বাংলাদেশ

‘ক্যাসিনো সাঈদ’ ফেরায় চাঙ্গা ক্যাডাররা, ফিরে পেতে চায় আধিপত্য

ঢাকার অভিজাত ক্লাব-হোটেলগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার অন্যতম হোতা মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ‘ক্যাসিনো সাঈদ’। দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় তার সঙ্গী-সাথীরা সবাই ধরা খেয়েছেন। তারা এখন জেলের ঘানি টানছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ক্যাসিনো সাঈদ। কিছু দিন দেশের বাইরে থেকে এখন বহাল তবিয়তে। গোপনে দেশে ফিরেছেন। সব মামলায় জামিন নিয়ে রিলাক্সে আছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির বরখাস্ত এ কাউন্সিলর ফিরে আসায় চাঙ্গা তার ক্যাডার বাহিনী। তারা মতিঝিল, পল্টন ও আরামবাগ এলাকায় আবারও ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করতে চায়। এ কারণে মারমুখী আচরণ শুরু করেছে। অন্তত চার ব্যক্তি সম্প্রতি সাঈদের হামলার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন মামলা করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ‘পলাতক’ সাঈদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। অর্থাৎ, পাসপোর্ট ব্যবহার করে বৈধ পথে দেশে ঢুকতে বা বের হতে গেলেই তার গ্রেফতার হওয়ার কথা। এর মধ্যেই দেশে ফিরে সব মামলায় জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন সাঈদ। অনুসন্ধানে জানা যায়, জানুয়ারির শেষ দিকে ওমান থেকে কলকাতা আসেন সাঈদ। এর পর ৩০ জানুয়ারি বেনাপোল সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে দেশে ঢুকে অতিগোপনে পর পর তিনটি মামলায় জামিন নেন। জামিন পেয়েই মতিঝিল ও আরামবাগ এলাকার হারানো আধিপত্য কবজা করার সব বন্দোবস্ত করেই মঙ্গলবার হকি ফেডারেশনের সভায় যোগ দেন তিনি। এরপরই সব মহলে হইচই পড়ে যায়। ঘনিষ্ঠজনরাও ক্যাসিনো সাঈদের এই ক্যারিশমা দেখে বিস্ময়ে হতবাক। এদিকে সাঈদ প্রকাশ্যে ফিরতেই এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেছে তার ক্যাডার বাহিনী। চাঁদাবাজি ও অবৈধ অর্থের উৎসের দখল ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ দেশে ফিরেছেন এই সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করায় হামলার শিকার হয়েছেন আহম্মেদ ইসলাম পুতুল নামে এক ব্যক্তি। আহম্মেদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, সাঈদের অনুসারীরাই এ হামলা করেছেন। গত রোববার রাজধানীর মতিঝিল এলাকার দিলকুশা ভবনের সামনে তার ওপর হামলা করা হয়। হামলাকারী ৯ জনের নাম উল্লেখ করে পর দিন মতিঝিল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী আহম্মেদ। মামলার এজাহারে আহম্মেদ ইসলাম অভিযোগ করেন, সাঈদের একটি সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার দেওয়ার কারণে আসামিরা তার ওপর হামলা চালান। এতে তিনিসহ তিনজন আহত হন। এ সময় হামলাকারী ব্যক্তিরা তিনজনের সঙ্গে থাকা ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। চলে যাওয়ার সময় হত্যার হুমকি দেন হামলাকারী ব্যক্তিরা। মামলায় মো. বশির (৪০), মোস্তফা মিয়া (৩৭), শফিকুল ইসলাম ইকবাল (৪৫), মো. মনজু (৩৮), মহসিন মির্জা (৩৫), মো. আলম (৩২), মো. জয় (৩৫), হানিফ ভূঁইয়া (৪৮) ও মো. মনিরের (৪৮) নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাদী জানান, মামলার পর বশির ও মোস্তফা মিয়া নামে দুই হামলাকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’ আহম্মেদ ইসলাম মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি। তিনি এখন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের সিসিইউতে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন। সাঈদের বাহিনী মারধর করেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রহমত আলী ও তার স্ত্রী মর্জিনাকে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হককেও লাঞ্ছিত করেছে তারা। সাঈদের সেকেন্ড ইন কমান্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত স্থানীয় নেতা জামালের নেতৃত্বে চাঁদাবাজ বাহিনী ফের গা ঝাড়া দিয়ে ওঠায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তিন বছর পর সেখান থেকে দেশে ঢুকে গ্রেফতার এড়িয়ে প্রকাশ্যে আসতে সক্ষম হওয়ায় তার ঘনিষ্ঠজনরাও মনে করছেন, সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেছেন সাঈদ। তাই তাকে আর জেলে যেতে হবে না। মতিঝিল ও আরামবাগে সরেজমিনে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সাঈদের চাঁদাবাজ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা হাসান উদ্দিন জামাল ওরফে ক্যাসিনো জামাল। মতিঝিল ও আরামবাগের সব ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে জামাল গ্রুপ। তার ক্যাডার বাহিনী মঙ্গলবার মতিঝিল এলাকায় মৎস্যজীবী লীগ নেতা পুতুলের ওপর হামলা চালায়। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাঈদের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা মোহামেডান ক্লাব থেকে সেনাকল্যাণ ভবন পর্যন্ত ফুটপাতে চাঁদাবাজি, ফুটপাতের দোকানগুলোয় দুধ-চা পাতা সরবরাহ, মাদক বাণিজ্যসহ অবৈধ আয়ের সব উৎস নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জানতে চাইলে মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘কবে, কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরেছি, কীভাবে জামিন পেয়েছি, তা একান্তাই আমার বিষয়। এ সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের জবাব আমি দেব না। তবে আমি সব মামলায় স্থায়ী জামিনে আছি। আর আমি এই প্রথম হকি ফেডারেশনের সভায় যোগ দিইনি। বিদেশে থাকা অবস্থায় করোনাকালীন অনলাইনে ফেডারেশনের অনেক সভায় অংশ নিয়েছি।’ মতিঝিল ও আরামবাগ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, তার বাহিনীর টেন্ডার ও চাঁদাবাজি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি মতিঝিল-আরামবাগ এলাকায় থাকি না। আমার কোনো বাহিনী নেই। তিন বছর বাইরে থাকলে আমার বাহিনী থাকে কীভাবে।’ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জামাল আপনার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে চাঁদাবাজ ও দখলদার বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জামাল নামে কাউকে আমি চিনি না।’



এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস