বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরিতে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে রিজার্ভের অর্থ লোপাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশের নাগরিক জড়িত।

শুক্রবার সিআইডির অরগানইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আব্দুল্লাহেল বাকী সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা বলেছেন।
 
সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের ঘটনা একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম। এ ঘটনায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের সংশ্লিষ্টতা বেড়িয়ে আসতে পারে। তবে আমরা এখনো তথ্য সংগ্রহ করছি। এ কথা সত্য যে, দেশি-বিদেশি চক্র মিলে এ কাজ করেছে। তবে সব কিছুই বিস্তারিত বলা যাবে আরো কিছু দিন পরে। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।
 
রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তে শুক্রবারও সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে সিআইডির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে যায়। বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন তারা। টাকা লেনদেনের নানা সিস্টেম কীভাবে পরিচালিত হয়, তা পরীক্ষা করেন গোয়েন্দারা। এ সময় কম্পিউটার থেকে তথ্য নিয়ে তা মালিবাগ কার্যালয়ে রাখা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, তিন দিন ব্যাংক থেকে তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, এ ঘটনার সঙ্গে ফিলিপাইনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের অপরাধী জড়িত। তারা এ দেশীয় চক্রের সঙ্গে সমন্বয় করে টাকা লুটের পরিকল্পনা করে। কোন কোন দেশের নাগরিক এর সঙ্গে জড়িত, তা ইতিমধ্যে জানা গেছে। আগে এ দেশে তদন্ত শেষ হোক। পরে প্রয়োজনে ওসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
ইলেকট্রনিক প্রমাণাদি খতিয়ে দেখে মনে হচ্ছে, এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি বিভাগের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত। ওই দুই বিভাগের প্রধানসহ আরো কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারে। এদের মধ্যে আইটি বিভাগের লোকজনের সংখ্যাই বেশি। কেননা হ্যাকাররা সরাসরি তাদের সহযোগিতা নিয়ে ওয়েবসাইটে ঢোকে এবং সুবিধাজনক সময় টাকাগুলো তুলে নেয়।

এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অবশ্যই জড়িত। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এ কাজ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে প্রাক্তন গভর্নর আতিউর রহমানের পদত্যাগের পটভূমি, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও অনিয়মের ব্যাপারেও খোলামেলা কথা বলেন তিনি।

 ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়েরারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা। এতে আরো জানানো হয়, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলংকার ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইনের ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নেওয়া ৮ কোটি ডলার ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ে পাচার করা হয়েছে। এ ঘটনা প্রায় এক মাস চাপা দিয়ে রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ঘটনা জানাজানি হলে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এ  মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে।