বাংলাদেশ

পাটের দামে হতাশা: কৃষকদের চাষে অনীহা বাড়ছে

কুড়িগ্রামের উলিপুরে নানা প্রতিকূলতায় পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে পাট চাষিদের অভিযোগ। এছাড়াও সারাদেশে পাটকল গুলো বন্ধ হওয়ায় মৌসুমে বেশির ভাগ ক্রয়কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ফরিয়াদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন কৃষকরা। এসব কারণে এই অঞ্চলে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দিনের পর দিন। একসময় এই উপজেলার কৃষকরা একরের পর একর জমিতে পাট চাষাবাদ করতো।  উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমের উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে দেশি জাতের ১১৫ হেক্টর, তোষা জাতের ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, মেশতা জাতের ৩ হেক্টর ও কেনাফ জাতের ১৬২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দেশি জাতের ১৪৪ মে:টন, তোষা জাতের ৪ হাজার ৫০০ মে:টন, মেশতা জাতের ৪ মে:টন ও কেনাফ জাতের ২০৩ মে:টন মিলে মোট ৪ হাজার ৮৫১ মে:টন। এজন্য কৃষককে পাট-বীজ সারসহ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।  উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের কৃষক রব্বানী জানান, সরকার পলিথিনমুক্ত দেশ গড়তে চাইলে পাটচাষে কৃষকদের আধুনিক উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির সমন্বয় করে পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্ধ পাটকল গুলো চালু করে পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারলে আবারও এ অঞ্চলে সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরে আসবে। উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ৪০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছি, সব মিলে খরচ হতে পাওে ১০/১২ হাজার টাকা। আবহাওয়া ঠিক থাকলে ৮/১০ মন পাট উৎপাদন হতে পারে। পাটের বাজার ভাল হলে খরচ বাদেও ২০/২৫ হাজার টাকা লাভ হবে। একই ইউনিয়নের দড়িকিশোরপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ৩০ শতক জমিতে পাটচাষ করেছি। ফলন ভাল হলে ৫/৬ মন পাট হতে পারে। তবে বাজার মূল্য ভাল হলে পাট চাষ লাভজনক হবে।  এছাড়াও উপজেলার থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নের কৃষক সাইদুল ইসলাম, মাহতাব হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ অনেকেই বলেন, বাপ-দাদারা একসময় পাট চাষাবাদ করে সংসার চালাতো। উলিপুরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাট ক্রয় করে নিয়ে যেত। পাট বিক্রির টাকা দিয়ে তারা ইলিশ মাছ, নদীর বড় বড় বাইগড় মাছ কিনে আনতো। সেসব আজ স্মৃতি হয়ে আছে। আজ নানা কারণে মানুষ আর পাট চাষ করতে চায় না।   উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে ১ কেজি পাটবীজ ও ১২ কেজি সার প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে পাট চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস