বাংলাদেশ

নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

রাজধানীতে যত্রতত্র আবাসনের কারণে দখল হয়ে যাচ্ছে জলাশয়। অন্যদিকে নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের পানি ব্যবহারযোগ্য না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। এতে দিনদিন নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ বিআইপি সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, একটি বাসযোগ্য শহরের জন্য ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাভূমি থাকা দরকার। দুঃখের বিষয়, ঢাকা সিটিতে জলাভূমি রয়েছে ৩ শতাংশেরও কম। এ শহরের জলাভূমি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এটা বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনবে। জলাশয় ভরাটকারীদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
অন্যদিকে পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল ২৫ মিটারে, যা ২০০৫ সালে ৪৫ মিটার, ২০১০ সালে ৬০ মিটার এবং ২০২৪ সালে এসে ৮৬ মিটারে নেমেছে। প্রতি বছরই ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর দুই থেকে তিন মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিরেক্টর আনোয়ার জাহিদ সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে জানান, বর্তমানে পানির চাহিদা প্রচুর বাড়ছে, তবে পরিমাণ বাড়ছে না। ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ কমে আসছে। ঢাকায় যেখানে ৫০ বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার দুই থেকে তিন মিটারের মধ্যে ছিল, বর্তমানে সেখানে ৮৬ মিটারে নেমে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই অ্যালার্মিং। তবে কিছু কিছু এলাকায় বোরো মৌসুমে পানির লেয়ার নিচে নামলেও আবার বৃষ্টির সময়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকাতেই পানির লেয়ার শুধু নামছেই, কখনো আর ওপরে উঠছে না। ঢাকায় পানির লেয়ার সবচেয়ে বেশি নিচে। ঢাকায় বছরে এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরে সেন্টিমিটার হারে নামছে। তবে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, ব্যবহারযোগ্য পানি আছে কি না, কত পরিমাণ আছে—এসব বিষয় দেখার মতো কেউ নেই।
অন্যদিকে যেখানে একটি আদর্শ শহরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাভূমি থাকা আবশ্যক। সেখানে রাজধানী ঢাকায় জলাভূমি রয়েছে ৩ শতাংশেরও কম। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকায় একের পর এক জলাভূমি ভরাট করে বহুতল ভবন, বিপণিবিতান, সরকারি দপ্তর গড়ে উঠছে, যা এ নগরবাসীর জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনছে; গ্রীষ্মে দাবদাহ বর্ষায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে; দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীর। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৮৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত সময়কালে হারিয়ে গেছে ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল। জলাশয় ভরাটের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকা জলাশয় ও নিম্নভূমির পরিমাণ আয়তনের ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২৩ সালে ল্যান্ডসেট স্যাটেলাইট বিশ্লেষণী গবেষণা অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে শুধু ঢাকা থেকেই ৮৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি এ সময়কালে নির্মাণ এলাকা বা স্থাপনা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। অর্থাত্ সবুজ গাছপালা এবং জলাশয় ধ্বংস করে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।
রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) গবেষণায় উঠে এসেছে ঢাকার পুকুরের চিত্র। গবেষণার তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢাকায় মাত্র ২৪১টি পুকুর এবং ৮৬টি বিল ও লেক রয়েছে, যা মোট জলাভূমির ২২ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় ও প্রাতিষ্ঠানিক পুকুর রয়েছে ৪৩টি। পুকুর, বিল ও লেক মিলিয়ে ৩২৭টি জলাশয় রয়েছে। পুকুর, জলাশয়, লেক ভরাট করে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। কোথাও ভরাট করে বহুতল ভবন, আবার কোথাও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং মার্কেট নির্মাণও করা হয়েছে। দখলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল ২৬ শতাংশ, ইট-বালু ব্যবসায়ীদের দ্বারা ভরাট হয়েছে ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দ্বারা ভরাট হয়েছে ৩২ শতাংশ, ভূমিহীনদের দ্বারা ভরাট হয়েছে ৩২ শতাংশ। এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস