বাংলাদেশ

আমেরিকা বাংলাদেশে ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণ জানতে চায়

জঙ্গি দমনের নামে বিরোধী দল দমনে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগের মধ্যে সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। জানতে চেয়েছেন চলমান ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণ।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে তার সঙ্গে বৈঠকের পর আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রদূত চলমান অভিযানে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তিনি (রাষ্ট্রদূত) বলেছেন, এটা হিউজ নাম্বার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত এক বছরে সন্দেহভাজন জঙ্গি হামলায় লেখক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিদেশি, ধর্মীয় স্থান লক্ষ্য করে হামলার পর গত ৫ জুন চট্টগ্রামে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুনের পর 'সাঁড়াশি অভিযান' শুরু করেছে পুলিশ। সপ্তাহব্যাপী এই অভিযানের প্রথম তিন দিনে গ্রেপ্তার ৮ হাজার জনের মধ্যে অন্তত ২ হাজার ১০০ জন বিএনপির নেতা-কর্মী বলে দলটির দাবি।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগের মতো এ দিনও বলেন, পুলিশের এই অভিযানের কোনো 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই'। 'টার্গেট কিলিং', রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ বলে রাষ্ট্রদূতকেও জানান তিনি।
বার্নিকাটের তোলা 'হিউজ নাম্বারের' বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'আমি তাকে বলেছি, বাংলাদেশে ৬৩০টি থানা রয়েছে। প্রতি থানায় যদি প্রতিদিন ২০ জনও গ্রেপ্তার হয়, তাহলেও সংখ্যা অনেক হয়। এ ছাড়া অন্যান্য সময় সারাদেশে গড়ে বিভিন্ন অভিযোগে ২ হাজার আটক বা গ্রেপ্তার হয়। সুতরাং সেই বিবেচনায় সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তারের সংখ্যার সঙ্গে তেমন একটা তারতম্য নেই। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা পরোয়ানাভুক্ত আসামি এবং সন্দেহভাজন জঙ্গি বলে দাবি করেন তিনি।
চট্টগ্রামের এসপিপত্নী হত্যার তদন্তের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সন্দেহভাজন একজনকে ধরেছেন। পুলিশ মনে করছে সে সেই তিনজনের একজন (মোটরসাইকেলের তিনজন)।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ দিনের অভিযানে সারাদেশে মোট ১৬৬ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত চার দিনে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১১ হাজার ৭০৫ জন। এদের মধ্যে পরোয়ানাভুক্ত আসামির সঙ্গে অস্ত্র, মাদক ও অন্যান্য মামলার আসামিও রয়েছে।
বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কর্মী যদি কোনো মামলার আসামি হয়, তাহলে গ্রেপ্তার হতে পারে, তবে বিষয় তার জানা নেই।
বার্নিকাট 'হঠাৎ' মন্ত্রণালয়ে এসে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তথ্য চাইলেও তার আসার মূল কারণ অন্য বলে জানান তিনি। কারণ একটা ট্রেড প্রতিনিধি নিয়ে তিনি যাচ্ছেন। কয়েক দিন বাংলাদেশে থাকবেন না। এ সময় কিছু ইনফরমেশন শেয়ার করতে এসেছেন।
'আমরাও বলেছি, আইএস নেই'
বাংলাদেশে আইএসের সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা নেই দাবি করে এই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় সাম্প্রতিক হামলায় এই সংগঠনটির দায় স্বীকারের প্রসঙ্গও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনায় তোলেন আসাদুজ্জামান কামাল।
তিনি বলেন, ফ্লোরিডার ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্পিচ তারা পড়েছেন। তিনিও বলেছেন, সেখানে আইএসের কোনো সংগঠন নেই, যদিও আইএসের একটা খবর প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, সেখানে (আমেরিকা) আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। তারাও সেটাই বলেছেন যে, বাংলাদেশেও আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। এই ধরনের ওয়েবসাইট, এই ধরনের মিডিয়ার মাধ্যমে এ সমস্ত আইএস আমাদের দেশে আছে আত্মপ্রকাশ করা প্রচেষ্টা নিচ্ছে।
বার্নিকাটকে বিষয়টি বলেছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, তিনিও এ কথা স্বীকার করেছেন যে, বাংলাদেশে আইএসের কোনো সংগঠন নেই। তার সঙ্গে একমত হয়েছেন। দুজনই দুজনকে বলেছেন, এখন সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটাকে ঠেকাতে যুক্তভাবে কাজ করতে হবে।
সেই কাজের ধরনটি কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের মধ্যে। তিনি বলেন, 'আমাদের লোকদের প্রশিক্ষণের কথা বলেছি। সন্ত্রাসের বিষয়ে যত তথ্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) জানে, তা শেয়ার করতে বলেছি। তাহলে 'ইউনাইটেডলি' এ সমস্যা মোকাবেলা করতে পারব।' তিনি (রাষ্ট্রদূত) একমত হয়েছেন। আজও দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলে গেছেন যে একসঙ্গে গ্লোবাল হুমকি প্রতিরোধ করব।
ফ্লোরিডার সমকামী নৈশক্লাবে হত্যাকাণ্ডে দুঃখ প্রকাশ করে সমবেদনার কথাও বার্নিকাটকে জানিয়েছেন বলে আসাদুজ্জামান কামাল জানান।