হঠাৎই নানা অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে পুলিশ। এরইমধ্যে তাদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন সচেতন নাগরিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের কর্মকর্তা (জনসংযোগ)গোলাম রাব্বীর ওপর হামলা ও ৫ লাখ টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে ফেলার অভিযোগকে ঘিরে পুলিশের বেপরোয়া হয়ে ওঠার কথা আবারও আলোচনায় এসেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে শাহবাগে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
পুলিশের নির্যাতনের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বী ও অভিযুক্ত এসআই টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে জনতার বিক্ষোভ মিছিলে উস্কানি ছাড়াই পুলিশের গুলিতে মারা যায় চার জন, ১১ মাসের শিশু কারাগারে, প্রতিবন্ধী অভিযুক্তকে হাতকড়া পরানো থেকে শুরু করে গত শনিবার ব্যাংক কর্মকর্তাকে ‘টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার কথা বলে মোহম্মদপুর থানার এসআই মাসুদের হুমকি। পুলিশের প্রায়ই এ ধরনের বেপরোয়া আচরণের পেছনে বিচার না হওয়াকেই দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ প্রধান। পাশাপাশি নৈতিকতাবিবর্জিত ব্যক্তিদের পুলিশ প্রশাসনে ঢুকে পড়াকেও দায়ী করছেন পুলিশের সর্বোচ্চ এ কর্মকর্তা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে পুলিশের গুলিতে চারজন মারা যান। ছেলের সামনে মাকে নির্যাতনের অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে জনতা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় বলে স্থানীয়দের দাবি৷
মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে অদম্য বাংলাদেশের চার তরুণ গ্রেফতার রিম্যাণ্ড:
গত অক্টোবরে রাজধানীর ঢাকার বনশ্রী থেকে ১০ শিশুকে ‘উদ্ধার’ করে পুলিশ৷ তখন চার তরুণকে গ্রেফতার করা হয়৷ তরুণরা দাবি করছেন, সেবার উদ্দেশ্যেই তারা অদম্য বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে ওই শিশুদের লালন-পালন ও পড়াশোনা করাচ্ছিল৷ শিশুদের পাচার করা বা ওদের কোনও ক্ষতি করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না৷ কিন্তু পুলিশ তরুণদের শুধু গ্রেফতারই করেনি, দ্রুত রিমান্ডেও নিয়েছে৷ রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। পুলিশের দাবি ছিল, সংগঠনটির নিবন্ধন নেই। তারা সেবামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে কোনও প্রমাণ নেই। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এলে মুক্তি পায় ওই চার তরুণ।
চট্টগ্রামে দুই পা হারানো এক আসামিকেও হাতকড়া পরানোয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে এ অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে ‘ক্লোজড’ করা হয়।
পুলিশ ফের বেপরোয়া কেন? এমন প্রশ্নে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। একটু রাত হলে ঢাকার চেকপোস্টগুলোতে নজর দেন, তাহলে এসব হয়রানির চিত্র অহরহ দেখতে পাবেন। এসআই মাসুদ যে ভুলটি করেছেন, সেটি হচ্ছে তিনি মধ্যবিত্তের এমন একজনকে ধরেছে যার কিনা এই সমাজের অনেক জায়গায় যোগাযোগ আছে। নইলে প্রতিটি চেকপোস্টে প্রতিদিন কত সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হয় তার দিকে সাংবাদিকদের নজর কখনোই পড়েনি। তিনি আরও বলেন, সারাদেশে উগ্রবাদীদের বোমা হামলা-চাপাতি হামলার কারণে পুলিশ চেকপোস্ট এবং পুলিশি তল্লাশি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে অসাধু পুলিশরা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। সরকার এবং পুলিশের উচ্চপর্যায়ে যেসব সৎ মানুষ আছেন, তাদের আন্তরিকতা ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না।
