সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পর মন্ত্রিসভায় আরও চমক অপেক্ষা করছে। কয়েকজন নিরাপদ
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্য বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার
মন্ত্রিসভায় কাটছাঁটের বিষয়ে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হারানো
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুক্রবার ছুটির দিনে সরকারি
বাসভবনেই কাটিয়েছেন। কিছু নির্বাচিত ব্যক্তি ও নেতা এবং নিকটাত্মীয় তার সঙ্গে দেখা করেন।
আত্মীয়স্বজন ও নেতারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়ায় সৈয়দ আশরাফ
কিছুটা ক্ষুব্ধ। তবে এর প্রকাশ নেই। ক্ষোভ নিয়ে তিনি সহসাই মুখ খুলবেন না। পরিবারের এক
সদস্যের বিয়ে উপলক্ষে আগামী ১৫ জুলাই মঙ্গলবার তার লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। কখন
ফিরবেন তা স্পষ্ট করে ঘনিষ্ঠজনদের এখনও বলেননি। তাই আশরাফের দেশে ফেরা নিয়ে
ঘনিষ্ঠজনরা নানা কথা বলছেন।
এদিকে দলের এক নেতা দাবি করেন, সৈয়দ আশরাফ তাকে বলেছেন- আমি ক্ষমতা উপভোগ
করছিলাম না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তটি আমার জন্য ভালো হয়েছে। এখন দলে আরও বেশি সময় দিতে
পারব। এ নেতা যুগান্তরকে বলেন, তিনি শুক্রবার সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সরকারি বাসভবনে
গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় দুই নেতা সময় নিয়ে দলের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা
করেন।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু জেনে-বুঝে এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আশরাফুল
ইসলামকে সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি কাজে শৈথিল্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
নিয়েছেন। এ ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করছে। এর মাধ্যমে তিনি অন্যদের বার্তা দিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য আছে, বেশ কয়েক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের
অবমূল্যায়ন করেছেন। এদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে বলেও তথ্য আছে। প্রধানমন্ত্রী
অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ওই ধরনের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা তৈরি করেছেন। তাই শৃংখলার
বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত এবং সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে সহসাই মন্ত্রিসভায় শুদ্ধি
অভিযান চালানো হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এ কঠোর মনোভাব ইতিমধ্যে অনুধাবন করেছেন মন্ত্রী ও
প্রতিমন্ত্রীরা। ফলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে
অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সৈয়দ
আশরাফুল ইসলামের বিষয়টি তিনি জানতেন। তিনি বলেন, আশরাফ সাহেবের যে পোর্টফোলিও
পরিবর্তন হবে এটা অবশ্য আমরা কয়েকজন জানতাম। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন হাত
দিয়েছেন, দেখা যাক কি হয়। আই হ্যাভ নো আইডিয়া। একটু রিকাস্টিং হবে। কিন্তু কীভাবে হবে তা
বলা মুশকিল। শুক্রবার সিলেটের কাজীর বাজারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন
তিনি। অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রিসভায় রদবদল এবং অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কী ঘটতে
যাচ্ছে- তা অর্থমন্ত্রী জানেন। গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার
এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের গত দেড় বছরের কার্যক্রমের
মূল্যায়ন রিপোর্ট তৈরি করেছেন। দলের নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কেও পুরোপুরি অবগত তিনি।
মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এসব মূল্যায়ন রিপোর্ট বিবেচনায় নিতে পারেন বলে
জানা গেছে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য পদ হারাতে পারেন। সৈয়দ
আশরাফুল ইসলাম দফতরবিহীন মন্ত্রী হওয়ায় যেমন বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি আগামীতে
আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে
সরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সতর্ক বার্তা হিসেবে দেখছেন। সরকারের প্রায়
সবমহলে বিষয়টি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তদের মতে, প্রধানমন্ত্রী ঘটনাটি দলের স্বার্থেই
ঘটিয়েছেন। দলে আরও বেশি সময় দেয়ার জন্য সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন করা হয়েছে। দলের
বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও এ ধরনের বক্তব্যই প্রচার করছেন। কিন্তু তাদের আশংকা আওয়ামী লীগের
রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফের দিন শেষ হয়ে আসছে। এ আশংকার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
তার (সৈয়দ আশরাফ) সমর্থক ও অনুসারী এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত নেতারাও একমত
পোষণ করেছেন।
সৈয়দ আশরাফের সারা দিন : দফতর হারানোর একদিন পর শুক্রবার সারা দিন সরকারি
বাসভবনেই কাটিয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এদিন
সৈয়দ আশরাফ তার বাসভবনে দলের নেতা, সংসদ সদস্য, আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষই
আসেন। অন্যদিনের চেয়ে গতকাল ছিল ব্যতিক্রম। তারা সবাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে
