বাংলাদেশ

সেই ইরা এখন কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে

জঙ্গি সন্দেহ দূর হলেও বৈধ অভিভাবক না পাওয়ায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মাশুরগাঁও গ্রামের কলেজছাত্রী নুরুন্নাহার ইরাকে (১৮) কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেন আদালত।

বাবা-মা মেয়ে ইরাকে নিতে রাজি না থাকায় মুন্সীগঞ্জ জেলা আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাকি বিল্লাহর এ আদেশ দেন।

পরে বৃহস্পতিবার সকালে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইরাকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায় শ্রীনগর থানা পুলিশ।

বৃহপতিবার রাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাহিদুর রহমান।

তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বুধবার আদালত থেকে ইরাকে থানায় আনতে ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে গভীর রাত হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তাকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

ইরার বৈধ অভিভাবক তার বাবা-মা। তারা যতদিন পর্যন্ত না চাইবেন ততদিন পর্যন্ত কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে ইরাকে থাকতে হবে বলে ওসি জানান। আর বাবা-মা ইরাকে নিজ সন্তান হিসেবে স্বীকার করলেও আদালতের নির্দেশ ও পরে শ্রীনগর থানা-পুলিশের মাধ্যমে বৈধ অভিভাবক হয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যেতে হবে।

শ্রীনগর থানা পুলিশ ও ইরার পরিবার সূত্র মতে, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মাশুরগাঁও গ্রামের কলেজছাত্রী নুরুন্নাহার ইরা (১৮) প্রায় এক মাস নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় শ্রীনগর থানায় স্বেচ্ছায় এসে হাজির হয়।


নিখোঁজ ইরার পরিবার আশঙ্কা করেছিল, তাদের সন্তান হয়তো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। নিখোঁজ হওয়ার পর একদিন মোবাইল ফোনে কথা হলে ইরা জানিয়েছে, সে পবিত্র জায়গায় আছে। খোঁজাখুঁজি করে লাভ নেই।

মঙ্গলবার ইরার পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া একটি ছবির সূত্র ধরে মাঠে নামে পুলিশ। ছবিতে দাড়িওয়ালা এক যুবকের সঙ্গে ইরা ও তার আরো দুই বান্ধবী রয়েছে। ওই যুবকের সন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় তার নাম সিরাজুল ইসলাম নয়ন (৩৫)। সে পাবনার বর্জনাথপুর গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে।

সিরাজুল ইসলাম নয়ন বর্তমানে ঢাকার গুলশান-২ এর ৭২ নম্বর সড়কের ১৫ নং বাড়িতে অবস্থিত আহামেদ গ্রুপের কর্মকর্তা। ২০১৫ সালে সমষপুর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুলে খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ওই বছর এএসসি পরীক্ষার পূর্বে তিনি ইরাসহ আরো কয়েকজনের গাইড হিসেবে তিন মাস নিযুক্ত ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে পুলিশ সিরাজুল ইসলামকে শ্রীনগর থানায় হাজির করার জন্য আহমেদ গ্রুপের কর্ণধারকে অনুরোধ করলে সিরাজুল ইসলামকে ওই প্রতিষ্ঠানের একটি গাড়িতে করে তার কয়েকজন সহকর্মীসহ গুলশান থেকে শ্রীনগর পাঠানো হয়। সিরাজুল ইসলাম থানায় পৌঁছানোর আধ ঘণ্টা পূর্বে ইরা স্বেচ্ছায় থানায় এসে হাজির হয় এবং তার জন্য অন্য কাউকে হয়রানি না করতে বলে।

শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাহিদুর রহমান জানান, তাদের আলাদাভাবে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইরা প্রথমে বলে সিলেটে মাজারে ছিল। তার কথার্বাতা অসংলগ্ন হওয়ায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে  এক পর্যায়ে স্বীকার করে, সিরাজুল ইসলাম নয়ন ও ইরা চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে।

তারা ঢাকার গুলশান থানার বাড্ডা এলাকায় বসবাস করছিল। রাতে গুলশান থানার পুলিশ তারা যে বাসায় ‘নিখোঁজ’ অবস্থায় বসবাস করছিল, তা নিশ্চিত করে। পুলিশ নিশ্চিত হয়, তারা আসলে প্রেম করে বিয়ে করে। হয়তো অভিভাবকরা মানবে না বলেই গা-ঢাকা দেয়।