প্রবীর সিকদারকে আটক করে পুলিশসাংবাদিক, শহীদ পরিবারের সন্তান প্রবীর সিকদারকে হাতকড়া পরিয়ে তড়িঘড়ি রিমান্ডে নেওয়ার কারণেও সমালোচনার মুখে পড়েছিল পুলিশ। সন্ত্রাসী হামলার কারণে প্রবীর সিকদারেরও একটি পা এখন অকেজো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা শিক্ষক রাজীব মীর বলেন, সরকার যখন প্রশাসনের ওপর অতিনির্ভরশীল হয় তখন তারা শক্তিমত্তা প্রদর্শনে বেপরোয়া হয়। দেশে প্রকৃত আইনের শাসন থাকলে এমনটা হওয়ার কথা নয়।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, পুলিশের চাকরিতে নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু মানুষ ঢুকে পড়েছে যাদের যথাযথ প্রশিক্ষণও হয়নি। ফলে এধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। তিনি আরও বলেন, এসব বিষয়ে যথাযথ শাস্তির বিধান আছে সেটা হতে হবে। আবার যেহেতু ফৌজদারী প্রক্রিয়ায় বিচারে অনেক দেরি হয়ে থাকে, বিভাগীয় যেসব শাস্তির বিধান আছে সেটার সর্বোচ্চটা হওয়া জরুরি।
পুলিশের বেপরোয়া আচরণ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব যে মনোবল থাকার কথা সেটা ভেঙে দিয়ে রাজনীতিকরণটাই এ ধরনের আচরণের মূল কারণ। বিচার বা শাস্তি হয় না বলে এধরনের বেপরোয়া আচরণ হয় তা পুরোপুরি ঠিক নয়। অপরাধ করার পর পুলিশ হিসেবে আলাদা সুবিধা পাচ্ছেন কিনা সেটাও দেখার বিষয়। ক্লোজড কোনও বিচার হতে পারে না। কারণ তিনি কোনও অপেশাদার আচরণ করেছেন, বিষয়টা এমন নয়। তিনি আসলে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরাসরি অন্য অপরাধীদের মতো ট্রিটমেন্ট না পেয়ে কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে যান, যা পাওয়ার অধিকার তাদের নেই। এদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কোর্টে ক্রিমিনাল কেস হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’তে স্পষ্টভাবে নির্যাতন বলতে হুমকির কথাও বলা হয়েছে। এ মামলার জন্য থানাতেও যেতে হবে না। সরাসরি আদালত আমলে নিতে পারে। এমনকি এটার জন্য ভিকটিমকে যেতে হবে তাও নয়, প্রত্যক্ষদর্শীরাও এ মামলা করতে পারেন।-বাংলা ট্রিবিউ
পুলিশের নির্যাতনের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বী ও অভিযুক্ত এসআই টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে জনতার বিক্ষোভ মিছিলে উস্কানি ছাড়াই পুলিশের গুলিতে মারা যায় চার জন, ১১ মাসের শিশু কারাগারে, প্রতিবন্ধী অভিযুক্তকে হাতকড়া পরানো থেকে শুরু করে গত শনিবার ব্যাংক কর্মকর্তাকে ‘টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার কথা বলে মোহম্মদপুর থানার এসআই মাসুদের হুমকি। পুলিশের প্রায়ই এ ধরনের বেপরোয়া আচরণের পেছনে বিচার না হওয়াকেই দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ প্রধান। পাশাপাশি নৈতিকতাবিবর্জিত ব্যক্তিদের পুলিশ প্রশাসনে ঢুকে পড়াকেও দায়ী করছেন পুলিশের সর্বোচ্চ এ কর্মকর্তা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে পুলিশের গুলিতে চারজন মারা যান। ছেলের সামনে মাকে নির্যাতনের অভিযোগের ঘটনার প্রতিবাদে জনতা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায় বলে স্থানীয়দের দাবি৷
মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে অদম্য বাংলাদেশের চার তরুণ গ্রেফতার রিম্যাণ্ড:
