বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ঈদ মেলায় বাহারি পোশাক

রাজধানী জুড়েই চলছে ঈদমেলা। এসব মেলায় যারা স্টল সাজিয়েছেন তাদের ৯৯ ভাগই নারী

উদ্যোক্তা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে এসব মেলায়। তবে মেলায় অংশ নেয়া নারী

উদ্যোক্তারা বলছেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি বেচাকেনায় অনেকটাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
ধানমন্ডি ডব্লি¬উভিএ মিলনায়তন, দৃক গ্যালারি, লালমাটিয়া কলেজের সামনে ‘পসরা ফ্যাসিয়ন’সহ

বিভিন্ন স্থানের এসব মেলা ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে এসব মেলা।

দেশীয় বুটিক হাউসের বিভিন্ন পণ্যসহ থাকছে পাকিস্তানি ও ভারতীয় নানা ব্র্যান্ডের কিছু শাড়ি

পোশাক। দামে অন্যান্য মার্কেটের চেয়ে কিছুটা কম বলে ক্রেতারাও ছুটছেন এসব মেলায় ধানমন্ডি,

আগারগাঁও, মতিঝিল, বনানী, শাহবাগ বিভিন্ন স্থানের মেলা ঘুরে দেখা যায় মেলার এসব ফ্যাশন

হাউজের জনপ্রিয়তা।
 
‘পসরা ফ্যাসিয়ন’ এর স্বত্বাধিকারী অভি হামিদ বলেন, আমাদের দেশীয় কাপড়ে ব্লক, বাটিক করা ও

ভেজিটেবল ডাইং এর কাপড়গুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতা সাধারণের চাহিদার কথা মাথায়

রেখে আমরা কিছু পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান পোশাক মেলায় তুলেছি। এসব পোশাক পাইকারি

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে থাকেন বলে জানান তিনি। অভি বলেন, ইন্ডিয়ান দিল্লি বুটিকস,

ভিনয়, ক্যাপলিকা, সাহেবা নামের পোশাকগুলো ভালো চলছে। এসব পোশকের রং পাকা, কাপড়ের

বুনোন, ফেব্রিক্স ও ডিজাইন ভালো বলেই নারীদের কাছে এর চাহিদাও বেশি।
 
কল্যাণপুর থেকে কচি এসেছেন ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ’র মেলায় থ্রি-পিস কিনতে। তিনি বলেন, এ

সময় ভিড়ে মার্কেটে স্বস্তিতে কাপড় কেনা দায়; যার কারণে তিনি মেলায় ঈদের শপিং করতে

এসেছেন। কচি বলেন, মেলায় পোশাকের দাম অনেকটাই সস্তা। লালমাটিয়া থেকে মেলায় লিলেনের

ওয়ানপিস জামা কিনতে এসেছেন, অনিকা ও তার খালামণি। অনিকা বলেন, গাউসিয়া, চাঁদনীচক,

নিউমার্কেটসহ নামিদামি সব মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে এসব পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান পোশাক। তবে

মেলাগুলোতে তুলনামূলক এসব পোশাকের দাম কম থাকে বলে মেলায় কিনতে আসা।
 
‘তুলিস ক্যাসেল’ এর সেলস এক্সিটিউটিভ রিমঝিম সাদিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে বেচাকেনা কিছুটা

খারাপ। তার দোকানে ওয়ান পিস কামিজ, কটন, লিলেন ও জর্জেটের এসব ওয়ান পিস কামিজ

পাওয়া যাচ্ছে। ওয়ান পিস কামিজগুলো দেশীয় কাপড়ে নিজেদের ডিজাইনার দিয়ে তৈরি। দাম ৮০০

থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। রিমঝিম বলেন, কাপতানগুলো থাইল্যান্ড থেকে আনা। দাম ১৬০০

থেকে ১৮০০টাকা পর্যন্ত।
 
‘রঙের ছোঁয়া এন্ড কানিজ গ্লিটার’ এর ইসমত তানিয়া বলেন, আমাদের শোরুম ধানমন্ডির

কলাবাগানে, তবে অনলাইনেও বেচাকেনা হয়। ইসমতের স্টলে গহনা, মেয়েদের টি-শাট ও দেশীয়

কাপড়ের থ্রি-পিস ও ওয়ান পিস পাওয়া যাচ্ছে।
 
এদিকে, আগারগাঁও তালতলা বাসস্ট্যান্ডে মাসব্যাপী চলছে ‘দেশীয় তাঁতবস্ত্র মেলা’। মতিঝিলে

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনও (বিসিক) মেলার আয়োজন করেছে। ‘ইকনোমি

প্রদর্শনী, ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি বুটিক মেলা, ঈদ ফ্যাশন মেলা, কারুশিল্প প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল

১০ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলে। এখানে ঢাকাই জামদানি, রাজশাহীর সিল্ক, কুমিল্লার

খাদি, মিরপুরের বেনারসী, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, সিরাজগঞ্জ, পবনা, নরসিংদীর সূতি শাড়ি ও

লুঙ্গি, কুমারখালীর বিছনা চাদর ও গামছা এবং বাহারি রংয়ের দেশীয় থ্রি-পিস, ছেলেদের

পাঞ্জাবি-ফতুয়া-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া যাকাতের কাপড়ও পাওয়া যাচ্ছে মেলার বিভিন্ন স্টলে।
 
মেলার আয়োজকরা জানান, তাঁতীরা অনেক সময়ই সুদের ওপর ঋণ করে কাজ করে থাকেন। তাই

মেলা পর্যন্ত তাদের পণ্য নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এছাড়া তাঁতীর আর শো-রুম ব্যবসায়ীদের মধ্যে

একশেণ্রীর মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছে, যারা লাভবান হন বেশি। তাদের হাতে জিম্মি প্রান্তিক তাঁতীরা। এসব

মেলা রাজধানীর শো-রুম ব্যবসায়ী আর তাঁতীদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তৈরি হবে এবং তাঁতীরা

পাবে তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য। এছাড়া ক্রেতারাও সরাসরি তাঁতীদের কাছ থেকে তাদের পছন্দের

শাড়ি কিনতে পারবেন বলে জানান আয়োজকরা।