বাংলাদেশ

বাংলাদেশ জঙ্গীবাদের স্থান হতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নিখোঁজ ছেলেদের সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, আমি অভিভাবকদের তাদের নিখোঁজ সন্তানদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। আমরা তাদের খুঁজে বের করতে ও প্রয়োজনে তাদের চিকিৎসা দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবো। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের স্থান হতে পারে না।’ খবর বাসস।

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।

তিনি যেসব ছাত্র দীর্ঘদিন অনুপস্থিত তাদের সম্পর্কেও পুলিশকে অবহিত করতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, নিখোঁজ ছেলেদের নাম পুলিশের কাছে প্রকাশের সময় অভিভাবকরা তাদের নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারেন।

১ জুলাই গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ধর্মের নামে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কলুষিত করছে। ইসলামের নামে মানুষ হত্যার মতো জঘন্যতম কর্মকাণ্ড আর কি হতে পারে। নামাজের সময় নামাজ না পড়ে মসজিদে নববীতে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে তারা ইসলামের নামে কোন ধরনের ইসলামিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আসলে তারা ইসলামের শত্রু।’

শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মান্ধরা শরিয়া আইন বাস্তবায়নের দাবি এবং মানুষের তৈরি আইনের বিরোধিতা করেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন- তাহলে কেনো তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে মানুষের তৈরি অস্ত্র, বোমা, প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
ইসলামকে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম কোনো নিরীহ মানুষকে হত্যা বরদাস্ত করে না- এমনকি অন্য ধর্মের অনুসারীদেরও। একমাত্র আল্লাহই চূড়ান্ত ন্যায়বিচারক এবং তিনি কখনো অন্য কারো হাতে দায়দায়িত্ব প্রদান করেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর প্রতি জঙ্গীদের কোনো বিশ্বাস নেই। তারা তাদের আল্লাহর চেয়েও শক্তিশালী মনে করে। কাজেই তারা কখনো বেহেশতে যাবে না। তারা দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে। অন্যদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানারও কোনো অধিকার তাদের নেই।

নিখোঁজদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রতিটি গ্রাম ও ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে এবং একসাথে কাজ করতে হবে।

শেখ হাসিনা কিছু স্থানীয় ও বিদেশি মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা করে বলেন, তারা গত কয়েক বছর কিছু যুবকের নিখোঁজের ব্যাপারে কেবলমাত্র সরকারকে দোষারোপ করেই আসছে। নিখোঁজদের সম্পর্কে সরকারকে সঠিক কোনো তথ্য না দিয়ে শুধুমাত্র সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
তারা যদি আমাদের সঠিক তথ্য দিতো আমরা তাদের উদ্ধারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অথচ একটি অশুভ শক্তি দেশের সকল সাফল্য ব্যর্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি দেশবাসীকে এ ধরনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে এবং তাঁর সরকারের প্রতি আস্থা রাখার আহবান জানান।

গণভবনের প্রবেশপথ সকাল সাড়ে ৯টায় খুলে দেওয়া হলে ঈদের নামাজের পর সর্বস্তরের জনগণ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে প্রবেশ করে। এ উপলক্ষে গণভবনের বিশাল আঙিনা বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়। শুরুতেই সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ভিক্ষুক ও দুস্থ জনগণ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও মশিউর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপি ও ফারুক খান এমপি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের দূতদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি