বাংলাদেশ

কাফড়ের লাইগ্যা মার জীবন গ্যালো, অহন কাফড় কেডা ফিনবো

‘দুই টেহা কাফড়ের লাইগ্যা আমার মার জীবন গ্যালো। অহন তোমার কাফড় কেডা ফিনব গো। মা

গো তুমি ফিইরা আও। তোমারে ছাড়া কি লইয়্যা থাহুম’- মাকে হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন

ছোট মেয়ে ডেইজি আক্তার মিতু (২০)। মমতাময়ী মা খোদেজা বেগমের (৫০) মেয়ে  মিতু বিলাপ

করছিলেন আর মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বাড়ির আঙিনায় স্বজনরাও বুকফাটা আর্তনাদ করছিলেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পড়ুয়া মিতু কখনো নির্বাক, কখনো ডুকরে কাঁদছেন। একটি কাপড়ের জন্য তার

মা তাদের এভাবে চিরবিদায় জানাবেন, ভাবতেই রাজ্যের আঁধার নেমে আসছিল তার মুখাবয়বে। তার

কাছের স্বজনরাও তাকে সমবেদনা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন। কষ্টভরা শব্দমালায় মিতু

বলছিলেন, ‘মাইনষের বাড়িত কাম কইরা মা আমাগো পড়ালেখা করাইত। অহন আমার কী হইব?

আইজ থাইক্ক্যা আমার মা আর নাই। আমার মা সব কাম করত। আমাদের পালত। এহন দেখব

কেডা? আমারে আদর করব কেডা? আমার মা আমারে আর কইত না তুমি খাও, পড়তে বও।

আমার মা তো অসুখে মরল না।’
জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে গতকাল বিকালে নিহত খোদেজা বেগমের ঝুপড়ি ঘিরে

চলছিল এ আহাজারি। শহরের থানা ঘাটের পেছনে ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষে এ ঝুপড়ি। খোদেজা তার ছোট্ট

নাতি রাজু মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কাপড় আনতে গিয়েছিলেন নূরানী জর্দা কারখানায়। অবুঝ রাজু জানায়,

‘রাইত সাড়ে তিনডায় নানী কাপড় আনবার লাইগ্যাা আমারে ডাহে। আমি আর নানী জর্দা ফ্যাক্টরির

সামনে যাই। তহন চারডা বাজে। মানুষ হবায় আওয়া শুরু করছে। নামাজের পরই মানুষ দলা হয়।

তহন গেইট খুইল্ল্যা দেয়। হেই সময়ই আমাগোর উপর আট-দশ জন পইড়া যায়। আামি বাইর

হইতে পারলেও নানী পারে নাই।’ এ সময় নির্বাক হয়ে পাশে বসে ছিলেন মিতুর বড়বোন রোজিনা

বেগম (৩০)। তিনি বলেন, ‘মা কাইল রাইতেই কইছে কাফড় আনতে যাইব। একটা কাফড়

আনবার গিয়া আমার মা যে আর আইত না, এইডা তো আমি জানি না। কাফড়েই আমার মারে

খাইল।’