়। তখন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। এজন্য পাকিস্তান

সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি চায় ভারত সরকারের নিকট। পাকিস্তান

সরকার আরো বলে যে, এই ছয় মাস সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে একটি বন্দর নির্মাণ করা হবে। তখন

ভারত সরকারের তরফ থেকে বলা হয় যে, ছয় মাস কেন, ছয় ঘন্টার জন্যও পূর্ব পাকিস্তান তথা

বাংলাদেশকে কলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই

ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ও মংলাবন্দর ব্যবহার করার অনুমতি চেয়ে আসছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও

নিরাপত্তার স্বার্থে এ পর্যন্ত তাকে এই অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু এবার মোদি বাংলাদেশে আসার

আগেই এই অধিকার পেয়ে গেছেন। গত বুধবার ‘ইরাবতী স্টার’ নামে ভারতের একটি ট্রান্সশিপমেন্ট

জাহাজ ২৫০টি কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। বৃহস্পতিবার তারা ৯২টি কন্টেনার খালাস করে

বন্দর ত্যাগ করে। এখন আরেকটি ভারতীয় জাহাজ আসবে এবং মাল বোঝাই ঐ কন্টেনারগুলো

ভারতের চেন্নাই, কোচিন ও নভোসেবা বন্দরে নিয়ে যাবে। সেদিন ভারত ছয় ঘন্টার জন্যও কলকাতা

বন্দর ব্যবহার করতে দেয়নি। ভারত কাজটা কি ঠিক করেছিল? যদি ঠিক করে থাকে তাহলে আজ

বাংলাদেশ ভারতকে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দিচ্ছে কেন?ইরাবতী জাহাজটি হলদিয়া

বন্দরে যেতে পারলেও নিয়ম অনুযায়ী চেন্নাই, কোচিন ও নভোসেবা বন্দরে যেতে পারবে না। তাই

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ৯২টি কন্টেনারকে ট্রানশিপমেন্টের আওতায় অন্য একটি জাহাজে করে

পণ্যগুলো সেখানে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এক দেশের পণ্য আরেক দেশ ব্যবহার করে

তৃতীয় দেশে নেয়ার নাম ট্রানশিপমেন্ট। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের বিভিন্ন বন্দরে

পণ্য নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলে আসছিল দুই দেশেই। সম্প্রতি ভারতের লোকসভায়

স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ার সময়ও ভারতের একাধিক এমপি ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে

ট্রানজিটের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছিলেন। এর আগে

চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন বন্দরে সরাসরি পণ্য আনা-নেয়া হলেও অন্য দেশ থেকে পণ্য

নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতে যাওয়ার নজির এটাই প্রথম। ধারণা করা হচ্ছে, মোদির

সফরকে সামনে রেখেই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্যের ট্রানশিপমেন্ট করার সুযোগ

দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয়, মংলাবন্দরও ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছে

ভারত।৪০ বছর পর কানেকটিভিটির নামে ট্রানজিট তথা করিডোরআগরতলা থেকে বাংলাদেশর

ওপর দিয়ে কলকাতা এবং কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আগরতলায় যাতায়াতের বাস

সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এটিও তো ভারতের স্বার্থেই করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা শিলং-গুয়াহাটি

বাস সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। এটিও ভারতের স্বার্থেই করা হয়েছে। খুলনা-মংলা এবং

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে সার্ভিস চালু করা হচ্ছে। সেটিও ভারতের স্বার্থেই করা হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারত এক এক সময় এক এক নামে করিডোর চেয়ে আসছে।

কোনো সময় ট্রানজিট, কোনো সময় কানেকটিভিটি। এবার স্থল ট্রানজিটের সাথে তারা উপকূলীয়

জাহাজ চলাচলেরও অধিকার পেয়েছে। আসলে স্থল ট্রানজিট তাদেরকে ৪ বছর আগেই দেয়া হয়েছে।

আখাউড়া থেকে আগরতলা হয়ে ত্রিপুরার পালাটোনা নামক স্থানে ১৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন

ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারত বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করেছে। ভারতকে

এই সুবিধা দেয়ার জন্য তিস্তা নদীকে দ্বিখ-িতও করা হয়েছে।এটি যদি কানেকটিভিটিই হবে তাহলে

শুধুমাত্র ভারতের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে কেন, বাংলাদেশ তো ভারতের পূর্ব ভূখ- দিয়ে

মিয়ানমার ও গণচীন, উত্তরের ভূখ- দিয়ে নেপাল ও ভুটান এবং পশ্চিমের ভূখ- দিয়ে পাকিস্তান,

আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় যেতে চায়। সেই ব্যবস্থা এবার দুই প্রধানমন্ত্রী করেননি।নিরাপত্তা

সহযোগিতাভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ঐ দেশের ৯টি রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী তথা স্বাধীনতা

আন্দোলন শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই সব আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নেয়। ৯টি রাজ্য হলো,

পাঞ্জাব, কাশ্মীর, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও অরুণাচল। পাঞ্জাব ও

কাশ্মীর ছাড়া অবশিষ্ট ৭টি প্রদেশ বাংলাদেশের উল্টর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এসব রাজ্যের

বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর

আওয়ামী লীগ সরকার এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে ভারতকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে।

আঞ্চলিক এবং এশীয় পরাশক্তি হওয়ার পথে উল্টর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রাম ছিল ভারতের

সামনে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। ভারতের ৬০ বছরের এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধানে দারুণ ভূমিকা

রেখেছে আওয়ামী সরকার। বাংলাদেশের সক্রিয় হস্তক্ষেপে পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রাম

অনেকটা দমিত এবং স্তিমিত। এই নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন

নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনা। এটিতেও একতরফাভাবে লাভবান হবে ভারত। কারণ বাংলাদেশে

কোনো বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলন নেই। সন্তু লারমা যেটা করেছিলেন সেটিও ভারতেরই মদদে।

বাংলাদেশে মাঝে মাঝে যেসব জঙ্গির কথা শোনা যায়, প্রশাসনিক শক্তির কাছে দাঁড়াবার কোনো

ক্ষমতা তাদেও নেই।অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাভারতের ৬৭ বছরের আশা পূরণ হয়েছে। উপরি পাওনা

হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশ আরো যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

(১) ভারতীয় ব্যাবসায়ী কোম্পানিগুলোর জন্য একাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হবে।

এজন্য তাদেরকে ৬০০ একর বা ১৮০০ বিঘা জমি দেয়া হবে।(২) ভারতের রাষ্ট্রীয় বীমা প্রতিষ্ঠানকে

বাংলাদেশে ব্যাবসা করার সুযোগ দেয়া হবে। (৩) উল্টর-পূর্ব ভারতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ দেয়া

হবে। (৪) ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হবে, যে সেতু দিয়ে সহজে ভারতে যাওয়া যাবে।

বিনিময়ে বাংলাদেশ কি পেল?বাংলাদেশ ভারতকে নিঃশেষে সব উজাড় করে দিয়েছে। বিনিময়ে কিছুই

পায়নি বাংলাদেশ। কারণ, (১) যে স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে এত শোরগোল তোলা হয়েছে সেটি তো ৪১

বছর আগেই আমাদের পাওনা ছিল। ৪১ বছর পর তারা আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিল। শুধু

বাংলাদেশই কি কয়েকটি ছিটমহল পেয়েছে? ভারত কি পায়নি?(২) সমুদ্রবন্দর এবং ট্রানজিট ছিল

বাংলাদেশের ট্রাম্পকার্ড। সেখানে তিস্তার পানি না পেয়েই বাংলাদেশ সেই ট্রাম্পকার্ডটি খুইয়েছে। এখন

শুনতে হচ্ছে শুধু কথার ফুলঝুরি। ৪০ বছর ধরে সেগুলো শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে।

(৩) ভারত বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই

ঋণ ব্যবহার করা হবে ভারতের স্বার্থে। এই ঋণের টাকা দিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ভারী

যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাস্তা নির্মাণ করা হবে। মজার ব্যাপার হলো এই যে, এই ২০০ কোটি

ডলারের মধ্যে ৭৫ শতাংশ খরচ করতে হবে ভারত থেকে নির্মাণসামগ্রী এবং পরিষেবা আমদানিতে।

আরো মজার ব্যাপার হলো এই যে, এই ২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগের ফলে ৫০ হাজার ভারতীয়

নাগরিকের চাকরির সংস্থান হবে।  এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০১১ সালে ভারত ১০০

কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেখান থেকে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতু

নির্মাণের জন্য অনুদান হিসেবে রূপান্তর করা হয়। অবশিষ্ট ৮০ কোটি ডলার এখনো নাকি পাওয়া

যায়নি। ভারতীয় সাহায্য : একটি চাঞ্চল্যকর তথ্যবাংলা ভারত বন্ধুত্ব নিয়ে ভারতপ্রেমী মহলটি

অষ্টপ্রহর তার স্বরে চীৎকার করেন। ভারত বিশ্ববাজার থেকে বছরে ৪৫ হাজার কোটি ডলারের

পণ্যসামগ্রী আমদানি করে থাকে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভারত কত টাকার পণ্য আমদানি করে,

সেটা কি জানেন? বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে আমদানি করে মাত্র ৪৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪৫ কোটি

ডলারের পণ্যসামগ্রী। ভারতের আমদাীতে বাংলাদেশের অংশ ১ শতাংশও নয়। বাংলাদেশের অংশ ১

শতাংশের ১০ ভাগের ১ ভাগ। সকলেই জানেন যে, বাংলাদেশের শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির

জন্য সবচেয়ে বেশিী প্রয়োজন প্রত্যক্ষ বিদেশিী বিনিয়োগ বা এফডিআই (ফরেন ডাইরেক্ট

ইনভেস্টমেন্ট)। বাংলা ভারত বন্ধুত্বের জন্য ভারত প্রেমীরা জান কোরবান করেন। তারা কি জানেন

যে, বাংলাদেশে ভারতের এফডিআই পাকিস্তানের এফডিআই এর চেয়েও কম? ২০১৪ সালে

বাংলাদেশে পাকিস্তানের এফডিআই ছিল ১৩০.৭৪ মিলিয়ন ডলার। সেখানে ভারতের বিনিয়োগ ছিল

প্রায় তার অর্ধেক, অর্থাৎ ৭৪.৫৪ মিলিয়ন ডলার। (সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংক)সকলে এটাও জানেন যে,

অশুল্ক বাধা অপসারিত হলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি বেড়ে যেত। ভারতের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ

থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও অশুল্ক প্রাচীর দূর করা বা হ্রাস করা হয়নি। অর্থ ঃ বার্লিন

প্রাচীর সমাচারস্থলসীমান্ত চুক্তিকে নরেন্দ্র মোদি বার্লিন প্রাচীরের পতনের সাথে তুলনা করেছেন। তা

তিনি করতেই পারেন। তাই বলে আমরাও কি সেই কথায় তার সাথে নাচব? বার্লিন প্রাচীরের পতনের

ফলে দুই জার্মানি অর্থাৎ দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র এক হয়ে গেছে। আমরাও কি তাই হব? এটি দুই বাংলার

এক হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত কি না, কে জানে। কে কার মাঝে মিশে যাবে? দুই বাংলা এক হয়ে কি

বৃহত্তর বঙ্গ হিসেবে ভারতের শোভাবর্দ্ধন করবে? নাকি পশ্চিমবঙ্গ ভারত থেকে বেরিয়ে এসে

বাংলাদেশের সাথে একাকার হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বৃহত্তর বঙ্গ গঠন করবে? ১৯৪৭ সালে প-িত নেহ্রু

দুই বাংলার এক হওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এবার কি নরেন্দ্র মোদি সেটি

অ্যালাও করবেন?তবে অভিজ্ঞ মহল বলেন যে, বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার মধ্যকার বার্লিন প্রাচীরের

যদি পতন হয়ে থাকে তাহলে সীমান্তে মাইলের পর মাইল কাঁটাতারের বেড়া দাঁড়িয়ে আছে কেন? এই

বেড়া আর যাই হোক, বন্ধুত্বের পরিচায়ক নয়। বিএনপির রহস্যময় নীরবতা১৯৯৬ সালে আওয়ামী

লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা ভারতকে ট্রানজিট তথা করিডোর দেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে

পড়ে। এই ট্রানজিটের বিরুদ্ধে তখন সারা দেশ সোচ্চার হয়ে ওঠে। লাখ লাখ প্রতিবাদী কণ্ঠের নেতৃত্ব

দেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি একাধিকবার ঘোষণা করেন, বুকের রক্ত দেব, তবুও ট্রানজিট দেব

না। বিএনপির স্লোগান ছিল, জান দেব, তবুও ট্রানজিট দেব না। সারাদেশের সগর্জন প্রতিবাদের মুখে

তৎকালীন সরকার ট্রানজিট প্রদান থেকে পিঠটান দেয়। এবার কিছুই না পেয়েও বাংলাদেশ ট্রানজিট

এবং সমুদ্রবন্দরসহ সবকিছু ভারতকে উজাড় করে দিল। অথচ তারপরও বিএনপি একেবারে ঠোঁট

সেলাই করে বসে আছে। নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা করার জন্য বিএনপি অস্থির ছিল। তার সাথে

দেখা করার জন্য কি বিএনপি তার দলীয় নীতি এবং অবস্থান বিসর্জন দেবে? ইদানিং ধর্মনিরপেক্ষতার

ব্যাপারেও বিএনপি সুবিধাবাদী অবস্থানে চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। বিএনপি কি তাহলে নীতি ও

আদর্শের রাজনীতি ব্যাক বার্নারে রেখে শুধু ক্ষমতার রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকবে? তাহলে আর

আওয়ামী লীগের সাথে তার পার্থক্য রইল কোথায়? বিএনপি যদি ভারত এবং সেক্যুলারিজম প্রশ্নে

‘ধরি মাছ না ছুই পানি’ করতে থাকে তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে বিএনপিকে নিয়ে নতুন করে

ভাবতে হবে।