গত অক্টোবরে রাজধানীর ঢাকার বনশ্রী থেকে ১০ শিশুকে ‘উদ্ধার’ করে পুলিশ৷ তখন চার তরুণকে গ্রেফতার করা হয়৷ তরুণরা দাবি করছেন, সেবার উদ্দেশ্যেই তারা অদম্য বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে ওই শিশুদের লালন-পালন ও পড়াশোনা করাচ্ছিল৷ শিশুদের পাচার করা বা ওদের কোনও ক্ষতি করার উদ্দেশ্য তাদের ছিল না৷ কিন্তু পুলিশ তরুণদের শুধু গ্রেফতারই করেনি, দ্রুত রিমান্ডেও নিয়েছে৷ রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। পুলিশের দাবি ছিল, সংগঠনটির নিবন্ধন নেই। তারা সেবামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে কোনও প্রমাণ নেই। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এলে মুক্তি পায় ওই চার তরুণ।
চট্টগ্রামে দুই পা হারানো এক আসামিকেও হাতকড়া পরানোয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে এ অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে ‘ক্লোজড’ করা হয়।
পুলিশ ফের বেপরোয়া কেন? এমন প্রশ্নে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। একটু রাত হলে ঢাকার চেকপোস্টগুলোতে নজর দেন, তাহলে এসব হয়রানির চিত্র অহরহ দেখতে পাবেন। এসআই মাসুদ যে ভুলটি করেছেন, সেটি হচ্ছে তিনি মধ্যবিত্তের এমন একজনকে ধরেছে যার কিনা এই সমাজের অনেক জায়গায় যোগাযোগ আছে। নইলে প্রতিটি চেকপোস্টে প্রতিদিন কত সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হয় তার দিকে সাংবাদিকদের নজর কখনোই পড়েনি। তিনি আরও বলেন, সারাদেশে উগ্রবাদীদের বোমা হামলা-চাপাতি হামলার কারণে পুলিশ চেকপোস্ট এবং পুলিশি তল্লাশি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে অসাধু পুলিশরা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। সরকার এবং পুলিশের উচ্চপর্যায়ে যেসব সৎ মানুষ আছেন, তাদের আন্তরিকতা ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না।
প্রবীর সিকদারকে আটক করে পুলিশসাংবাদিক, শহীদ পরিবারের সন্তান প্রবীর সিকদারকে হাতকড়া পরিয়ে তড়িঘড়ি রিমান্ডে নেওয়ার কারণেও সমালোচনার মুখে পড়েছিল পুলিশ। সন্ত্রাসী হামলার কারণে প্রবীর সিকদারেরও একটি পা এখন অকেজো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা শিক্ষক রাজীব মীর বলেন, সরকার যখন প্রশাসনের ওপর অতিনির্ভরশীল হয় তখন তারা শক্তিমত্তা প্রদর্শনে বেপরোয়া হয়। দেশে প্রকৃত আইনের শাসন থাকলে এমনটা হওয়ার কথা নয়।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, পুলিশের চাকরিতে নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু মানুষ ঢুকে পড়েছে যাদের যথাযথ প্রশিক্ষণও হয়নি। ফলে এধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। তিনি আরও বলেন, এসব বিষয়ে যথাযথ শাস্তির বিধান আছে সেটা হতে হবে। আবার যেহেতু ফৌজদারী প্রক্রিয়ায় বিচারে অনেক দেরি হয়ে থাকে, বিভাগীয় যেসব শাস্তির বিধান আছে সেটার সর্বোচ্চটা হওয়া জরুরি।
পুলিশের বেপরোয়া আচরণ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব যে মনোবল থাকার কথা সেটা ভেঙে দিয়ে রাজনীতিকরণটাই এ ধরনের আচরণের মূল কারণ। বিচার বা শাস্তি হয় না বলে এধরনের বেপরোয়া আচরণ হয় তা পুরোপুরি ঠিক নয়। অপরাধ করার পর পুলিশ হিসেবে আলাদা সুবিধা পাচ্ছেন কিনা সেটাও দেখার বিষয়। ক্লোজড কোনও বিচার হতে পারে না। কারণ তিনি কোনও অপেশাদার আচরণ করেছেন, বিষয়টা এমন নয়। তিনি আসলে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরাসরি অন্য অপরাধীদের মতো ট্রিটমেন্ট না পেয়ে কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে যান, যা পাওয়ার অধিকার তাদের নেই। এদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কোর্টে ক্রিমিনাল কেস হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’তে স্পষ্টভাবে নির্যাতন বলতে হুমকির কথাও বলা হয়েছে। এ মামলার জন্য থানাতেও যেতে হবে না। সরাসরি আদালত আমলে নিতে পারে। এমনকি এটার জন্য ভিকটিমকে যেতে হবে তাও নয়, প্রত্যক্ষদর্শীরাও এ মামলা করতে পারেন।-বাংলা ট্রিবিউ