বাংলাদেশের রাস্তাগুলো ১৬ লেন করলেও লাভ হবে না। রাস্তা দখলমুক্ত না করতে পারলে যানজটও কমবে না। আর রাজনীতিবিদদের কারণেই রাস্তা দখলমুক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই আগে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। এছাড়াও যত্রতত্র পার্কিং করা, ভাড়া বেশি নেয়াসহ নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে পরিহন সেক্টর নিয়ে ‘বড় বিপদে আছি’ বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। গতকাল (সোমবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের ট্রমালিংক নামক একটি বেসরকারি সংগঠনের আয়োজনে ‘সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা এবং অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।ভিআইপিদের আইন না মানা যানজটের আরেকটি কারণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ল’ মেকাররাই ল’ ব্রেকার। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ আইন মানলেও অসাধারণ (ভিআইটি) মানুষরা আইন মানতে চায় না। এসব ভিআইপিরা দলবল নিয়ে রাস্তায় উল্টোপথে চলা শুরু করে। ফলে যানজট লেগে যায়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে সাহস করে বিষয়টি বলেছি। এসময় মন্ত্রী বলেন, আমরা ভাষণে সবল, কিন্তু অ্যাকশনে দুর্বল। পরিবহন সেক্টর নিয়ে সমন্বিত অ্যাকশন দরকার বলে তিনি জানান। মন্ত্রী বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গেলে রাজনীতিবিদরা এসে বলে, সামনে নির্বাচন; আপনি আমার ভোট নষ্ট করবেন না। ঢাকা সিটিতে গত ১ জুন ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে আবার দখল হয়ে যায় বলে তিনি জানান।বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ট্রমালিংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. জন মুসালেহ, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি কে. জাকারিয়া খালেদ, যাত্রীকল্যাণ সমিতির মাহসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। সড়ক নিরাপত্তার জন্য প্রায় ১৩টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কার্যক্রম দরকার। এছাড়া অন্তত ৪০ কিলোমিটার পর পর ট্রমা সেন্টার এবং উদ্ধারকারী টিম গঠন করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, সড়ক নিরাপত্তা, যানজট নিরসন ও সড়ক উন্নয়নের বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার মুখ্যসচিবকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এখন থেকে তিনি এ বিষয়ে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রী আরো বলেন, রাত ২টার সময়ও আমাকে ফোন করে বলে যে গাড়ির ভাড়া বেশি নিচ্ছে। এই যে ঈদ আসছে, এখনও অভিযোগ করা শুরু হবে ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বেড়েছে। আবার এর সাথে বিআরটিসির বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসে। এসব নিয়ে বড় বিপদে আছি।অনেক সময় ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ড্রাইভার ক্লান্ত হয়ে রাস্তায় গাড়ি রেখে দেয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, যখন দীর্ঘ যানজট হয় তখন খুঁজে অনেক সময় দেখা যায় ড্রাইভার ক্লান্ত হয়ে গাড়ি রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।মন্ত্রী বলেন, দেশের রাস্তাগুলো ১৬ লেন করেও লাভ হবে না। আগে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন দরকার। কে কাকে বোঝাবে। প্রায় সাড়ে ৩ বছর ফাইট করছি। কিন্তু এই যায়গাটাতে পারছি না। মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে না।