দেখা করেছেন। ১১টার দিকে সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাফায়েতুল ইসলাম
দেখা করতে আসেন। তিনি বিকাল পর্যন্ত বাসায় ছিলেন। মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও
সৈয়দ আশরাফের খালাতো বোনের স্বামী মকবুল হোসেন ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের
চেয়ারম্যান বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।
দুপুরের দিকে বাসায় দেখা করতে যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন।
এছাড়া নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জের নেতাকর্মীরা সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে দেখা করতে যান। দেখা
করেন আত্মীয়স্বজনরাও। সাক্ষাৎকারী এক আওয়ামী লীগ নেতা যুগান্তরকে জানান, দফতর হারিয়ে
আশরাফকে নির্ভার মনে হয়েছে। তিনি দলেই সময় দেবেন। তবে তার অনুসারীদের আশংকা সৈয়দ
আশরাফ যদি দফতর হারানোর বিষয়ে মন খারাপ করে থাকেন তবে তিনি লন্ডন থেকে আপাতত
আর নাও ফিরতে পারেন।
সংগঠনে সময় দিতেই আশরাফের ভার লাঘব- কাদের : সংগঠনে আরও বেশি সময় দেয়ার জন্যই
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো তিনি
(প্রধানমন্ত্রী) মনে করেছেন, সে (সৈয়দ আশরাফ) অতিরিক্ত ভার বহন করছেন। দলে আরও ভালো
করে বেশি সময় দেয়ার জন্য এটা (দফতরবিহীন করা) হতে পারে। বাবুবাজার পসতু এলাকা
পরিদর্শনে গিয়ে আশরাফকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউকে কোনো পদে
রাখা না রাখা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকারপ্রধান যাকে প্রয়োজন মনে করেন
তাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। আর সরিয়ে দেয়ার প্রয়োজন মনে করলে তাকে সরিয়ে দেন।
সাধারণ সম্পাদককে দফতরবিহীন মন্ত্রী করায় দলে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলেও মন্তব্য
করেন কাদের। তিনি বলেন, ভালো-খারাপ এ কয় বছর দেশ পরিচালনায় আপনারা দেখেছেন। তার
(প্রধানমন্ত্রী) কোনো সিদ্ধান্ত বৈঠিক হয়নি।
দল ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন করা হয়েছে- সুরঞ্জিত : আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দেশ, জাতি, দল ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই সৈয়দ
আশরাফুল ইসলামকে দফতবিহীন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় কে অবস্থান করবে তা
নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। সৈয়দ আশরাফ একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার মন্ত্রিত্ব
না থাকা খুব বড় বিষয় না। প্রধানমন্ত্রী দেশ, জাতি ও দলের স্বার্থেই এটি করেছেন বলে মনে করি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে
এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্য বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার
মন্ত্রিসভায় কাটছাঁটের বিষয়ে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হারানো
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুক্রবার ছুটির দিনে সরকারি
বাসভবনেই কাটিয়েছেন। কিছু নির্বাচিত ব্যক্তি ও নেতা এবং নিকটাত্মীয় তার সঙ্গে দেখা করেন।
আত্মীয়স্বজন ও নেতারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়ায় সৈয়দ আশরাফ
কিছুটা ক্ষুব্ধ। তবে এর প্রকাশ নেই। ক্ষোভ নিয়ে তিনি সহসাই মুখ খুলবেন না। পরিবারের এক
সদস্যের বিয়ে উপলক্ষে আগামী ১৫ জুলাই মঙ্গলবার তার লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। কখন
ফিরবেন তা স্পষ্ট করে ঘনিষ্ঠজনদের এখনও বলেননি। তাই আশরাফের দেশে ফেরা নিয়ে
ঘনিষ্ঠজনরা নানা কথা বলছেন।
এদিকে দলের এক নেতা দাবি করেন, সৈয়দ আশরাফ তাকে বলেছেন- আমি ক্ষমতা উপভোগ
করছিলাম না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তটি আমার জন্য ভালো হয়েছে। এখন দলে আরও বেশি সময় দিতে
পারব। এ নেতা যুগান্তরকে বলেন, তিনি শুক্রবার সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সরকারি বাসভবনে
গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় দুই নেতা সময় নিয়ে দলের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা
করেন।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু জেনে-বুঝে এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আশরাফুল
ইসলামকে সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি কাজে শৈথিল্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
নিয়েছেন। এ ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করছে। এর মাধ্যমে তিনি অন্যদের বার্তা দিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য আছে, বেশ কয়েক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের
অবমূল্যায়ন করেছেন। এদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে বলেও তথ্য আছে। প্রধানমন্ত্রী
অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ওই ধরনের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা তৈরি করেছেন। তাই শৃংখলার
বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত এবং সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে সহসাই মন্ত্রিসভায় শুদ্ধি
অভিযান চালানো হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর এ কঠোর মনোভাব ইতিমধ্যে অনুধাবন করেছেন মন্ত্রী ও
প্রতিমন্ত্রীরা। ফলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে
অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সৈয়দ
আশরাফুল ইসলামের বিষয়টি তিনি জানতেন। তিনি বলেন, আশরাফ সাহেবের যে পোর্টফোলিও
পরিবর্তন হবে এটা অবশ্য আমরা কয়েকজন জানতাম। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন হাত
দিয়েছেন, দেখা যাক কি হয়। আই হ্যাভ নো আইডিয়া। একটু রিকাস্টিং হবে। কিন্তু কীভাবে হবে তা
বলা মুশকিল। শুক্রবার সিলেটের কাজীর বাজারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন
তিনি। অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রিসভায় রদবদল এবং অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কী ঘটতে
যাচ্ছে- তা অর্থমন্ত্রী জানেন। গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার
এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের গত দেড় বছরের কার্যক্রমের
মূল্যায়ন রিপোর্ট তৈরি করেছেন। দলের নেতাদের ভূমিকা সম্পর্কেও পুরোপুরি অবগত তিনি।
মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এসব মূল্যায়ন রিপোর্ট বিবেচনায় নিতে পারেন বলে
জানা গেছে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য পদ হারাতে পারেন। সৈয়দ
আশরাফুল ইসলাম দফতরবিহীন মন্ত্রী হওয়ায় যেমন বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি আগামীতে
আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে
সরিয়ে দেয়ার ঘটনাকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সতর্ক বার্তা হিসেবে দেখছেন। সরকারের প্রায়
সবমহলে বিষয়টি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তদের মতে, প্রধানমন্ত্রী ঘটনাটি দলের স্বার্থেই
ঘটিয়েছেন। দলে আরও বেশি সময় দেয়ার জন্য সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন করা হয়েছে। দলের
বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও এ ধরনের বক্তব্যই প্রচার করছেন। কিন্তু তাদের আশংকা আওয়ামী লীগের
রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফের দিন শেষ হয়ে আসছে। এ আশংকার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
তার (সৈয়দ আশরাফ) সমর্থক ও অনুসারী এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত নেতারাও একমত
পোষণ করেছেন।
সৈয়দ আশরাফের সারা দিন : দফতর হারানোর একদিন পর শুক্রবার সারা দিন সরকারি
বাসভবনেই কাটিয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এদিন
সৈয়দ আশরাফ তার বাসভবনে দলের নেতা, সংসদ সদস্য, আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষই
আসেন। অন্যদিনের চেয়ে গতকাল ছিল ব্যতিক্রম। তারা সবাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে
দেখা করেছেন। ১১টার দিকে সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাফায়েতুল ইসলাম
দেখা করতে আসেন। তিনি বিকাল পর্যন্ত বাসায় ছিলেন। মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও
সৈয়দ আশরাফের খালাতো বোনের স্বামী মকবুল হোসেন ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের
চেয়ারম্যান বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।
দুপুরের দিকে বাসায় দেখা করতে যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন।
এছাড়া নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জের নেতাকর্মীরা সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে দেখা করতে যান। দেখা
করেন আত্মীয়স্বজনরাও। সাক্ষাৎকারী এক আওয়ামী লীগ নেতা যুগান্তরকে জানান, দফতর হারিয়ে
আশরাফকে নির্ভার মনে হয়েছে। তিনি দলেই সময় দেবেন। তবে তার অনুসারীদের আশংকা সৈয়দ
আশরাফ যদি দফতর হারানোর বিষয়ে মন খারাপ করে থাকেন তবে তিনি লন্ডন থেকে আপাতত
আর নাও ফিরতে পারেন।
সংগঠনে সময় দিতেই আশরাফের ভার লাঘব- কাদের : সংগঠনে আরও বেশি সময় দেয়ার জন্যই
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো তিনি
(প্রধানমন্ত্রী) মনে করেছেন, সে (সৈয়দ আশরাফ) অতিরিক্ত ভার বহন করছেন। দলে আরও ভালো
করে বেশি সময় দেয়ার জন্য এটা (দফতরবিহীন করা) হতে পারে। বাবুবাজার পসতু এলাকা
পরিদর্শনে গিয়ে আশরাফকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউকে কোনো পদে
রাখা না রাখা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকারপ্রধান যাকে প্রয়োজন মনে করেন
তাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। আর সরিয়ে দেয়ার প্রয়োজন মনে করলে তাকে সরিয়ে দেন।
সাধারণ সম্পাদককে দফতরবিহীন মন্ত্রী করায় দলে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলেও মন্তব্য
করেন কাদের। তিনি বলেন, ভালো-খারাপ এ কয় বছর দেশ পরিচালনায় আপনারা দেখেছেন। তার
(প্রধানমন্ত্রী) কোনো সিদ্ধান্ত বৈঠিক হয়নি।
দল ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন করা হয়েছে- সুরঞ্জিত : আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দেশ, জাতি, দল ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই সৈয়দ
আশরাফুল ইসলামকে দফতবিহীন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় কে অবস্থান করবে তা
নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। সৈয়দ আশরাফ একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার মন্ত্রিত্ব
না থাকা খুব বড় বিষয় না। প্রধানমন্ত্রী দেশ, জাতি ও দলের স্বার্থেই এটি করেছেন বলে মনে করি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে
এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।