বাংলাদেশ

আমিরাতের ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা : ট্রানজিট ভিসাও বন্ধ

সরকারি সূত্রগুলো অবশ্য একটি বিষয়কে বরাবরের মতো সামনে আনার চেষ্টা করে তা হলো-ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০’র ভেন্যু নির্বাচনে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বাংলাদেশের সমর্থন না দেয়া। সেই নির্বাচনের প্রথম পর্বে রাশিয়াকে সমর্থন করলেও চূড়ান্ত পর্বে আমিরাতের পক্ষেই ভোট দিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই নির্বাচনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুরোধ রক্ষার বিষয়টি ঢাকাকে বেকায়দায় ফেলেছিল বলে আবুধাবিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবার ট্রানজিট ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে। অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিরাও এ ভিসা পাচ্ছেন না। বেসরকারি পর্যায়ে করা আবেদন প্রতিনিয়ত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে পুরনো অনেক আবেদন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর নতুন আবেদনের প্রক্রিয়াও বন্ধ রয়েছে আবুধাবির নির্দেশে। ভিসা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ঢাকার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো আমিরাতের ট্রানজিট ভিসা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে কি কারণে হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলোর দাবি, ঢাকার সেই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি আবুধাবি। ফলে এখনও দেশটির সঙ্গে টানাপড়েন অব্যাহত রয়েছে। সেই ঘটনার জের ধরে ২০১২ সালের অক্টোবরে আমিরাত কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা হুমকির অভিযোগে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেয়। সেই সময়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়, কয়েক হাজার বাংলাদেশি জাল পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে দেশটিতে রয়েছেন। তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আটকের খবরও প্রকাশ করে আমিরাত কর্তৃপক্ষ। সেই সময়ে সফর বা ভ্রমণ ভিসা, রেসিডেন্ট ভিসাসহ অন্য ভিসায়ও সাময়িক নিষেধাজ্ঞার খবর বের হয়।

অবশ্য দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে তখন বলা হয়েছিল, এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমিরাত কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলছে। নিরাপত্তা হুমকি বিশেষত জাল ডকুমেন্ট নিয়ে দেশটিতে প্রবেশকারীদের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেলেই সাময়িক ওই নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাবে। সেই নিষেধাজ্ঞার পর ৩ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে টানাপড়েনের ইতি টানার কূটনৈতিক চেষ্টা হয়েছে বহু বার। পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি আমিরাত সফর করেছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে কাছাকাছি সময়ে প্রেসিডেন্ট অবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমিরাত সফর করেন। আমিরাতের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের আলোচনায় নিরাপত্তা হুমকি বিশেষ করে বৈশ্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে দুই দেশের এক সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা হয়। সেই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আরও নারী শ্রমিক নেয়া এবং ঢাকায় দেশটির একজন লেবার অ্যাটাসে নিয়োগের ঘোষণা দেয়া হলেও বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি অনুল্লিখিত থেকে যায়। আমিরাতে নতুন শ্রমিক ও পেশাজীবীদের কর্মসংস্থান ভিসা এবং ভ্রমণ ভিসায় অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার ওই সময়েও বাংলাদেশিদের জরুরি প্রয়োজনে শেষ ভরসা ছিল ট্রানজিট ভিসা। তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়া-আসার পথে বাংলাদেশিরা ৯৬ ঘণ্টা অর্থাৎ ৪ দিন দেশটিতে অবস্থান করে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কনফারেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারতেন। সরকারি কর্মকর্তারাও এ সুযোগ নিতেন। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি প্রায় স্বাভাবিক ছিল।

মূলত এমিরাটস এয়ারওয়েজের হলি ডে প্যাকেজের অধীনে সেই সময় পর্যন্ত এ ধরনের ভিসার প্রক্রিয়া হতো। ডিসেম্বরে ঢাকায় আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ কনস্যুলার অফিস চালু করে আমিরাত। ওই অফিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশটির কনস্যুলার বিভাগের প্রধানসহ দায়িত্বশীল কর্মর্কর্তারা বাংলাদেশিদের জন্য ওই সেন্টার থেকে সব সেবা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। ভিসা প্রদানে নিষেধাজ্ঞাও ক্রমান্বয়ে তুলে নেয়ার কথা জানান। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো।

বাংলাদেশিদের শেষ ভরসা হিসাবে এতদিন যে ট্রানজিট ভিসা চালু ছিল। গত মাসে তাও বন্ধ হয়ে গেল! বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নব প্রতিষ্ঠিত আমিরাত কনস্যুলেটে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নিয়ে দূতাবাসে লিখিতভাবে তথ্য চাওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে। সুত্রে-ওয়েসসাইড